Gallery

ইসলামে আরবী ভাষা, এর গুরুত্ব ও উম্মতের পূণর্জাগরণে এর ভূমিকা।


ইসলামে আরবী ভাষা, এর গুরুত্ব ও উম্মতের
পুনর্জাগরণে এর ভূমিকা !ভাষা তাঁর আরও এক নিদর্শন
হচ্ছে আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা
ও বর্ণের বৈচিত্র্য। নিশ্চয় এতে জ্ঞানীদের
জন্যে নিদর্শনাবলি রয়েছে। [রূম: ২২]ভাষা একে
অপরের সাথে চিন্তা, ভাবনা ও ধারনার
যোগাযোগের মাধ্যম। এর মাধ্যমে চিন্তা-ভাবনা
একজন থেকে অন্য জনে প্রবাহিতহয়, এক স্থান
হতে অন্য স্থানে প্রবাহিত হয়। লিখিত হোক
বাঅলিখিত, এটাই মানুষের জন্য চিন্তা-চেতনা
যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে
আসছে প্রাচীনকাল হতে। ভাষা অবশ্যই আমাদের
চিন্তা প্রক্রিয়ার অংশ নয় বরং এর ফলাফল। এ বিষয়টি
Rational ওEmpirical উভয় চিন্তার পদ্ধতি দ্বারাই প্রমাণ
করা সম্ভব। এটা আমরা বুঝতে পারি যখন আমরা দেখি
বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে একইচিন্তা-চেতনা
একই ভাবে বিরাজ করে কিন্তু তা প্রকাশ করার
সময়বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশ করে। উদাহরনসরূপ, একজন
ইংরেজ, একজনচাইনিজ, একজন জার্মান কিংবা একজন
বাঙ্গালী ভিন্ন ভাষাভাষীহওয়া সত্ত্বেও
কমিউনিজমকে তাদের আদর্শ হিসেবে নিতে
পারে।ভিন্ন ভাষা তাদের আদর্শিক চিন্তার মধ্যে
কোনো পার্থক্য ঘটায় না।ভাষা অনেকটা মানুষের
মতোই। এর উদ্ভব হয়, বিবর্তন হয়, উন্নতি
হয়,দূর্বলতা দেখা দেয় এবং কখনো কখনো ভাষার
মৃত্যু তথা বিলুপ্তিওদেখা দিতে পারে। ভাষার উৎপত্তি
মূলত কথ্য রুপে শুরু হয়, পরবর্তীতেতা লিখিত
রুপে আসে এবং কোনো প্রতিষ্ঠিত ভাষার
পন্ডিতগণসাধারণত তখনই ভাষার নিয়মনীতি তথা ব্যকরণ
রচনা করেন যখন তারাভাষার বিকৃতির আশঙ্কা করেন।
আরবী ভাষাঅন্য সকল ভাষার মতোই আরবীও
পৃথিবীর একটি প্রচলিত ভাষা। এটিএকটি সেমিটিক ভাষা
এবং পৃথিবীর বৃহত্তম সেমিটিক ভাষা।পৃথিবীর প্রায়
২৮০ মিলিয়ন মানুষের জন্য এটি তাদের প্রধান ভাষা।
মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার প্রায় ২২টি দেশের
রাষ্ট্রভাষা এটি।ধারণা করা হয়ে থাকে যে প্রায় তিন
হাজার বছর পূর্বে এ ভাষাঅস্তিত্বে আসে যদিও এর
লিখন প্রক্রিয়ার শুরু আরো অনেক পরে।কেউ
কেউ এ ভাষার উৎপত্তি আরো আগে মনে
করেন। কোনো কোনোআলেম এটাও মনে
করেন যে এ ভাষাটি আল্লাহর পক্ষ হতে আদম
(আ)নিয়ে এসেছিলেন, তবে এ মতটি বিতর্কিত।
ইসলামের সাথে আরবী ভাষার সম্পর্কযদি আমি
একে অনারব ভাষার কুরআন করতাম, তবে অবশ্যই
তারা বলত,এর আয়াতসমূহ পরিষ্কার ভাষায় বিবৃত হয়নি
কেন ? কি আশ্চর্য যে,কিতাব অনারব ভাষার আর রাসূল
আরবীভাষী। বলুন, এটা বিশ্বাসীদেরজন্য
হেদায়েত ও রোগের প্রতিকার। যারা ঈমান আনয়ন
করে না,তাদের কানে আছে ছিপি, আর কুরআন
তাদের জন্যে অন্ধত্ব।তাদেরকে যেন
দূরবর্তী স্থান থেকে আহ্বান করা হয়। [হা মীম
আস-সাজদাহ: ৪৪]আরবী ভাষার সাথে ইসলামের
সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড় ও অবিচ্ছিন্ন।পবিত্র কুরআন
মুহাম্মদ (সা)-এর উপর নাযিল হয়েছে আরবী ভাষায়।
এবংপুরো কুরআনই আরবী ভাষায় নাযিলকৃত। এটি
সম্পূর্ন আরবী এবং এতেকোনো বিদেশী
শব্দ নেই। ইমাম শাফেঈ’ তার আর-রিসালাহ
গ্রন্থেবলেন: “কুরআন এই দিক নির্দেশনা দেয়
যে আল্লাহর কিতাবের কোনোঅংশই আরবী
ভাষার বাইরে নয়…।” আল্লাহর কিতাবের ১১টি
আয়াতহতে এ নির্দেশনা পাওয়া যায় যে কুরআন
সম্পূর্ন আরবী ভাষায়নাযিলকৃত। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া
তা’আলা বলেন,”বিশ্বস্ত রূহ একে নিয়ে অবতরন
করেছে। আপনার হৃদয়ে, যাতে আপনিভীতি
প্রদর্শনকারীদের অন্তর্ভূক্ত হন। সুস্পষ্ট
আরবী ভাষায়।” [সূরাশু’আরা: ১৯৩-১৯৫]”এমনিভাবে
আমি এ কুরআনকে আরবী নির্দেশরুপে
নাযিলকরেছি।” [সূরা রাদ: ৩৭]”এমনিভাবে আমি আপনার
প্রতি আরবী ভাষায় কুরআন নাযিলকরেছি।” [সূরা শুরা:
৭]”আরবী ভাষায় এ কুরআন বক্রতামুক্ত, যাতে তারা
সাবধান হয়েচলে।” [সূরা যুমার: ২৮]”এবং এ কুরআন
পরিষ্কার আরবী ভাষায়।” [সূরা নাহল: ১০৩]ইসলামী
আদর্শের সাথে আরবী ভাষার সম্পর্ক ও এর
গুরুত্বকে তিনটিঅংশে ভাগ করা যায়।মৌলিক বিশ্বাস :
এক্ষেত্রে ভাষা তেমন প্রাসঙ্গিক নয়।
কোনোব্যক্তি বুদ্ধিবৃত্তিক পদ্ধতিতে ঈমান এনে
আল্লাহ, তার ফেরেশতা,রাসূল, ওহী, বিচার দিবস ও
কদর-এর উপর বিশ্বাস স্থাপন করে মুসলিমহতে
পারে। এক্ষেত্রে ভাষার জ্ঞান থাকা অনিবার্য নয়।
পালন : ইসলাম পালন করার জন্য কিছু পরিমান আরবী
জানা অবশ্যইদরকার। উদাহরণসরূপ, নামায আদায় ইত্যাদি।
ইসলামী জ্ঞান ও আইনবিদ্যা : ইসলামী জ্ঞানের
বিভিন্ন শাখাকেপ্রকৃতভাবে জানতে হলে ও
ইসলামী শরীয়াহর আইনসমূহ অধ্যয়ন করতেহলে
আরবী ভাষার জ্ঞান অত্যাবশ্যকীয়। উদাহরণসরূপ,
হকুম শরঈ’, উসূলআল ফিকহ ইত্যাদি। সকল যুগেই
মুসলিম পন্ডিতগণ ইজতিহাদের জন্যআবশ্যক
আরবীভাষা, এর নাহু-সরফের জ্ঞান, শব্দভান্ডার,
ব্যকরণ,অলঙ্কারশাস্ত্র ইত্যাদি সম্পর্কে যথেষ্ট
পরিমানে জ্ঞান রাখতেন।শাইখ তাকী (রহ) বলেন,
“ঈমান ও আহকাম বোঝার বিষয়টি ইসলামে দুটিভিন্ন
বিষয়। ইসলামে ঈমান প্রতিষ্ঠিত হয় বুদ্ধিবৃত্তি বা
আকলী দলীলদ্বারা। যাতে করে কোনো
সন্দেহের অবকাশ না থাকে। কিন্তু আহকামবোঝার
বিষয়টি শুধুমাত্র বুদ্ধিবৃত্তির উপর নির্ভর করে না, বরং
আরবীভাষা জানার উপর, হুকুম বের করে আনার
যোগ্যতা, দূর্বল হাদীস হতেসহীহ হাদীস পৃথক
করার উপরও নির্ভর করে।” [১]যেহেতু ইসলামী
শরী’য়াহ জীবনের সকল ক্ষেত্রে তথা
ব্যক্তিগত,সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক
ক্ষেত্রেবাস্তবায়িত হয় এবং যেহেতু কুরআন ও
সুন্নাহ ইসলামী সভ্যতার ভিত্তিসেহেতু ইসলাম নিয়ে
যেকোনো গভীর অধ্যয়ন-এর সাথে আরবী
ভাষারঅধ্যয়ন থাকা অত্যন্ত আবশ্যক। এখানে আরবী
ভাষা বলতে প্রাচীন(Classical) আরবী ভাষা ও তার
কাঠামোকে বোঝানো হচ্ছে। কথ্য ওআঞ্চলিক
ভাষার চর্চা এক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক। এছাড়াও
ইসলামীসভ্যতাকে শক্তিশালীভাবে টিকিয়ে রাখার
জন্য আরবী ভাষাকেবিকৃতির হাত রক্ষা করাও
আবশ্যক।আমাদের সালাফ তথা পূর্ববর্তীগণ এ
বিষয়গুলো খুব ভালোভাবেইবুঝতেন। বিশেষ
করে খোলাফায়ে রাশিদীনের আমলেও এ
বিষয়টিগুরুত্ব পেয়েছে।উমর (রা) আবু মূসা
আশ’আরী (রা)-কে চিঠিতে লিখেছিলেন,
“সুন্নাহরজ্ঞান অর্জন ও আরবীর জ্ঞান অর্জন কর
এবং কুরআন আরবীতে অধ্যয়নকর কারণ এটা
আরবী।” [২]আরেকটি বর্ণনায় উমর (রা) বলেন,
“আরবী শেখ কারণ এটি তোমাদেরদ্বীনের
অংশ”। তিনি আরো বলেছেন, “কারো কুরআন পড়া
উচিত নয়ভাষার জ্ঞান ছাড়া”।উবাই বিন কা’ব (রা)
বলেছেন, “আরবী ভাষা শেখ ঠিক
যেভাবেতোমরা কুরআন হিফজ করা শেখ”।
[৩]আলী (রা) যখন কুফায় তার রাজধানী স্থানান্তরিত
করেন তখনসেখানে তিনি নতুন একধরনের
আরবীর চর্চা দেখতে পান। এতে তিনিবেশ
চিন্তিত হন এবং তিনি তৎকালীন আরবী পন্ডিত আবুল
আসওয়াদআদ-দুয়ালীর সাথে বৈঠক করেন এবং
তাকে আরবী ভাষার মৌলিকনীতিসমূহ বিশ্লেষন
করেন। ইবনু কাছীর (রহ) তার আল-বিদায়া ওয়াননিহায়া
গ্রন্থে লিখেছেন,”আবুল আসওয়াদ হচ্ছে তিনি
যাকে নাহুজ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত করাহয়। এবং বলা
হয়, যারা এ বিষয়ে কথা বলেছেন তাদের মধ্যে
তিনিপ্রথমদিককার একজন। তিনি তা আমীর-উল-
মু’মিনীন আলী ইবনে আবীতালিব (রা) হতে
গ্রহণ করেছেন।” [৪]ইমাম শাফেঈ’ আরবী ভাষার
জ্ঞান থাকাকে ফরজে আইন মনে করতেনএবং তিনি
তার আরব ছাত্রদের আরবী ভাষা ভালোভাবে রপ্ত
করারতাগিদ দিতেন। তিনি তার ছাত্রদের বলতেন,
“নিশ্চয়ই আমি জ্ঞানঅন্বেষনকারীদের ব্যপারে
এই ভয় পাই যে তারা আরবী ভাষার নাহু(ব্যকরণ)
সঠিকভাবে জানবে না এবং এভাবে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর
সেইহাদীসের (বাস্তবতার) মধ্যে প্রবেশ
করবে, ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবেআমার উপর
মিথ্যারোপ করল, সে যেন (জাহান্নামের)
আগুনের মধ্যেতার আসন খুজে নেয়'”। ইমাম ইবনু
তাইমিয়্যাহও ইমাম শাফেঈ’র মতোঅনেকটা একই মত
পোষন করতেন। তার মতে যেহেতু একজন
মুসলিমেরজন্য কুরআন সুন্নাহ বোঝাটা আবশ্যক
সেহেতু “অত্যবশ্যকীয় কিছু পালনকরার জন্য যা
প্রয়োজন তাও অত্যাবশ্যক”-এই নীতি অনুযায়ী
আরবীভাষা শেখাও আবশ্যক। তিনি আরো বলতেন,
“আরবী ভাষা ইসলাম ও এরঅনুসারীদের প্রতীক
এবং যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি দ্বারা
জাতিসমূহনিজেদের পৃথক করে ভাষা তাদের মধ্যে
অন্যতম।” [৫]মু’জিযা২৮ টি হরফ। এ কটি হরফ ও এর
দ্বারা গঠিত শব্দ দিয়েই পৃথিবীতেপবিত্র কুরআন
নাযিল হয়। আমরা জানি, কুরআন একটি মু’জিযা যামানবজাতির
জন্য একটি চ্যালেঞ্জসরূপ। এবং অন্যান্য নবী-
রাসূলদেরমু’জিযার সাথে কুরআনের পার্থক্য হচ্ছে,
অন্যান্য নবী-রাসূলদের সময়শেষ হলে তাদের
মু’জিযারও সমাপ্তি ঘটত, কিন্তু কুরআন একটি
চলমানমু’জিযা যার সমাপ্তি হয়নি। যদিও কুরআনের মু’জিযা
হওয়াটাআমাদের কাছে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে প্রমাণিত।
কিন্তু এ বিষয়টি শুধুজ্ঞানের মধ্যে সীমাবদ্ধ,
অভিজ্ঞতা দ্বারা নয় (But this is onlythrough
knowledge, not through experience) । একমাত্র
আরবী ভাষাশেখা ছাড়া এ অভিজ্ঞতা বা অনুভূতি অর্জন
করা সম্ভব নয়।ঐতিহাসিকভাবে এ ভাষার অবহেলা ও এর
পরিনামমুসলিমদের পতনের পেছনে যেভাবে
কাফেরদের চক্রান্ত ছিল, ঠিকএকইভাবে
মুসলিমদের মধ্যেও বেশ কিছু দূর্বলতা দেখা
দিয়েছিল।এবং এসব কারণসমূহের মধ্যে অন্যতম এক
কারণ হলো আরবী ভাষারপ্রতি অবহেলা। যদিও
মুসলিমরা এ ভাষার গুরুত্ব বুঝতে ব্যর্থ
হয়েছিল,কাফেররা ঠিকই এ ভাষার গুরুত্ব বুঝতে
পেরেছিল। এ জন্যই তারা আরব-তুর্কিদের মধ্যে
বিভেদ লাগানোসহ আরো অনেক পরিকল্পনা
হাতেনিয়েছিল। শাইখ তাকী (রহ) তার বই “ইসলামী
রাষ্ট্র”-তে বলেন:”এরপর ইসলামের শত্রুরা
আরবী ভাষার উপর আক্রমণ চালায়। কারণ,
এইভাষাতেই ইসলাম এবং এর হুকুম আহকামকে প্রচার
করা হয়। তাই, তারাইসলামের সাথে আরবী ভাষার
সম্পর্ককে ছিন্ন করতে ব্যাপক তৎপরতাচালায়। কিন্তু,
প্রথমদিকে তারা সফলতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়।
কারণ,প্রথমদিকে মুসলিমরা যে দেশই জয় করেছে
সেখানেই তারা কোরআন,সুন্নাহ ও আরবী
ভাষাকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছে এবং জনগণকে তারা
এতিনটি জিনিসই শিক্ষা দিয়েছে। বিজিত
জনগোষ্ঠীর মানুষেরাইসলাম গ্রহণ করেছে এবং
আরবী ভাষায় সাবলীলভাবে কথা বলেছে।কিছু
কিছু অনারব এ ব্যাপারে এতো পারদর্শীতা অর্জন
করেছে যে,তারা ইসলামের প্রখ্যাত মুজতাহিদও
হয়েছে। যেমন, ইমাম আবুহানিফা। কেউ কেউ বা
হয়েছে অত্যন্ত উচুঁ মাপের কবি, যেমন, বাশারইবন
বুরদ। আবার, কেউ বা হয়েছে প্রখ্যাত লেখক,
যেমন, ইবন আল-মুকাফফা’। এভাবেই, মুসলিমরা
(প্রথমদিকে) আরবী ভাষাকে অত্যন্তগুরুত্বের
সাথে গ্রহণ করেছিল। ইমাম শাফেঈ’ কুরআনের
কোন ধরনেরঅনুবাদ বা অন্য কোন ভাষায় সালাত
আদায় করাকে অগ্রহণযোগ্যবলেছেন। আবার, যারা
কুরআন অনুবাদের অনুমতি দিয়েছেন, যেমন,ইমাম
আবু হানিফা, তারা অনুবাদকে কুরআন হিসাবে স্বীকৃতি
দিতেওঅস্বীকার করেছেন। সুতরাং, দেখা যাচ্ছে
আরবী ভাষা সবসময়মুসলিমদের মনোযোগ ও
গুরুত্বের কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে বিবেচিতহয়েছে।
বস্তুতঃ এ ভাষা হচ্ছে ইসলামের মৌলিক অংশ
এবংইজতিহাদের জন্য এক অপরিহার্য বিষয়। আরবী
ভাষা ব্যতীত উৎসথেকে ইসলামকে বোঝা
অসম্ভব এবং এ ভাষা ব্যতীত শরীয়াহ্
থেকেনির্ভুল ভাবে হুকুম-আহকাম বের করাও
সম্ভব নয়। কিন্তু, হিজরী ষষ্ঠশতাব্দীর শেষ
দিকে, আরবী ভাষার গুরুত্ব ধীরে ধীরে হৃাস
পেতেথাকে। কারণ, এ সময় এমন সব শাসকেরা
ক্ষমতায় আসে যারা আরবীভাষার প্রকৃত গুরুত্ব ও
তাৎপর্য বুঝতে ব্যর্থ হয় এবং এ বিষয়টিকে
তারাক্রমাগত অবহেলা করতে থাকে। ফলশ্রুতিতে,
রাষ্ট্রের নাগরিকদেরআরবী ভাষার উপর দখল
কমে যায় এবং ইজতিহাদের প্রক্রিয়া স্থবিরহয়ে যায়।
এখানে মনে রাখা দরকার যে, যেকোনো
বিষয়ে শরীয়াহ্রহুকুম খুঁজে বের করতে হলে,
যতগুলো উপাদান অপরিহার্য তার মধ্যেআরবী ভাষা
একটি। বস্তুতঃ ইতিহাসের এই পর্যায়ে, আরবী
ভাষাইসলাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে,
রাষ্ট্রের শরীয়াহ্ সম্পর্কিতধ্যানধারণাও অস্পষ্ট
হয়ে যায় এবং সেইসাথে, অস্পষ্ট হয়ে যায়শরীয়াহ্
আইনকানুন বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া। ইসলামী
রাষ্ট্রকে দূর্বলও রুগ্ন করে ফেলতে এ বিষয়টি
ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। ধীরে ধীরেরাষ্ট্রের
পক্ষে নতুন নতুন সমস্যা সমূহকে বোঝা এবং সে
সমস্যাগুলোরমুকাবিলা করা কঠিন হতে থাকে। একসময়
রাষ্ট্র উদ্ভুত সমস্যাসমাধানে ব্যর্থ হয় কিংবা সমাধানের
লক্ষ্যে ভ্রান্ত পদ্ধতির আশ্রয়নেয়। এভাবে,
সময়ের সাথে সাথে রাষ্ট্রের সমস্যা ঘনীভূত
হতে থাকেএবং ইসলামী রাষ্ট্র একসময় অন্তহীন
সমস্যার সাগরে হাবুডুবু খেতেথাকে।” [৬]সুতরাং এ
থেকে বোঝা যায় এ ভাষা অবহেলার পরিনাম
কতটামারাত্মক ছিল।এ ভাষার শক্তি ও সৌন্দর্যআরবী
একটি অত্যন্ত চমৎকার ভাষা। এর কাঠামো অত্যন্ত দৃঢ়,
সংগঠিতও কোনো কোনো ক্ষেত্রে খুবই
জটিল। অনেক ভাষাবিদই এ চিন্তাকরে হতবাক হন যে
কিভাবে এ ভাষা প্রাকৃতিকভাবে উদ্ভব হলো।নিম্নে
আরবী ভাষার (Grammatical Structure) সম্পর্কে
কিছুটা ধারণাদেয়া হল,পদ বা শব্দের শ্রেণীবিভাগ
( ﺍﺟﺰﺍﺀ ﺍﻟﻜﻼﻡ ): শব্দকে তিনভাগে ভাগ করাহয়
আরবীতে১. বিশেষ্য/Noun ( ﺍﺳﻢ ) ২. ক্রিয়া/Verb
( ﻓﻌﻞ ) ৩. অব্যয়/Particle ( ﺣﺮﻑ )লিঙ্গ ( ﺍﻟﺠﻨﺲ ):
আরবী ভাষায় লিঙ্গ মূলত দু’টি, পুংলিঙ্গ ( ﺍﻟﻤﺬﻛﺮ)
ওস্ত্রীলিঙ্গ ( ﺍﻟﻤﺌﻨﺚ )। উদাহরনসরূপ, ( ﺯﻳﺪ، ﺧﺎﻟﺪ،
ﺍﺣﻤﺪ ) এগুলো পুংলিঙ্গবাচকশব্দ আবার ( ﻓﺎﻃﻤﺔ، ﺩﺍﻛﺎ،
ﺭﻳﺢ، ﻧﺎﺭ، ﻳﺪ ) এগুলো স্ত্রীলিঙ্গবাচক শব্দ।
এছাড়াও এ ভাষায় কিছু সংখ্যক উভয় লিঙ্গের শব্দও
রয়েছে যাদের( ﺍﻟﺠﻨﺲ ﺍﻟﻤﺸﺘﺮﻙ ) বলা হয়। এ ভাষায়
কোনো ক্লীবলিঙ্গ নেই।বচন ( ﺍﻟﻌﺪﺩ ): আরবী
ভাষায় বচন মূলত তিনটি।১. একবচন ( ﻭﺍﺣﺪ ) ২. দ্বিবচন
( ﺗﺜﻨﻴﺔ) ৩. বহুবচন ( ﺟﻤﻊ )এছাড়াও আরবী ভাষায়
বহুবচনের বহুবচন-এর প্রচলন রয়েছে, যেমন-
( ﻓﺘﺢ،ﻓﺘﻮﺡ، ﻓﺘﻮﺣﺎﺕ )। এ বৈশিষ্ট সমূহের ফিকহী
গুরুত্ব অপরিসীম। এর ফলেফিকহ-এর কোনো
মাসআলাকে অত্যন্ত নির্দিষ্ট করে বর্ণনা করা যায়।
ক্রিয়া ( ﺍﻟﻔﻌﻞ): নিম্নোক্তভাবে আরবী ক্রিয়াকে
ভাগ করা হয়,১. অতীতকাল ( ﺍﻟﻔِﻌْﻞُ ﺍﻟْﻤﺎﺿِﻲ ) ২.
বর্তমান/ভবিষ্যৎ কাল ( ﺍﻟﻔِﻌْﻞُ ﺍﻟْﻤُﻀﺎﺭِﻱ )৩.
নির্দেশবাচক ( ﻓِﻌْﻞُ ﺍﻷَﻣْﺮ )এ ভাষায় বর্তমান ও
ভবিষ্যৎকালের জন্য একটিই Structure রয়েছে।
যদিও কখনো কখনো ভবিষ্যৎকে আলাদা করে
বোঝানোর জন্য ( ﻓﻌﻞ )-এরআগে একটি ( ﺱ )
যুক্ত করা হয়, যেমন, ( ﺑَﺪَﺃَ ﺍﻹِﺳْﻼَﻡُ ﻏَﺮِﻳﺒًﺎ ﻭَﺱَﻳَﻌُﻮﺩُ
ﻛَﻤَﺎ ﺑَﺪَﺃَﻏَﺮِﻳﺒًﺎ )। [৭] এছাড়াও বচন, লিঙ্গ, কাল ইত্যাদি
ভেদে ক্রিয়ার শাব্দিকরূপান্তর ঘটে যাকে ( ﺻَﺮْﻑُ
ﺍﻟﻔِﻌْﻞ ) বলা হয়। এ বৈশিষ্ট্যের কারণেওফিকহ-এর
কোনো মাসআলাকে অত্যন্ত নির্দিষ্ট করে
বর্ণনা করা যায়।ই’রাব ( ﺍﻹﻋﺮَﺏ ): সাধারণত বাক্যে প্রতি
( ﻣُﻌْﺮَﺏ) শব্দের শেষ হরফের স্বর-চিহ্ন হলো
ই’রাব। এ স্বর-চিহ্ন পরিবর্তনশীল, অবস্থার
পরিবর্তনভেদেএকটি শব্দের শেষ হরফ যবর
( ﻓَﺘْﺤَﺔ ), যের ( ﻛَﺴْﺮَﺓ ), পেশ ( ﺿَﻤَّﺔ ) বা সুকূন
গ্রহণকরতে পারে। যেমন, সাধারণত শব্দটি কর্তা
( ﻓﺎﻋِﻞ ) হলে পেশ গ্রহণ করে,কর্ম ( ﻣَﻔْﻌُﻮﻝ )
হলে যবর গ্রহণ করে ইত্যাদি। পৃথিবীতে এ
ধরনের স্বর-চিহ্নবর্তমানে আরবী ছাড়া হাবশী ও
জার্মান ভাষায় কিছুটা রয়েছে। স্বর-চিহ্ন প্রাচীন
সভ্যতার একটি নিদর্শন। [৮] উদাহরণসরূপ, ( ﺟَﺎﺀَ ﺯَﻳْﺪٌ،
ﺿَﺮَﺏَﺯﻳﺪً، ﻗَﻠَﻢُ ﺯَﻳْﺪٍ )আরবী ভাষা প্রধানত একটি
মূলশব্দ তাড়িত ভাষা (root-drivenlanguage)। এ ভাষায়
বিভিন্ন Pattern ( ﻭﺯﻥ )-এ অসংখ্য মূল শব্দ ( ﻣَﺼْﺪَﺭ
বা ﻓِﻌْﻞ ) রয়েছে। উদাহরণসরূপ, ( ﻓَﻌَﻞَ، ﺳَﻤِﻊَ، ﻧَﺼْﺮٌ،
ﺫَﻛَّﺮَ، ﺗَﻌْﻠِﻴْﻢ )। এসব মূল শব্দ হতেঅসংখ্য শব্দ বের
হয়ে আসে যাদের ( ﻣُﺸْﺘَﻘﺎﺕ ) বলা হয়।
উদাহরণসরূপ, ( ﻋِﻠْﻢٌ )এ শব্দের উপাদান ( ﻣﺎﺩﺓ ) হচ্ছে
( ﻉ ﻝ ﻡ ) যা থেকে বের হয়ে আসে,
( ﻋَﻠِﻢَ،ﻣَﻌْﻠُﻮﻡ، ﻋَﻠَّﻢَ، ﺗَﻌْﻠِﻴﻢ، ﻣُﻌَﻠِّﻢ، ﻣُﺘَﻌَﻠِّﻢ، ﻋَﻠّﺎﻣَﺔ )।
কোনো ভাষার শক্তি পরিমাপ করতে হলে সে
ভাষার শব্দভান্ডার-এরপরিমান দেখতে হয়। ভাষার শব্দ
যত বেশি তত বেশি শক্তিশালী সেভাষা। আরবী
ভাষা এক্ষেত্রে এগিয়ে অর্থাৎ এ ভাষার বিশাল
শব্দভান্ডার রয়েছে। যেখানে বাংলায় সব মিলিয়ে
রয়েছে মাত্র ১ লক্ষএবং ইংরেজীর রয়েছে ২
লক্ষাধিক শব্দ।আরবী ভাষায় অনেক শব্দ রয়েছে
যা বিভিন্ন অর্থে প্রকাশ পায়।উদাহরণসরূপ, ( ﻗﻀﺎﺀ،
ﻗﺪﺭ )। এ বৈশিষ্ট্য আরবী ভাষাকে
আরোশক্তিশালী করেছে।অল্প কথায় বা বাক্যে
অনেক অর্থ প্রকাশ আরবীতে যেমন সম্ভব
অন্যভাষায় তেমন সম্ভব নয়। আরবীতে প্রবাদ
রয়েছে ( ﺧَﻴْﺮُ ﺍﻟﻜَﻼﻡِ ﻣﺎ ﻗَﻞَّ ﻭَﺩَﻝَّ )অর্থাৎ উত্তম কথা
হলো সংক্ষিপ্ত অথচ অর্থপূর্ণ। কুরআন ও
হাদীসএমনি সব সংক্ষিপ্ত অর্থপূর্ণ বাক্যে পরিপূর্ণ।
রাসূলুল্লাহ (সা)ওবলেছেন, ‘আমাকে ( ﺟَﻮَﺍﻣِﻊَ ﺍﻟْﻜَﻠِﻢ )
দেওয়া হয়েছে’ [৯] অর্থাৎ সংক্ষিপ্তকথায় গভীর
জ্ঞান দেবার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে তাকে। এ
বিষয়টিরউদাহরণ হিসেবে নিম্নোক্ত হাদীসটি
উল্লেখ করা যেতে পারে, ﺗَﻬَﺎﺩَﻭْﺍ ﺗَﺤَﺎﺑُّﻮﺍ “উপহার
বিনিময় কর, একে অপরকে ভালোবাসতে
পারবে।” [১০] অর্থাৎউপহার বিনিময় করলে পারস্পরিক
ভালোবাসা-সম্প্রীতি বৃদ্ধি পাবে।এ ভাষার
বর্ণনাশৈলী এত চমৎকার যে তা শ্রোতার কাছে
ছবির মতোধরা দেয়। এবং পবিত্র কুরআনে এ রকম
অসংখ্য আয়াত রয়েছে।উদাহরণসরূপ, আল্লাহ সুবহানাহু
ওয়া তায়ালা বলেন, ﻭَﻗَﻀَﻰ ﺭَﺑُّﻚَ ﺃَﻟَّﺎ ﺗَﻌْﺒُﺪُﻭﺍ ﺇِﻟَّﺎ ﺇِﻳَّﺎﻩُ
ﻭَﺑِﺎﻟْﻮَﺍﻟِﺪَﻳْﻦِ ﺇِﺣْﺴَﺎﻧًﺎ ﺇِﻣَّﺎ ﻳَﺒْﻠُﻐَﻦَّ ﻋِﻨْﺪَﻙَ ﺍﻟْﻜِﺒَﺮَ ﺃَﺣَﺪُﻫُﻤَﺎ
ﺃَﻭْﻛِﻠَﺎﻫُﻤَﺎ ﻓَﻠَﺎ ﺗَﻘُﻞْ ﻟَﻬُﻤَﺎ ﺃُﻑٍّ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻨْﻬَﺮْﻫُﻤَﺎ ﻭَﻗُﻞْ ﻟَﻬُﻤَﺎ ﻗَﻮْﻟًﺎ
ﻛَﺮِﻳﻤًﺎ ~ ﻭَﺍﺧْﻔِﺾْ ﻟَﻬُﻤَﺎ ﺟَﻨَﺎﺡَ ﺍﻟﺬُّﻝِّ ﻣِﻦَﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﺔِ ﻭَﻗُﻞْ ﺭَﺏِّ
ﺍﺭْﺣَﻤْﻬُﻤَﺎ ﻛَﻤَﺎ ﺭَﺑَّﻴَﺎﻧِﻲ ﺻَﻐِﻴﺮًﺍ “তোমার প্রতিপালক
আদেশ করেছেন যে, তাকে ছাড়া অন্য
কারওএবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সবচেয়ে
সুন্দর ব্যবহার কর।তাদের মধ্যে কেউ অথবা
উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায়
বার্ধক্যেউপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উফ’
শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমকদিও না এবং
তাদের সাথে সম্মানজনকভাবে কথা বল। তাদের
উপররহমত (ভালবাসা/স্নেহ/দয়া/মমতা/করুনা) দিয়ে
তোমার নতজানু হয়েথাকা বিনয়ের ডানা মেলে দাও
এবং বল: হে প্রতিপালক, তাদেরউভয়ের প্রতি রহম
কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-
পালনকরেছেন।” [বনী ইসরাঈল: ২৩-২৪]এ ভাষার
এক অসামান্য সামর্থ্য রয়েছে অন্যান্য ভাষাকে গ্রাস
করেফেলার যখন তারা এর নিকটে আসে। রাসূলুল্লাহ
(সা)-এর সাহাবীগণদাওয়া নিয়ে যে অঞ্চলেই
গেছেন, কিছুদিনের মধ্যেই সে
অঞ্চলেরলোকজনের ভাষা সহজেই
আরবীতে পরিনত হয়েছে। এর ফলেখিলাফতের
অভ্যন্তরে অনেক অনারব আরবীতে অত্যন্ত
পারদর্শীব্যক্তিত্বে পরিনত হয়েছে। এমনকি
আরবী ভাষার ব্যকরণের পথিকৃতসিবাওয়েও একজন
অনারব ছিলেন। পরবর্তীতেও অনেক যুগ
পর্যন্ত এধারা বজায় ছিল। কোনো অঞ্চলে
অবহেলার কারণে এ ভাষাপ্রতিষ্ঠা না হতে পারলেও
সে অঞ্চলের বিদ্যমান ভাষার উপর ব্যপকপ্রভাব
বিস্তার করে গেছে এ ভাষা যা এখনও বিদ্যমান।এ
ভাষার আরো একটি সামর্থ্য হচ্ছে, এ ভাষা বিদেশী
কোনো ভাষারশব্দকে আরবী শব্দতে রূপান্তর
করতে পারে। অন্যকথায়, এ ভাষা অন্যভাষার শব্দ
Arabize তথা ( ﻣُﻌَﺮَّﺏ) মু’আর্রাব করতে পারে। এ
ভাষায় শব্দ ওএর আরবী রূপান্তর নিয়ে ইজতিহাদ
করার জন্য জ্ঞানের আলাদাশাখা রয়েছে।
ইজতিহাদইজতিহাদের জন্য শর্তাবলী রয়েছে যা
উসূলের আলেমগণ ব্যখ্যা করেগিয়েছেন। এর
জন্য দরকার বিস্তৃত জ্ঞান, কুরআন-সুন্নাহর সঠিক
জ্ঞানও যথেষ্ঠ পরিমান আরবী ভাষাতত্ত্বের
জ্ঞান… [শাইখ তাকী উদ্দীনআন-নাবহানী,
মাফাহীম, পৃষ্ঠা ৪৬]আরবী ভাষার অনেকগুলো
বৈশিষ্ট্যের মধ্যে একটি হচ্ছে ইল্লত আহরণঅর্থাৎ
একজন মুজতাহিদ কোনো নস ( ﻧﺺ ) থেকে
হুকুমের পেছনের’ইল্লাহ’ বের করতে পারেন
এবং অন্য পরিস্থিতিতে এর প্রয়োগ করতেপারেন।
এছাড়াও আইনগত দিক থেকে, আরবী ভাষায়
কোনো বাক্যেবিভিন্ন শব্দের উপস্থিতি বা
অনুপস্থিতি বাক্যেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থপ্রদান
করে। উদাহরণসরূপ, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, ইমাম
হচ্ছে রাখাল(দায়িত্বশীল) এবং সেই তার দায়িত্ব
সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।এখানে ‘সেই’ শব্দটি
আরবী ব্যকরণের পরিপ্রেক্ষিতে সীমিতকরণ
( ﺍﺩﺍﺓﺣﺼﺮ )-এর হুকুম পায় এবং এটি একটি আলাদা
সর্বনাম। এভাবেই তাঁর(সা) বক্তব্য, ‘এবং সেই
জিজ্ঞাসিত হবে তার দায়িত্বসম্পর্কে’ (রাষ্ট্রের)
জন্য দায়িত্বশীলতাকে ইমামের জন্য
সীমিতকরে। সুতরাং, রাষ্ট্রের মধ্যে মূলত খলীফা
ছাড়া আর কেউই শাসনকরবার কোনো ক্ষমতা
রাখেনা, হোক ব্যক্তি অথবা দল। [১১]ইসলাম
মানবজাতির জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে সর্বশেষ
জীবনব্যবস্থা।দুনিয়ার সমাপ্তি পর্যন্ত এ দ্বীন
দিয়েই সমাজ পরিচালনা করতে হবে।আর এ কাজ
করতে গিয়ে যুগে যুগে মুসলিম জাতিকে অসংখ্য
নতুনসমস্যার সম্মুক্ষীন হতে হয়েছে এবং
স্বাভাবিকভাবে ভবিষ্যতেও হতেহবে। এসব সমস্যা
সমাধানের জন্য একমাত্র উপায় হচ্ছে ইজতিহাদ।
ইজতিহাদ হচ্ছে সেই ইঞ্জিন যা ইসলামকে চালিত
করে। এটি নাথাকলে উম্মাহর মধ্যে জলাবদ্ধ
অবস্থার সৃষ্টি হবে এবং উম্মাহরসমৃদ্ধি থমকে যাবে।
এবং ঐতিহাসিকভাবেও এ বিষয়টির সত্যতাআমরা
দেখেছি। শাইখ তাকী (রহ) বলেন,”(মুসলিম
উম্মাহ্র) এ অধ:পতনের পেছনে একমাত্র একটি
কারণই ছিল,(মুসলিমদের) প্রচন্ড দূর্বলতা যা তাদের
ইসলামকে বোঝার জন্য চিন্তাকরার যোগ্যতা ধ্বংস
করে দিয়েছিল। এ দূর্বলতার পেছনের কারণ
ছিল৭ম শতাব্দী হিজরীর প্রথম থেকে শুরু করে
ইসলাম ও আরবী ভাষারবিচ্ছিন্নকরন যখন আরবী ভাষা
ও ইসলামের প্রসার অবহেলিত হয়েছে।সুতরাং,
যতক্ষন পর্যন্ত আরবী ভাষাকে ইসলামের সাথে
এর একঅবিচ্ছেদ্য মৌলিক অংশ হিসেবে মিশ্রিত না করা
হবে, ততক্ষনপর্যন্ত এ অধ:পতন মুসলিমদের
আরো অবনতির দিকে নিয়ে যাবে। এটা একারণে
যে, এই ভাষার ভাষাগত ক্ষমতা ইসলামের শক্তিকে
এমনভাবেসামনে এগিয়ে নিয়ে গেছে যে একে
ছাড়া ইসলামকে বহন করা সম্ভবনয়, এবং যদি একে
অবহেলা করা হয়, তবে শরীয়াহ্র মধ্যে
ইজতিহাদকরা আর সম্ভবপর হবে না। (আর) আরবী
ভাষার জ্ঞান ইজতিহাদেরজন্য একটি মৌলিক শর্ত।
এছাড়াও ইজতিহাদ উম্মতের জন্য অপরিহার্যযেহেতু
এর সদ্ব্যবহার ছাড়া উম্মাহর উন্নয়ন সম্ভব
নয়।” [১২]সুতরাং, বোঝা যাচ্ছে উম্মাহর সমৃদ্ধির
সাথে আরবী ভাষার সম্পর্ককত গভীর।উম্মাহ্র
পূনর্জাগরণনিশ্চয়ই আল্লাহ এ কিতাবের দ্বারা বিভিন্ন
জাতিকে উচ্চকিত করেনআর অন্যান্যদের করে
দেন নিচু। [মুসলিম]পূনর্জাগরণ বস্তুগত বা বৈজ্ঞানিক
উন্নয়নের মধ্যে নিহিত নেই। বরংচিন্তাগত ও
মতাদর্শিক উন্নয়নই পূনর্জাগরনের সঠিক ভিত্তি
আরবস্তুগত উন্নয়ন হচ্ছে এর ফলাফল। আমরা যখন
উম্মতের পূনর্জাগরনেরকথা বলি তখন আমাদের
মনে রাখতে হবে যে এ পুনর্জাগরণ
ইসলামীআকীদাহ ও তা থেকে বের হয়ে আসা
ব্যবস্থার সাথেওতোপ্রোতভাবে জড়িত। কারণ
আমাদেরকে পৃথিবীতে এ আকীদাহপ্রতিষ্ঠা ও
এর ব্যবস্থাকে বাস্তবায়ন করতে হবে। এবং এ
ব্যবস্থাটিরয়েছে কুরআন ও সুন্নাহ্র মধ্যে
আরবী ভাষায়। অতীতে আরবরাপৃথিবীর শ্রেষ্ট
জাতিতে পরিনত হয়েছিল কারণ আল্লাহ সুবহানাহুওয়া
তা’য়ালা এ ভাষায় পবিত্র কুরআন নাযিল করেছিলেন। এবং
এভাষাতেই তারা শরীয়াহ বুঝেছিলেন এবং তা
বাস্তবায়ন করেছিলেন।এবং আরবী ভাষার
কোনো কিছু সবচেয়ে ভালোভাবে
আরবীতেইবোঝা যাবে। এক্ষেত্রে অনুবাদ
গ্রহণযোগ্য নয় যেহেতু ভাষার অর্থ ওআকুতি
অনেকটাই অনুবাদে হারিয়ে যায়। অন্য
যেকোনো ভাষারসাহিত্য অধ্যয়নের ক্ষেত্রেও
এটি সত্য। উদাহরণসরূপ, আমরাশেক্সপিয়ারকে
ইংরেজি, ইকবালকে উর্দূ, নজরুলকে বাংলা ছাড়াঅন্য
কোনো ভাষাতেই পূর্নাঙ্গরূপে বুঝতে পারবো
না। সুতরাংইসলামী ব্যবস্থার খুটিনাটি বিশ্লেষন বুঝতে
হলে আরবী ভাষারজ্ঞানও থাকতে হবে।আমরা যারা
হুকুম শরঈ’ নিয়ে পড়াশুনা করেছি তারা জানি যে, ফরয-
এ-কিফায়া ও আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বাধ্যতামূলক
ফরয দায়িত্বএবং ফরয হিসেবে ফরয-এ-আইন হতে
কোনো অংশে এটি কম গুরুত্বপূর্ণনয়। শুধুমাত্র
পার্থক্য হল, ফরয-এ-কিফায়াকে পালন করার জন্য
আল্লাহপুরো উম্মতকে একসাথে দায়িত্ব
দিয়েছেন, উম্মতের প্রত্যেকটিসদস্যকে আলাদা
আলাদা চিহ্নিত করে দায়িত্ব দেয়া হয়নি। কিন্তুউম্মাহর
মধ্যে যথেষ্ঠ পরিমান সদস্য যদি
সন্তোষজনকভাবে এ দায়িত্বপালন না করে, তাহলে
কাজটি সম্পন্ন করাটা পূরো উম্মতের জন্যফরজে
আইন হিসেবে ঝুলে থাকে। আমরা জানি ইজতিহাদ
করাটাফরযে কিফায়া এবং ইজতিহাদ করার জন্য আরবী
ভাষা জানাটাওআবশ্যক। এবং উম্মতের মধ্যে
প্রত্যেক যুগে অবশ্যই যথেষ্ঠ পরিমানেমুজতাহিদ
থাকতে হবে। কিন্তু বর্তমান পৃথিবীর দিকে যদি
আমরাতাকাই তাহলে কি আমরা সে পরিমান মুজতাহিদ ও
সেরকম ইজতিহাদচর্চা দেখতে পাবো ? এখন
আমরা একটু চিন্তা করলেই উপলব্ধি করতেপারবো
যে বর্তমানে আরবী ভাষার জ্ঞান অর্জন করা
আমাদের জন্যকতটা জরুরী। এছাড়াও খিলাফত
প্রতিষ্ঠার দা’য়ী হিসেবে উম্মতেরকাছ থেকে
আস্থা ও নেতৃত্ব অর্জন করার জন্য আরবী ভাষা
জানাটাখুবই জরুরী।উপসংহার”আল্লাহ তাঁর সেই বান্দার
মুখ উজ্জ্বল করুন যে আমার কথা
শুনেছে,সেগুলো মনে রেখেছে,
বুঝেছে এবং অন্যের কাছে পৌঁছে দিয়েছে।
কারণ কেউ নিজে ফকীহ্ (জ্ঞানী) না হয়েও
ফিকহ্ (জ্ঞান) বহনকারীহতে পারে। আবার কেউ
তার নিজের চাইতে বড় ফকীহ (জ্ঞানী)
এরনিকটও ফিকহ্ পৌঁছে দিতে পারে।” [আবু দাউদ,
তিরমিযী এবং আহমদথেকে বর্ণিত]আমরাই পৃথিবীর
ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব এবং আমাদেরকেই
পৃথিবীকেআল্লাহর কিতাব ও রাসূলুল্লাহ (সা)-এর
সুন্নাহ দিয়ে শাসন করতে হবে।জনগণ আমাদের
কাছেই আসবে ইসলাম শিখতে। আমরাই
তারাযাদেরকে পৃথিবী বিভিন্ন প্রান্তে প্রেরণ করা
হবে আমিল, ওয়ালীকিংবা মুজাহিদ হিসেবে। ঠিক
সেভাবেই যেভাবে রাসূলুল্লাহ (সা)সাহাবীদের
প্রেরণ করতেন। আমরা জানি, মু’আজ বিন জাবাল
যখনইয়েমেনে প্রেরিত হয়েছিলেন তখন তিনি
রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর প্রশ্নেরজবাবে বলেছিলেন
যে তিনি আল্লাহর কিতাব, রাসূলের সুন্নত ও
তারইজতিহাদের দ্বারা রায় দেবেন। সুতরাং, আমরা যদি
সেই আলী,মু’আজ, আমর ইবনুল আস (রা)-দের
সত্যিকার উত্তরসূরী হয়ে থাকি এবংআমরা যদি
কিছুদিনের মধ্যে তাদের মতো দায়িত্বপ্রাপ্ত হই
তখনকিভাবে আমরা উত্তমরুপে খিলাফতের
অফিসকে চালাবো যখন আমরাআরবী ভাষার জ্ঞান
রাখি না।সুতরাং আমাদের আরবী ভাষা শিখতে হবে।
শুধুমাত্র সাধারণনিত্যনৈমিত্তিক যোগাযোগের
আরবী ভাষা নয় যা আমাদের দেশেরকিছু
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা একাডেমি শিক্ষা দেয়, বরং
আমাদেরআরবী শিখতে হবে দ্বীনকে
বোঝার জন্য। ভাষা শিক্ষাকে আমাদেরকঠিন
কোনো কিছু মনে করা উচিত নয়। আর কেন
আমরা আরবী ভাষাশেখাটা কঠিন মনে করব যখন
আমরা জানি যে যাইদ (রা)-কে যখনরাসূলুল্লাহ (সা) হিব্রু
ভাষা শিখতে বলেছিলেন তখন তিনি তা মাত্র১৫ দিনে
সম্পন্ন করেছিলেন। তার সময়ে কোনো
আনুষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা একাডেমি ছিল না অথচ
আমাদের সময়ে তা আছে। তারসময়ে কোনো
টেকনোলজিও ছিল না তাকে এ বিষয়ে সাহায্য
করারজন্য অথচ আমাদের সময়ে তা আছে। আমরা
দুনিয়ার বিভিন্ন কাজেরজন্য ইংরেজি বা ফ্রেঞ্চ
শিখতে পারলে আরবী কেন পারবো না।আল্লাহর
উপর পূর্ণ ভরসা নিয়ে আমাদের প্রত্যেকের এ
কাজে অগ্রসরহওয়া উচিত। আল্লাহ্র কাছে দু’আ করি
যাতে তিনি আমাদের তাঁরকিতাবের ভাষার সঠিক জ্ঞান
দান করেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা’আলা বলেন,”আর
যারা আমার পথে চেষ্টা সংগ্রাম করে তাদের আমি
অবশ্যইআমার পথ দেখিয়ে দেব। আর আল্লাহ
অবশ্যই রয়েছেন তাদের সাথেযারা সবচেয়ে
উত্তমরুপে কাজ সম্পাদন করে।” [আনকাবুত: ৬৯]এস
এম নাজিম উর রশীদ১ জানুয়ারী ২০১১তথ্যসূত্র:[১]
মাফাহীম, তাকী উদ্দীন আন-নাবহানী, পৃষ্ঠা ৪৭[২]
ইকতিদাউস সিরাতিল মুসতাকীম, ইবনু তাইমিয়্যাহ, পৃষ্ঠা
২০৭[৩] মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবাহ[৪] আল-বিদায়া
ওয়ান নিহায়া, ইবনু কাছীর, ৮ম খ-, ৩৪৩ পৃষ্ঠা[৫]
ইকতিদা’উস সিরাতিল মুসতাকীম, ইবনু তাইমিয়্যাহ, পৃষ্ঠা
২০৩[৬] ইসলামী রাষ্ট্র, তাকী উদ্দীন আন-
নাবহানী, পৃষ্ঠা ১৬৪[৭] সহীহ মুসলিম[৮] আরবী
সাহিত্যের ইতিহাস, আ ত ম মুসলেহউদ্দিন,
ইসলামীফাউন্ডেশন, পৃষ্ঠা ২৬২[৯] সহীহ মুসলিম
[১০] মুআত্তা ইমাম মালিক, সুনান আস-সাগীর লিল-
বাইহাকী, মু’জামআল-আওসাত লিত-তাবারানী[১১]
কিভাবে খিলাফত ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল, আবদুল কাদীম
জাল্লুম,পৃষ্ঠা ৬০[১২] মাফাহীম, তাকী উদ্দীন আন-
নাবহানী, পৃষ্ঠা ১

Leave a comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.