সালাতের গুরুত্ব, সালাত তরককারীর হুকুম এবং সালাতের ফজিলত


সালাতের গুরুত্ব, সালাত তরককারীর হুকুম এবং সালাতের ফজিলত

ছালাতের গুরুত্ব ( أهمية الصلاة) :

1) কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করার পরেই ইসলামে ছালাতের স্থান।[11]

2) ছালাত ইসলামের শ্রেষ্ঠতম ইবাদত, যা মি‘রাজের রাত্রিতে ফরয হয়।[12]

3) ছালাত ইসলামের প্রধান স্তম্ভ[13] যা ব্যতীত ইসলাম টিকে থাকতে পারে না।

4) ছালাত একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা ৭ বছর বয়স থেকেই আদায়ের অভ্যাস করতে হয়।[14]

5) ছালাতের বিধ্বস্তি জাতির বিধ্বস্তি হিসাবে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে।[15]

6) পবিত্র কুরআনে সর্বাধিকবার আলোচিত বিষয় হ’ল ছালাত।[16]

7) মুমিনের জন্য সর্বাবস্থায় পালনীয় ফরয হ’ল ছালাত, যা অন্য ইবাদতের বেলায় হয়নি।[17]

8 ) ইসলামের প্রথম যে রশি ছিন্ন হবে, তা হ’ল তার শাসনব্যবস্থা এবং সর্বশেষ যে রশি ছিন্ন হবে তা হ’ল ‘ছালাত’। [18]

9) দুনিয়া থেকে ‘ছালাত’ বিদায় নেবার পরেই ক্বিয়ামত হবে।[19]

10) ক্বিয়ামতের দিন বান্দার সর্বপ্রথম হিসাব নেওয়া হবে তার ছালাতের। ছালাতের হিসাব সঠিক হ’লে তার সমস্ত আমল সঠিক হবে। আর ছালাতের হিসাব বেঠিক হ’লে তার সমস্ত আমল বরবাদ হবে।[20]

11) দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত হিসাবে ‘ছালাত’-কে ফরয করা হয়েছে, যা অন্য কোন ফরয ইবাদতের বেলায় করা হয়নি।[21]

12) মুমিন ও কাফির-মুশরিকের মধ্যে পার্থক্য হ’ল ‘ছালাত’।[22]

13) জাহান্নামী ব্যক্তির লক্ষণ এই যে, সে ছালাত বিনষ্ট করে এবং প্রবৃত্তির পূজারী হয় (মারিয়াম ১৯/৫৯)

14) ইবরাহীম (আঃ) আল্লাহর নিকটে নিজের জন্য ও নিজ সন্তানদের জন্য ছালাত কায়েমকারী হওয়ার প্রার্থনা করেছিলেন (ইবরাহীম ১৪/৪০)

15) মৃত্যুকালে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সর্বশেষ অছিয়ত ছিল ‘ছালাত’ ও নারীজাতি সম্পর্কে।[23]

৪. ছালাত তরককারীর হুকুম ( حكم تارك الصلاة) :

ইচ্ছাকৃতভাবে ছালাত তরককারী অথবা ছালাতের ফরযিয়াতকে অস্বীকারকারী ব্যক্তি কাফির ও জাহান্নামী। ঐ ব্যক্তি ইসলাম হ’তে বহিষ্কৃত। কিন্তু যে ব্যক্তি ঈমান রাখে, অথচ অলসতা ও ব্যস্ততার অজুহাতে ছালাত তরক করে কিংবা উদাসীনভাবে ছালাত আদায় করে ও তার প্রকৃত হেফাযত করে না, সে ব্যক্তি সম্পর্কে শরী‘আতের বিধান সমূহ নিম্নরূপ :

(ক) আল্লাহ বলেন, فَوَيْلٌ لِلْمُصَلِّيْنَ، الَّذِيْنَ هُمْ عَنْ صَلاَتِهِمْ سَاهُوْنَ، الَّذِيْنَ هُمْ يُرَآءُوْنَ… ‘অতঃপর দুর্ভোগ ঐ সব মুছল্লীর জন্য’ ‘যারা তাদের ছালাত থেকে উদাসীন’। ‘যারা তা লোকদেরকে দেখায়’… (মা‘ঊন ১০৭/৪-৬)

(খ) অলস ও লোক দেখানো মুছল্লীদের আল্লাহ মুনাফিক ও প্রতারক বলেছেন। যেমন তিনি বলেন,

إِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ يُخَادِعُوْنَ اللهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ وَإِذَا قَامُوْا إِلَى الصَّلاَةِ قَامُوْا كُسَالَى يُرَآءُوْنَ النَّاسَ وَلاَ يَذْكُرُوْنَ اللهَ إِلاَّ قَلِيلاً- (النساء 142)-

‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা প্রতারণা করে আল্লাহর সাথে। অথচ তিনি তাদেরকেই ধোঁকায় নিক্ষেপ করেন। তারা যখন ছালাতে দাঁড়ায়, তখন অলসভাবে দাঁড়ায় লোক দেখানোর জন্য। আর তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে’ (নিসা ৪/১৪২)। অন্যত্র আল্লাহ তাদের ‘ফাসেক্ব’ (পাপাচারী) বলেছেন এবং বলেছেন যে, ‘তিনি তাদের ছালাত ও অর্থ ব্যয় কিছুই কবুল করবেন না’ (তওবা ৯/৫৩-৫৪)

(গ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,… ‘যে ব্যক্তি ছালাতের হেফাযত করল না …সে ব্যক্তি ক্বিয়ামতের দিন ক্বারূণ, ফেরাঊন, হামান ও উবাই বিন খালাফের সঙ্গে থাকবে’।[24]

ছালাতের হেফাযত করা অর্থ রুকূ-সিজদা ইত্যাদি ফরয ও সুন্নাত সমূহ সঠিকভাবে ও গভীর মনোযোগ সহকারে আদায় করা। [25] উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (৬৯১-৭৫১ হিঃ) বলেন, (১) যে ব্যক্তি অর্থ-সম্পদের মোহে ছালাত হ’তে দূরে থাকে, তার হাশর হবে মূসা (আঃ)-এর চাচাত ভাই বখীল ধনকুবের ক্বারূণ-এর সাথে। (২) রাষ্ট্রীয় বা রাজনৈতিক ব্যস্ততার অজুহাতে যে ব্যক্তি ছালাত হ’তে গাফেল থাকে, তার হাশর হবে মিসরের অত্যাচারী শাসক ফেরাঊনের সাথে। (৩) মন্ত্রীত্ব বা চাকুরীগত কারণে যে ব্যক্তি ছালাত হ’তে গাফেল থাকে, তার হাশর হবে ফেরাঊনের প্রধানমন্ত্রী হামান-এর সাথে। (৪) ব্যবসায়িক ব্যস্ততার অজুহাতে যে ব্যক্তি গাফেল থাকে, তার হাশর হবে মক্কার কাফের ব্যবসায়ী নেতা উবাই বিন খালাফের সাথে।[26] বলা বাহুল্য ক্বিয়ামতের দিন কাফের নেতাদের সাথে হাশর হওয়ার অর্থই হ’ল জাহান্নামবাসী হওয়া। যদিও সে দুনিয়াতে একজন মুছল্লী ছিল। অতএব শুধু ছালাত তরক করা নয় বরং ছালাতের হেফাযত বা রুকূ-সিজদা সঠিকভাবে আদায় না হ’লেও জাহান্নামী হ’তে হবে। (আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন। আমীন!)।

(ঘ) ছালাত তরক করাকে হাদীছে ‘কুফরী’ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।[27] ছাহাবায়ে কেরামও একে ‘কুফরী’ হিসাবে গণ্য করতেন।[28] তারা নিঃসন্দেহে জাহান্নামী। তবে এই ব্যক্তিগণ যদি খালেছ অন্তরে তাওহীদ, রিসালাত ও আখেরাতে বিশ্বাসী হয় এবং ইসলামের হালাল-হারাম ও ফরয-ওয়াজিব সমূহের অস্বীকারকারী না হয় এবং শিরক না করে, তাহ’লে তারা ‘কালেমায়ে শাহাদাত’কে অস্বীকারকারী কাফিরগণের ন্যায় ইসলাম থেকে খারিজ নয় বা চিরস্থায়ী জাহান্নামী নয়। কেননা এই প্রকারের মুসলমানেরা কর্মগতভাবে কাফির হ’লেও বিশ্বাসগতভাবে কাফির নয়। বরং খালেছ অন্তরে পাঠ করা কালেমার বরকতে এবং কবীরা গোনাহগারদের জন্য শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর শাফা‘আতের ফলে শেষ পর্যায়ে এক সময় তারা জান্নাতে ফিরে আসবে।[29] তবে তারা সেখানে ‘জাহান্নামী’ (اَلْجَهَنَّمِيُّوْنَ) বলেই অভিহিত হবে। [30] যেটা হবে বড়ই লজ্জাকর বিষয়।

(ঙ) বিভিন্ন হাদীছের আলোকে আহলেসুন্নাত বিদ্বানগণের মধ্যে ইমাম মালেক (৯৩-১৭৯ হিঃ), ইমাম শাফেঈ (১৫০-২০৪ হিঃ) এবং প্রাথমিক ও পরবর্তী যুগের প্রায় সকল বিদ্বান এই মর্মে একমত হয়েছেন যে, ঐ ব্যক্তি ‘ফাসিক্ব্’ এবং তাকে তওবা করতে হবে। যদি সে তওবা করে ছালাত আদায় শুরু না করে, তবে তার শাস্তি হবে মৃত্যুদন্ড। ইমাম আবু হানীফা (৮০-১৫০হিঃ) বলেন, তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে এবং ছালাত আদায় না করা পর্যন্ত জেলখানায় আবদ্ধ রাখতে হবে। [31] ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (১৬৪-২৪১ হিঃ) বলেন, ঐ ব্যক্তিকে ছালাতের জন্য ডাকার পরেও যদি সে ইনকার করে ও বলে যে ‘আমি ছালাত আদায় করব না’ এবং এইভাবে ওয়াক্ত শেষ হয়ে যায়, তখন তাকে কতল করা ওয়াজিব।[32] অবশ্য এরূপ শাস্তিদানের দায়িত্ব হ’ল ইসলামী সরকারের। ঐ ব্যক্তির জানাযা মসজিদের ইমাম বা বড় কোন বুযর্গ আলেম দিয়ে পড়ানো যাবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) গণীমতের মালের (আনুমানিক দুই দিরহাম মূল্যের) তুচ্ছ বস্ত্তর খেয়ানতকারী এবং আত্মহত্যাকারীর জানাযা পড়েননি বরং অন্যকে পড়তে বলেছেন। [33] এক্ষণে আল্লাহ্কৃত ফরয ছালাতের সঙ্গে খেয়ানতকারী ব্যক্তির সাথে মুমিন সমাজের আচরণ কেমন হওয়া উচিৎ, তা সহজেই অনুমেয়।

৫. ছালাতের ফযীলত সমূহ ( فضائل الصلاة) :

(১) আল্লাহ পাক এরশাদ করেন, إِنَّ الصَّلاَةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ ‘নিশ্চয়ই ছালাত মুমিনকে নির্লজ্জ ও অপসন্দনীয় কাজ সমূহ হ’তে বিরত রাখে’ (আনকাবূত ২৯/৪৫)।

আবুল ‘আলিয়াহ বলেন, তিনটি বস্ত্ত না থাকলে তাকে ছালাত বলা যায় না। (১) ইখলাছ (الإخلاص) বা একনিষ্ঠতা, যা তাকে সৎ কাজের নির্দেশ দেয় (২) আল্লাহভীতি (الخشية), যা তাকে অন্যায় থেকে বিরত রাখে (৩) কুরআন পাঠ (ذكر القرآن), যা তাকে ভাল-মন্দের নির্দেশনা দেয়।[34] আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, ‘একদা জনৈক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলল যে, অমুক ব্যক্তি রাতে (তাহাজ্জুদের) ছালাত পড়ে। অতঃপর সকালে চুরি করে। জবাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে বলেন, তার রাত্রি জাগরণ সত্বর তাকে ঐ কাজ থেকে বিরত রাখবে, যা তুমি বলছ (إِنَّهُ سَيَنْهَاهُ مَا تَقُوْلُ)’। [35]

(২) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত, এক জুম‘আ হ’তে পরবর্তী জুম‘আ এবং এক রামাযান হ’তে পরবর্তী রামাযানের মধ্যকার যাবতীয় (ছগীরা) গুনাহের কাফফারা স্বরূপ, যদি সে কবীরা গোনাহসমূহ হ’তে বিরত থাকে (যা তওবা ব্যতীত মাফ হয় না)’।[36]

(৩) তিনি বলেন, তোমাদের কারু ঘরের সম্মুখ দিয়ে প্রবাহিত নদীতে দৈনিক পাঁচবার গোসল করলে তোমাদের দেহে কোন ময়লা বাকী থাকে কি?… পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতের তুলনা ঠিক অনুরূপ। আল্লাহ এর দ্বারা গোনাহ সমূহ বিদূরিত করেন।[37]

(৪) তিনি আরও বলেন, যে ব্যক্তি ছালাতের হেফাযত করল, ছালাত তার জন্য ক্বিয়ামতের দিন নূর, দলীল ও নাজাতের কারণ হবে….। [38]

(৫) আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন যে, ‘বান্দা যখন ছালাতে দন্ডায়মান হয়, তখন তার সমস্ত গুনাহ হাযির করা হয়। অতঃপর তা তার মাথায় ও দুই স্কন্ধে রেখে দেওয়া হয়। এরপর সে ব্যক্তি যখন রুকূ বা সিজদায় গমন করে, তখন গুনাহ সমূহ ঝরে পড়ে’। [39]

(৬) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, (ক) যে ব্যক্তি ফজর ও আছরের ছালাত নিয়মিত আদায় করে, সে জাহান্নামে যাবে না’। ‘সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’। [40] (খ) দিবস ও রাত্রির ফেরেশতারা ফজর ও আছরের ছালাতের সময় একত্রিত হয়। রাতের ফেরেশতারা আসমানে উঠে গেলে আল্লাহ তাদের জিজ্ঞেস করেন, তোমরা আমার বান্দাদের কি অবস্থায় রেখে এলে? যদিও তিনি সবকিছু অবগত। তখন ফেরেশতারা বলে যে, আমরা তাদেরকে পেয়েছিলাম (আছরের) ছালাত অবস্থায় এবং ছেড়ে এসেছি (ফজরের) ছালাত অবস্থায়’।[41] কুরআনে ফজরের ছালাতকে ‘মাশহূদ’ বলা হয়েছে(ইসরা ১৭/৭৮)। অর্থাৎ ঐ সময় ফেরেশতা বদলের কারণে রাতের ও দিনের ফেরেশতারা একত্রিত হয়ে সাক্ষী হয়ে যায়। [42] (গ) যে ব্যক্তি ফজরের ছালাত আদায় করল, সে আল্লাহর যিম্মায় রইল। যদি কেউ সেই যিম্মা থেকে কাউকে ছাড়িয়ে নিতে চায়, তাকে উপুড় অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।[43]

(৭) তিনি বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত যেগুলিকে আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের উপরে ফরয করেছেন, যে ব্যক্তি এগুলির জন্য সুন্দরভাবে ওযূ করবে, ওয়াক্ত মোতাবেক ছালাত আদায় করবে, রুকূ ও খুশূ‘-খুযূ‘ পূর্ণ করবে, তাকে ক্ষমা করার জন্য আল্লাহর অঙ্গীকার রয়েছে। আর যে ব্যক্তি এগুলি করবে না, তার জন্য আল্লাহর কোন অঙ্গীকার নেই। তিনি ইচ্ছা করলে তাকে ক্ষমা করতে পারেন, ইচ্ছা করলে আযাব দিতে পারেন’।[44]

(৮) আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন যে, আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোন প্রিয় বান্দার সাথে দুশমনী করল, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিলাম। আমি যেসব বিষয় ফরয করেছি, তার মাধ্যমে আমার নৈকট্য অনুসন্ধানের চাইতে প্রিয়তর আমার নিকটে আর কিছু নেই। বান্দা বিভিন্ন নফল ইবাদতের মাধ্যমে সর্বদা আমার নৈকট্য হাছিলের চেষ্টায় থাকে, যতক্ষণ না আমি তাকে ভালবাসি। অতঃপর যখন আমি তাকে ভালবাসি, তখন আমিই তার কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শ্রবণ করে। চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দর্শন করে। হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধারণ করে। পা হয়ে যাই, যার সাহায্যে সে চলাফেরা করে। যদি সে আমার নিকটে কোন কিছু প্রার্থনা করে, আমি তাকে তা দান করে থাকি। যদি সে আশ্রয় ভিক্ষা করে, আমি তাকে আশ্রয় দিয়ে থাকি’….।[45]

মসজিদে ছালাতের ফযীলত :

(১) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, আল্লাহর নিকটে প্রিয়তর স্থান হ’ল মসজিদ এবং নিকৃষ্টতর স্থান হ’ল বাজার’। [46]

(২) ‘যে ব্যক্তি সকালে ও সন্ধ্যায় (পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতে) মসজিদে যাতায়াত করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে মেহমানদারী প্রস্ত্তত রাখেন’। [47]

(৩) তিনি বলেন, সবচেয়ে বেশী নেকী পান ঐ ব্যক্তি যিনি সবচেয়ে দূর থেকে মসজিদে আসেন এবং ঐ ব্যক্তি বেশী পুরস্কৃত হন, যিনি আগে এসে অপেক্ষায় থাকেন। অতঃপর ইমামের সাথে ছালাত আদায় করেন।[48] তিনি বলেন, ‘প্রথম কাতার হ’ল ফেরেশতাদের কাতারের ন্যায়। যদি তোমরা জানতে এর ফযীলত কত বেশী, তাহ’লে তোমরা এখানে আসার জন্য অতি ব্যস্ত হয়ে উঠতে’।[49]

(৪) ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছায়াতলে যে সাত শ্রেণীর লোক আশ্রয় পাবে, তাদের এক শ্রেণী হ’ল ঐ সকল ব্যক্তি যাদের অন্তর মসজিদের সাথে লটকানো থাকে। যখনই বের হয়, পুনরায় ফিরে আসে।[50]

(৫) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, অন্যত্র ছালাত আদায়ের চেয়ে আমার এই মসজিদে ছালাত আদায় করা এক হাযার গুণ উত্তম এবং মাসজিদুল হারামে ছালাত আদায় করা এক লক্ষ গুণ উত্তম।[51]

উল্লেখ্য যে ‘অন্য মসজিদের চেয়ে জুম‘আ মসজিদে ছালাত আদায় করলে পাঁচশত গুণ ছওয়াব বেশী পাওয়া যাবে’ মর্মে বর্ণিত হাদীছটি ‘যঈফ’। [52]

রেফারেন্স সমুহঃ

   [11] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৭৭২ ‘যাকাত’ অধ্যায়-৬, পরিচ্ছেদ-১।

[12] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৫৮৬২-৬৫ ‘ফাযায়েল ও শামায়েল’ অধ্যায়-২৯, ‘মি‘রাজ’ অনুচ্ছেদ-৬।

[13] . আহমাদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২৯ (..عموده الصلاة..) ‘ঈমান’ অধ্যায়-১।

[14] . مُرُوْا أَوْلاَدَكُمْ بِالصَّلاَةِ وَهُمْ أَبْنَاءُ سَبْعِ سِنِيْنَ وَاضْرِبُوْهُمْ عَلَيْهَا وَهُمْ أَبْنَاءُ عَشْرِ سِنِيْنَ وَفَرِّقُوْا بَيْنَهُمْ فِي الْمَضَاجِعِ = আবুদাঊদ হা/২৪৭, মিশকাত হা/৫৭২ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, পরিচ্ছেদ-২।

[15] . মারিয়াম ১৯/৫৯ (فَخَلَفَ مِنْ بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا الصَّلاَةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا)

[16] . কুরআনে অন্যূন ৮২ জায়গায় ‘ছালাতের’ আলোচনা এসেছে। – আল-মু‘জামুল মুফাহরাস লি আলফাযিল কুরআনিল কারীম (বৈরূত : ১৯৮৭)।

[17] . বাক্বারাহ ২/২৩৮-৩৯; নিসা ৪/১০১-০৩।

[18] ও ৩৫. عَنْ أَبِيْ أُمَامَةَ الْبَاهِلِيِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَتُنْقَضَنَّ عُرَى الْإِسْلاَمِ عُرْوَةً عُرْوَةً فَكُلَّمَا انْتَقَضَتْ عُرْوَةٌ تَشَبَّثَ النَّاسُ بِالَّتِيْ تَلِيْهَا وَأَوَّلُهُنَّ نَقْضًا الْحُكْمُ وَآخِرُهُنَّ الصَّلاَةُ =আহমাদ, ছহীহ ইবনু হিববান; আলবানী, ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৬৯; আলবানী, ছহীহ জামে‘ ছাগীর হা/৫০৭৫, ৫৪৭৮।

[19] . তদেব।َ

৩৬. عَنْ أَنَسِ بْنِ حُكَيْمٍ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَوَّلُ مَا يُحَاسَبُ بِهِ الْعَبْدُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الصَلاَةُ ، فَإِنْ صَلَحَتْ صَلَحَ سَائِرُ عَمَلِهِ، وَإِنْ فَسَدَتْ فَسَدَ سَائِرُ عَمَلِهِ =ত্বাবারাণী আওসাত্ব, ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৩৬৯, সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৩৫৮; আবুদাঊদ হা/৮৬৪-৬৬; নাসাঈ, তিরমিযী, মিশকাত হা/১৩৩০ ‘ছালাতুত তাসবীহ’ অনুচ্ছেদ-৪০।

৩৭. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৮৬২-৬৫ ‘মি‘রাজ’ অনুচ্ছেদ; নিসা ৪/১০৩।

৩৮. عَنْ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللهِ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: بَيْنَ الرَّجُلِ وَبَيْنَ الشِّرْكِ وَالْكُفْرِ تَرْكُ الصَّلاَةِ – = মুসলিম হা/১৩৪ ‘ঈমান’ অধ্যায়; ঐ, মিশকাত হা/৫৬৯ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪; ইবনু মাজাহ হা/১০৮০।

[23] . عَنْ عَلِيٍّ قَالَ كَانَ آخِرُ كَلاَمِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الصَّلاَةُ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ = ইবনু মাজাহ হা/২৬৯৮ ‘অছিয়তসমূহ’ অধ্যায়; আবুদাঊদ হা/৫১৫৬ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৩৩।

[24] . আহমাদ হা/৬৫৭৬, ‘হাসান’; দারেমী হা/২৭২১, ‘ছহীহ’; মিশকাত হা/৫৭৮ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, আলবানী প্রথমে ‘জাইয়িদ’ ও পরবর্তীতে ‘যঈফ’ বলেছেন (তারাজু‘আত হা/২৯)।

[25] . মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী, মিরক্বাতুল মাফাতীহ শরহ মিশকাতুল মাছাবীহ (দিল্লী: তাবি) ২/১১৮ পৃঃ।

[26] . ইবনুল ক্বাইয়িম, ‘আছ-ছালাত ওয়া হুক্মু তারিকিহা’ (বৈরূত : দার ইবনু হযম, ১ম সংস্করণ ১৪১৬/১৯৯৬), পৃঃ ৬৩; সাইয়িদ সাবিক্ব, ফিক্বহুস সুন্নাহ (কায়রো : ১৪১২/১৯৯২), ১/৭২।

[27] . মুসলিম, মিশকাত হা/৫৬৯; তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৫৭৪, ৫৮০; মির‘আত ২/২৭৪, ২৭৯।

[28] . তিরমিযী, মিশকাত হা/৫৭৯; মির‘আত ২/২৮৩।

[29] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, বুখারী, মিশকাত হা/৫৫৭৩-৭৪; তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৫৫৯৮-৫৬০০ ‘ক্বিয়ামতের অবস্থা’ অধ্যায়-২৮, ‘হাউয ও শাফা‘আত’ অনুচ্ছেদ-৪।

[30] . বুখারী, মিশকাত হা/৫৫৮৫, অধ্যায়-২৮, অনুচ্ছেদ-৪।

[31] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৭৩ পৃঃ ; শাওকানী, নায়লুল আওত্বার (কায়রো: ১৩৯৮/১৯৭৮), ২/১৩ পৃঃ।

[32] . নায়লুল আওত্বার ২/১৫; মিরক্বাত ২/১১৩-১৪ পৃঃ।

[33] . নায়ল ৫/৪৭-৪৮, ‘জিহাদ’ অধ্যায়, ‘মুত্যুদন্ডে নিহত ব্যক্তির জানাযা’ অনুচ্ছেদ; এতদ্ব্যতীত আহমাদ, আবুদাঊদ, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৪০১১; যা-দুল মা‘আদ ৩/৯৮ পৃঃ; আলবানী, তালখীছু আহকামিল জানায়েয পৃঃ ৪৪; মুসলিম হা/২২৬২ (৯৭৮) ‘জানায়েয’ অধ্যায়-১১, অনুচ্ছেদ-৩৭; বুলূগুল মারাম হা/৫৪২।

[34] . ইবনু কাছীর, তাফসীর আনকাবুত ২৯/৪৫।

[35] . আহমাদ হা/৯৭৭৭; বায়হাক্বী-শু‘আব, মিশকাত হা/১২৩৭, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘রাত্রি জাগরণে উৎসাহ দান’ অনুচ্ছেদ-৩৩; মির‘আত ৪/২৩৫।

[36] . মুসলিম, মিশকাত হা/৫৬৪ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪।

[37] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৫৬৫।

[38] . আহমাদ হা/৬৫৭৬, ‘হাসান’; দারেমী হা/২৭২১, ‘ছহীহ’; মিশকাত হা/৫৭৮ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, আলবানী প্রথমে ‘জাইয়িদ’ ও পরবর্তীতে ‘যঈফ’ বলেছেন (তারাজু‘আত হা/২৯)।

[39] . ত্বাবারাণী, বায়হাক্বী; আলবানী, ছহীহুল জামে‘ হা/১৬৭১।

[40] . মুসলিম, মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৬২৪-২৫, ‘ছালাতের ফযীলতসমূহ’ অনুচ্ছেদ-৩।

[41] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৬২৬।

[42] . তিরমিযী, মিশকাত হা/৬৩৫।

[43] . মুসলিম, মিশকাত হা/৬২৭।

[44] . আহমাদ, আবুদাঊদ, মালেক, নাসাঈ, মিশকাত হা/৫৭০।

[45] . বুখারী হা/৬৫০২, ‘হৃদয় গলানো’ অধ্যায়-৮১, ‘নম্রতা‘ অনুচ্ছেদ-৩৮; মিশকাত হা/২২৬৬ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘আল্লাহর স্মরণ ও তাঁর নৈকট্যলাভ’ অনুচ্ছেদ-১।

[46] . মুসলিম, মিশকাত হা/৬৯৬, ‘মসজিদ ও ছালাতের স্থান সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৭।

[47] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৬৯৮।

[48] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৬৯৯।

[49] . আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/১০৬৬ ‘জামা‘আত ও উহার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-২৩।

[50] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৭০১, ‘মসজিদ ও ছালাতের স্থান সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৭।

[51] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৬৯২; ইবনু মাজাহ হা/১৪০৬; আহমাদ হা/১৪৭৩৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৮৩৮।

[52] . ইবনু মাজাহ হা/১৪১৩; ঐ, মিশকাত হা/৭৫২।

Leave a comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.