Gallery

কল্যাণকর কাজে প্রতিযোগিতার গুরুত্ব, তাৎপর্য ও তার ফযিলত!!


5bb47-magical_blue_backgroundshadobevelhcopy

কল্যাণকর কাজে প্রতিযোগিতার গুরুত্ব ও তাৎপর্য :
আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমানসম্পাদনা : ইকবাল
হোছাইন মাছুমনেক আমল, কল্যাণকর কাজ ও
সৎকর্মেঅগ্রগামী হওয়া, প্রতিযোগিতা করা
মহানআল্লাহর একটি নির্দেশ। ইসলামীজীবনের
একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।আল্লাহ রাব্বুল আলামীন
বলেন,‘সুতরাংতোমরা কল্যাণকর্মে প্রতিযোগিতা
কর।’ (সূরাবাকারা : ১৪৮)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন: ‘আর তোমরাদ্রুত
অগ্রসর হও তোমাদের রবের পক্ষথেকে
মাগফিরাত ও জান্নাতের দিকে, যার পরিধিআসমানসমূহ ও
যমীনের সমান, যা মুত্তাকীদেরজন্য প্রস্তুত করা
হয়েছে।’ (সূরা আলে ইমরান: ১৩৩)আল্লাহ তাআলা
আরো বলেন:”তোমাদেরকী হলো যে,
তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয়করছ না? অথচ
আসমানসমূহ ও পৃথিবীরউত্তরাধিকারতো আল্লাহরই?
তোমাদের মধ্যেযারা মক্কা বিজয়ের পূর্বে ব্যয়
করেছে এবংযুদ্ধ করেছে তারা সমান নয়। তারা
মর্যাদায় তাদেরচেয়ে শ্রেষ্ঠ, যারা পরে ব্যয়
করেছে ওযুদ্ধ করেছে। তবে আল্লাহ
প্রত্যেকেরজন্যই কল্যাণের ওয়াদা করেছেন।
আরতোমরা যা কর, সে সম্পর্কে আল্লাহ
সবিশেষঅবগত”। (সূরা হাদীদ:১০)উল্লেখিত
আয়াতসমূহ থেকে আমরা যা শিখতেপারি :১- প্রথম
আয়াতে আল্লাহ তাআলা ভাল কাজেপ্রতিযোগিতা
করতে আদেশ করেছেন।তিনি এখানে ‘খাইরাত’
শব্দটি বহুবচন ব্যবহারকরে সকল প্রকার ভাল
কাজকেবুঝিয়েছেন। সকল ভাল
কাজেইপ্রতিযোগিতার নির্দেশ দিয়েছেন।২-
দ্বিতীয় আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাঁর ক্ষমালাভের
যে সকল বিষয় আছে সে সকলবিষয় ও পন্থা-
পদ্ধতির দিকে দ্রুত অগ্রসরহওয়ার জন্য আদেশ
করেছেন। এমনিভাবেজান্নাত লাভের জন্য অগ্রসর
হতে আদেশকরেছেন।৩- তিনি জান্নাতের পরিধি
সম্পর্কেবলেছেন এটা আকাশমন্ডলী ও
পৃথিবীরসমান।৪- এ জান্নাত প্রস্তুত রাখা
হয়েছেমুত্তাকীদের জন্য। যারা সকল কাজ-
কর্মে,চিন্তা-ভাবনায় আল্লাহ-কে ভয় করে,
তাঁরনির্দেশনা মান্য করে জীবন পরিচালনা করে।৫-
সূরা আল হাদীদের দশ নং আয়াত থেকেআমরা
জানতে পারলাম, যারা মক্কা বিজয়েরপূর্বে আল্লাহর
পথে ব্যয় করেছে ওজিহাদ করেছে, আর যারা
মক্কা বিজয়েরপরে তা করেছে তারা মর্যাদার
ক্ষেত্রেআল্লাহ তাআলার কাছে সমান নয়। কারণ,
তারা ভালকাজের প্রতিযোগিতায় এগিয়ে গেছে।
হাদীস -১.আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে
বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,‘তোমরা সৎকাজে দ্রুত অগ্রসর হও।
শীঘ্রইঅন্ধকার রাতের মত ফেতনা দেখা দিবে।
তখনঅবস্থা এমন হবে যে, সকাল বেলা একজন
মানুষমুমিন থাকবে আর সন্ধ্যায় কাফের হয়ে যাবে।
আবার সন্ধ্যায় মুমিন থাকবে সকালে কাফের
হয়েযাবে। তারা পার্থিব সামান্য স্বার্থে নিজের
ধর্মবিক্রি করে দিবে।’ (বর্ণনায়, সহিহ মুসলিম)হাদীস
থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল :১- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামসৎকাজে দ্রুত অগ্রসর হতে
বলেছেন।সৎকাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হলে বিলম্ব
করাউচিৎ নয় কোনোভাবেই।২- সময় থাকতে
সময়ের মর্যাদা দেয়া ওসুযোগ থাকতে
সুযোগের সদ্ব্যবহারকরতে নির্দেশ দিয়েছেন।
কারণ ফেতনাশুরু হয়ে গেলে ভাল কাজের আর
সুযোগথাকে না। তাই সময় ও সুযোগ থাকতে
তাভালকাজে ব্যবহার করা উচিত।৩- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এহাদীসে ফেতনার একটি চিত্র
তুলেধরেছেন। অন্ধকার রাতের মত ফেতনাএতটা
ঘণীভূত হবে যে, একজন মানুষসকালে মুসলিম
থাকলে তার পক্ষে সন্ধ্যাপর্যন্ত ইসলাম নিয়ে
বেঁচে থাকাটা কঠিনহয়ে পড়বে।৪- ইসলাম
বিরোধী প্রচারণা ও তৎপরতা এতবেড়ে যাবে
যে, একজন মানুষ সন্ধ্যায়মুসলিম হয়েও সকালে
ইসলাম সম্পর্কেসন্দিহান হয়ে যাবে।৫- মানুষ সামান্য
অর্থ-বিত্ত, চাকুরী, ভিসা, পদ,প্রচারনা, রাজনৈতিক সুবিধা
পাওয়ার লোভেইসলামকে বিকিয়ে দিবে। অমুসলিম
শক্তিরসাথে দহরম-মহরম শুরু করবে।
ইসলামেরবিরুদ্ধে কথা বলতে আরম্ভ করবে।৬-
মানুষ এতটা বস্তু ও ভোগবাদী হয়েযাবে যে,
মুসলিম হয়েও সামান্য কিছুরবিনিময়ে ইসলামের
অনুশাসন ত্যাগ করবে।৭- ‘সকালে মুসিলম আর
বিকালে কাফের’ একথার অর্থ এটাও যে, মানুষ মুসলিম
পরিবারেজন্ম নেবে, মুসলিম নাম ধারণ করবে,
মুসলিমদেশে বসবাস করবে, মুসলিম হওয়ার
সামাজিকসুবিধা ভোগ করবে কিন্তু নিজেকে
মুসলিমহিসাবে পরিচয় দিতে কুন্ঠিত হবে।
ইসলামকেগুরুত্বহীন ভাবতে থাকবে।৮- একজন
মানুষ যেমন কোনো কিছুরবিনিময়ে নিজেকে
বিক্রি করে দিতে পারেনা। তেমনি কোনো কিছুর
বিনিময়েকখনো নিজের ধর্ম ইসলামকেও
বিক্রিকরে দিতে পারে না। ইসলাম বিক্রি করেদেয়ার
মানে হল, কিছু একটা পাওয়ার জন্যইসলামের
কোনো কিছুকে ত্যাগ করা।লোভে বা ভয়ে
ইসলামের কোনোঅনুশাসন ত্যাগ করা কিংবা ইসলাম ও
মুসলমানদেরস্বার্থ বিরোধী কাজ করা। এ কথা
সকলেরইজানা যে, কেউ বলে না আমি ইসলাম
বিক্রিকরে দেব। তারপরও সে এ সকল
পদ্ধতিতেইসলাম বিক্রি করে দেয়।হাদীস -২.আবু
সিরওয়া উকবা ইবনে হারিস রাদিয়াল্লাহু আনহুথেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মদীনায়নবী কারীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে আসরের
নামাজ আদায়করলাম। তিনি সালাম ফিরালেন। অতপর অতি
দ্রুতউঠে মানুষের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে তাঁর
স্ত্রীদেরকোনো একজনের ঘরের
দিকেগেলেন। উপস্থিত লোকেরা তাঁর এ
দ্রুততাদেখে ভীত ও শংকিত হয়ে গেল।
এরপরতিনি আবার তাদের কাছে বের
হয়েআসলেন। তিনি দেখতে
পেলেন,লোকেরা তার দ্রুততার কারণে
আশ্চর্যবোধ করছে। তখন তিনি বললেন,
‘আমারএক টুকরা সোনার কথা মনে পড়েগিয়েছে,
ওটা আমার কাছে আটকে থাকবেআমি তা পছন্দ করি
না। তাই সেটা বন্টন করেদেয়ার নির্দেশ দিয়ে
আসলাম।’বর্ণনায়: সহিহ বুখারীহাদীস থেকে শিক্ষা
ও মাসায়েল :১- নামাজের সালাম ফিরিয়ে
রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
সম্মিলিতভাবেমুনাজাত করেননি।২- জরুরী কাজ
থাকলে সালাম ফিরোনোরসাথে সাথে মসজিদ
থেকে বের হওয়া যায়।৩- নেককাজ দ্রুত
সম্পাদনের ক্ষেত্রেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম খুবইযত্নবান ছিলেন। নামাজের পর
মানুষের ঘাড়ডিঙ্গিয়ে তিনি সেটা সমাধা করার জন্য
ছুটেগেলেন। অথচ তিনি মানুষের ঘাড়
ডিঙ্গানোপছন্দ করতেন না।৪- সৎকাজের ইচ্ছা ও
সুযোগ আসার সাথেসাথে তা সম্পাদন করে ফেলা
উচিত। কারণ,পরে ভুলে যাওয়া হতে পারে, সমস্যা
সৃষ্টিহতে পারে, কোনো দিক থেকে
বাধাআসতে পারে কিংবা শয়তানের প্ররোচনারশিকার
হতে পারে।৫- ফরজ নামাজের পর
মুসল্লীদেরউদ্দেশ্যে দরস প্রদান বা শিক্ষা
মূলকআলোচনা করার বিষয়টি প্রমাণিত হল। এহাদীসে
আমরা দেখলাম রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
ঘর থেকেফিরে এসে দরস প্রদান করলেন।৬-
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামআমাদের মত
রক্ত মাংসের মানুষ ছিলেনবলেই তিনি বন্টনের
বিষয়টি ভুলেগিয়েছিলেন।৭- আমানত সংরক্ষণ ও তা
প্রকৃত অধিকারীদেরমধ্যে পৌঁছ দেয়ার
ব্যাপারে রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক
যত্নবানছিলেন।হাদীস -৩.জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু
থেকে বর্ণিত, উহুদযুদ্ধের দিন এক ব্যক্তি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলল,
আমি যদি নিহত হই,তাহলে আমি কোথায় থাকব?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
‘জান্নাতে।’ তখনসে তার হাতের খেজুরগুলো
নিক্ষেপ করল।অতপর লড়াই শুরু করে দিল। শেষ
পর্যন্ত সেনিহত হয়ে গেল। বর্ণনায়: বুখারী ও
মুসলিমহাদীস থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল :১- ইসলাম
ও মুসলমানদের শত্রুদের বিরুদ্ধেজিহাদ, লড়াই ও
সংগ্রাম করার ফজিলত প্রমাণিত হলএ হাদীসে।২- জিহাদ
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পূণ্যময়কাজ। এর মর্যাদা এত
বেশী যে, রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
জিহাদকেইসলামের শীর্ষ চূড়া বলে
আখ্যায়িতকরেছেন। তাইতো রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম উক্ত সাহাবীকে
জিহাদেঝাপিয়ে পড়ার জন্য উৎসাহ দিয়ে
বলেছেন,তুমি নিহত হলে জান্নাতই হবে তোমার
চিরন্তনঠিকানা।৩- সাহাবী জিহাদের এই পূণ্যময় কাজটি
সম্পাদনকরার জন্য এত উদগ্রীব হয়ে
পড়েছিলেনযে, হাতে রেখে খেতে
থাকাখেজুরগুলো শেষ করলেন না,
ফেলেদিলেন। জিহাদে অংশ নিতে দেরী
হয়েযাবে এই সামান্য দেরীটুকু বরদাশত
করতেরাজী ছিলেন না। এমনিভাবে
রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর
সাহাবায়েকেরাম ভাল কাজ করতে সামান্য
দেরীওকরতেন না। সংশয়-সন্দেহে পতিত হতেন
না।৪- আল্লাহর দীন ইসলাম-কে সবের্াচ্চশিখরে
প্রতিষ্ঠিত করার জন্য লড়াই সংগ্রাম করারনাম জিহাদ।
জিহাদের নিয়ত হতে হবে আল্লাহরদীনকে বুলন্দ
করা। তেমনি শহীদ হয়েজান্নাত লাভ করার নিয়তও
করতে হবে।যেমনটি করেছিলেন রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লামের এই সাহাবী।৫- ইলম
বা জ্ঞান অর্জনের জন্য সাহাবায়েকেরাম সর্বদা
সচেষ্ট থাকতেন। সুযোগপেলেই রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করে অজানা
বিষয়টিজেনে নিতেন।৬- ইলম অনুযায়ী আমল করার
বিষয়টি খুবইপ্রত্যক্ষভাবে ফুটে উঠেছে
এহাদীসে। আলোচিত সাহাবী যখনই ইলমঅর্জন
করলেন যে, জিহাদে নিহত হলেআমার স্থান হবে
জান্নাতে, তখনই তিনি তাসম্পন্ন করে নিলেন।
অর্জিত ইলম-কে নিজজীবনে বাস্তবায়িত
করলেন।হাদীস -৪.আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু
থেকে বর্ণিত, তিনিবলেন, এক ব্যক্তি নবী
কারীম সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে
জিজ্ঞেসকরল, কোন ধরনের দান-সদকায়
বেশী সওয়াবলাভ করা যায় ? তিনি বললেন, তোমার
এমন অবস্থায়সদকা করা যে তুমি সুস্থ, সম্পদের প্রতি
চাহিদাআছে, দরিদ্রতার ভয় করছ ও সচ্ছলতার আশা
করছ।আর এমনভাবে বিলম্ব করবে না যে, যখন
প্রাণওষ্ঠাগত হয়ে যাবে তখন বলবে এটা
অমুকেরজন্য, ওটা অমুকের জন্য। অথচ তা
অমুকেরজন্য নির্ধারিত হয়েই আছে।’বর্ণনায়:
বুখারী ও মুসলিমহাদীস থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল
:১- কোন অবস্থায় সদকা করলে বেশীসওয়াব,
হাদীসে সে প্রশ্নের উত্তরদেয়া হয়েছে।
সদকাকারী যখন সুস্থথাকবে, সম্পদের প্রতি চাহিদাও
রয়েছে,সদকা করলে দরিদ্রতার ভয়ও আছে,
এমনঅবস্থাসম্পন্ন ব্যক্তিদের দান-সদকা হলউত্তম
দান-সদকা। অতএব যে ব্যক্তি খুবধনী, যার দরিদ্রতার
ভয় নেই কিংবা মৃত্যমুখেপতিত সে ব্যক্তির সদকা
এমন মর্যাদারঅধিকারী নয়।২- সময় ও হায়াত থাকতে
সদকা করা উচিত।এমনিভাবে সকল প্রকার সৎকাজ
তাড়াতাড়ি সম্পন্নকরা উচিত। মৃত্যুর আগে আগে সব
ভাল কাজকরে, তওবা করে পাক-পবিত্র হয়ে
যাবোএমন আশা করে থাকা ঠিক নয়। আল্লাহ
রাব্বুলআলামীন বলেন,‘আর আমি তোমাদেরকে
যে রিযক দিয়েছি তাথেকে ব্যয় কর, তোমাদের
কারো মৃতু্যআসার পূর্বে। কেননা তখন সে
বলবে, হেআমার রব, যদি আপনি আমাকে আরো
কিছু কালপর্যন্ত অবকাশ দিতেন, তাহলে আমি
দান_সদকাকরতাম। আর সৎ লোকদের অন্তর্ভুক্ত
হতাম।’(সূরা মুনাফিকুন: ১০)৩- মৃত্যুকালে দান করলে
সেটা দান হয় না।সেটা হয় অসিয়ত। যা পুরো সম্পদে
কার্যকরহয় না কার্যকর হয় কেবলমাত্র তিন
ভাগেরএকভাগ সম্পদে তাও আবার
শর্তস্বাপেক্ষে। এর প্রতি ইঙ্গিত করেরাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামবলেছেন, ‘ সে বলে
এটা অমুককে দানকরলাম ওটা অমুকের জন্য দান
করলাম অথচ তাঅমুকের জন্য নির্ধারিত হয়েই
আছে।’৩- দান-সদকাসহ যে কোনো নেক কাজ
ওসৎকর্মে অলসতা পরিহার করতে হবে।হাদীস
-৫.আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উহুদ যুদ্ধের
দিনএকটি তরবারি হাতে নিয়ে বললেন, ‘কে আমারকাছ
থেকে এ তরবারিটি গ্রহণ করবে।’ তখনসকলেই
আমি আমি বলে হাত বাড়াল তা গ্রহণ করারজন্য। এরপর
তিনি বললেন, ‘কে এর হকযথাযথভাবে আদায় করার
জন্য গ্রহণ করবে?’ একথা শুনে সব লোক
থেমে গেল। আর আবুদুজানা রাদিয়াল্লাহু আনহু
বললেন, ‘আমি এর হকআদায় করার জন্য গ্রহণ করব।’
অতপর তিনি সেটাগ্রহণ করলেন ও মুশরিকদের
শিরোচ্ছেদকরলেন। বর্ণনায়: সহিহ মুসলিমশিক্ষা ও
মাসায়েল :১- জিহাদ করার প্রতি সাহাবায়ে
কেরামেরআগ্রহ থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি।
তাদের সকলেই একটি সৎকাজ সম্পাদনেরজন্য
তরবারি গ্রহণ করতে আগ্রহ প্রকাশকরেছেন।
কেউ দেরী করেননি।কেউ বিরত থাকেননি।২-
সাহাবী আবু দুজানার ফজিলত প্রমাণিতহয়েছে। যখন
সকলে চুপ হয়ে গেলেনতখন তিনি সাহসিকতার
প্রমাণ দিলেন। আবু দুজানাতার উপনাম। আসল নাম হল
ছিমাক ইবনে খারছাহ।হাদীস -৬.আবু যুবায়ের ইবনে
আদী থেকে বর্ণিত, তিনিবলেন, আমরা আনাস
ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহুআনহুর কাছে আসলাম।
এসে তখনকার শাসকহাজ্জাজ ইবনে ইউসুফের পক্ষ
থেকে যেসকল নির্যাতন ভোগ করছিলাম সে
সম্পর্কেনালিশ জানালাম। তিনি বললেন, ‘তোমরা ধৈর্য
ধারণকরো। কারণ যে যুগই আসে তার পরবর্তী
যুগএরচেয়ে খারাপ হয়ে থাকে। এ অবস্থা
চলবেতোমাদের প্রভুর সাথে তোমাদের
সাক্ষাতহওয়া পর্যন্ত। আমি এ কথা তোমাদের
নবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে
শুনেছি।’বর্ণনায়: সহিহ বুখারীহাদীস থেকে শিক্ষা
ও মাসায়েল :১- বিপদ মুসীবতে বা কারো দ্বারা
নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হলে বড়দের
কাছেঅভিযোগ করা দোষের কিছু নয়। যেমন
এহাদীসে আমরা দেখলাম সাহাবী আনাসেরকাছে
অনেকে অভিযোগ করতেএসেছেন।২- আনাস
রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদের ধৈর্য ধারণেরউপদেশ
দিয়েছেন। ধৈর্য ধারণ একটি সৎকাজ।তিনি এ কাজে
অন্যদের উদ্বুদ্ধ করেছেন।অন্যকে ধৈর্যের
প্রতি উৎসাহ দেয়া এমনএকটি গুণ যার প্রশংসা আল্লাহ
তাআলাকরেছেন। যেমন সূরা আল আসরে
তিনিবলেছেন,‘তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে,
সৎকাজকরেছে, পরস্পরকে সত্যের
উপদেশদিয়েছে এবং পরস্পরকে ধৈর্যের
উপদেশদিয়েছে। ‘ (সূরা আসর:৩)আবার সূরা আল
বালাদে বলেছেন,অতঃপর সে তাদের অন্তর্ভুক্ত
হয়ে যায়, যারাঈমান এনেছে এবং পরস্পরকে
উপদেশ দেয়ধৈর্যধারণের, আর উপদেশ
দেয়দয়া_অনুগ্রহের।’ (সূরা আল বালাদ, আয়াত ১০)৩-
শাসক শ্রেণীর নির্যাতন নিপীড়নেরমুখে ধৈর্য
অবলম্বন করার নির্দেশএসেছে বহু হাদীসে।
কোনোঅবস্থাতে তাদের জুলুম
অত্যাচারেরবিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা বা অস্ত্র ধারণ
করাজায়েয হবে না।হাদীস -৭.আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু
আনহু থেকে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামবলেছেন, ‘তোমরা সাত বিষয় আসারপূর্বেই
কাজ সম্পাদন করে ফেল। তোমরাতো কেবল
অপেক্ষা করছ এমন দারিদ্রেরযা আল্লাহকে
ভুলিয়ে দেয় ? অথবা এমন ধন-সম্পদের যা আল্লাহর
বিরোধিতার দিকেনিয়ে যায় ? অথবা এমন অসুস্থতার
যাশরীরকে শেষ করে দেয় ? অথবা
এমনবার্ধ্যক্যের যা বিবেক-বুদ্ধিকে শেষ
করেদেয়? অথবা দাফন কাফন সম্পন্ন মৃত্যুর?
অথবাদাজ্জালের আত্মপ্রকাশ করার, খুবই
নিকৃষ্টঅদৃশ্য যার অপেক্ষা করা হচ্ছে?
অথবাকয়ামতের? আর কেয়ামততো ভীষণভয়ানক
ও তিক্ত।’বর্ণনায়: তিরমিজী, তিনি বলেছেন,
হাদীসটিহাসান।বিশেষ জ্ঞাতব্য : প্রখ্যাত মুহাদ্দিস
আলবানীরহ. হাদীসটিকে দুর্বল বলেছেন।
এরদুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য সম-অর্থের
অন্যকোনো হাদীসও নেই। সিলসিলাতুলআহাদীস
আদ দায়ীফা গ্রন্থের ১৬৬৬নম্বর হাদীস
দ্রষ্টব্য।হাদীস -৮.আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু
থেকে বর্ণিত,খায়বর অভিযানের দিন রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘এ পতাকা
এমনএকজনকে প্রদান করব, যে আল্লাহ ও
তাঁররাসূলকে ভালবাসে। আল্লাহ তাআলা তার হাতেবিজয়
দান করবেন।’ উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুবলেন, আমি
একমাত্র এদিনই নেতৃত্ব কামনাকরেছি, এছাড়া আর
কোনো দিন আমিনেতৃত্ব পছন্দ করিনি। আমি মাথা
উচু করেদাড়ালাম যেন আমাকে ডাকা হয়।
রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী
রাদিয়াল্লাহুআনহুকে ডেকে পতাকা দিয়ে
বললেন,‘চলতে থাকো, এদিক সেদিক তাকাবে না।
যতক্ষণ না আল্লাহ তোমার হাতে বিজয় দানকরেন।’
আলী একটু চললেন, তারপরদাড়ালেন, কিন্তু
কোনো দিক তাকালেন না।তিনি চিৎকার করে
জিজ্ঞেস করলেন, ইয়ারাসূলাল্লাহ! কিসের উপর
লোকদের সাথেলড়াই করব। তিনি বললেন, ‘তাদের
সাথে লড়াইকরবে যতক্ষণ না তারা এ কথার স্বাক্ষ্য
দেয়যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ
নেইএবং মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল। তারা যখন এস্বাক্ষ্য
দেবে তখন তোমার হাত থেকেতাদের প্রাণ ও
সম্পদ রক্ষা করতে পারবে।তবে তাদের
সম্পদের ইসলামের হকতাদের থেকে আদায় করা
হবে ও তার হিসাবআল্লাহর দায়িত্বে।’বর্ণনায়: সহিহ
মুসলিমহাদীস থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল :১-
যুদ্ধের ময়দানে পতাকা বহন করা একটিসুন্নত। যিনি
অভিযান পরিচালনা করেন মূলত তারকাছেই পতাকা থাকত।
২- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনপতাকা
প্রদানের কথা বললেন তখন উমররাদিয়াল্লাহু আনহু তা
পাওয়ার আশা করলেন। এদ্বারা আমরা বুঝতে পারলাম
যে, সাহাবায়েকেরাম নেককাজ করার ক্ষেত্রে
সর্বদাঅগ্রগামী ও উৎসাহী ছিলেন।শিরোনামের
সাথে এ হাদীসটির সম্পর্কএখানেই।৩- নেতৃত্ব
গ্রহণের লোভ করা ঠিক নয়।যেমন আমরা এ
হাদীসে উমর রাদিয়াল্লাহুআনহুর বক্তব্য দ্বারা
বুঝতে পারলাম। এ ছাড়ারাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামস্পষ্টভাবে কতর্ৃত্ব করার লোভ
ওনেতৃত্বের প্রার্থী হতে নিষেধকরেছেন।
৪- নিজের দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কেকোনো
বিষয় বুঝে না আসলে তাজিজ্ঞেস করে জেনে
নিতে হয়। যেমনআলী রাদিয়াল্লাহু আনহু জিজ্ঞেস
করলেন,আমি কিসের উপর তাদের সাথে লড়াই
করব।৫- আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর ফজিলত প্রমাণিতহল
এ হাদীসে।৬- তাওহীদ প্রতিষ্ঠার জন্য জিহাদ
করারনির্দেশ দিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহিওয়াসাল্লাম। এ হাদীস দ্বারা তাওহীদেরগুরুত্ব
অনুধাবন করা যায়।৭- সাহাবায়ে কেরাম কত যত্নের
সাথেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামেরনির্দেশ পালন করেছেন তার একটি
প্রকৃষ্টদৃষ্টান্ত এ হাদীস। তিনি আলী
রাদিয়াল্লাহুআনহুকে এদিক ওদিক তাকাতে
নিষেধকরেছেন। এ নির্দেশ এমনভাবে
পালনকরেছেন যে, প্রশ্ন করার সময়প্রয়োজন
হওয়া সত্ত্বেও অন্য দিকেতাকাননি। বরং চিৎকার করে
প্রশ্ন করেছেন,যেন এর জন্য কোনো দিকে
তাকাতে নাহয়।৮- কেউ তাওহীদ ও রিসালাতের
স্বাক্ষ্যপ্রদান করলে তার জান ও মাল হেফাজত
করারদায়িত্ব সকল মুসলমানের। কোনোমুসলমানের
পক্ষ থেকে তার প্রাণ ওসম্পদের প্রতি
কোনো হুমকি আসতেপারে না।৮- ইসলামের
কোনো হক বা অধিকারব্যতীত তার সম্পদের
কোনো কিছু গ্রহণকরা যাবে না।৯- আর সে যদি
প্রকাশ্যে ইসলামেরঘোষণা দিয়ে মনে মনে
কুফর-শিরক লালনকরে, তবে তার হিসাব আল্লাহর
দায়িত্বেথাকবে। মানুষের কাজ নয় তার ইসলাম
গ্রহণনিয়ে সন্দেহ করা, তার
মুসলমানিত্বকেপ্রশ্নবিদ্ধ করা বা তার ইসলাম সঠিক নয়
বলেপ্রত্যাখ্যান করা।বি; দ্র: হাদীসগুলো ইমাম
নববী রাহিমাহুল্লাহসংকলিত রিয়াদুস সালেহীন গ্রন্থ
থেকেসংগৃহিত।সমাপ্ত

Leave a comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.