গান বাজনার কু প্রভাব:


গান বাজনা, নাটক সিনেমার অশ্লীল
সংস্কৃতি বর্তমান তরুণ তরুণীদের চরিত্র নষ্টের প্রধান কারণ। মূর্তি পূজারী, কাফের, মুশরেক নারী-পুরুষেরা টিভি পর্দায় অশ্লীল কাজে লিপ্ত আর মুসলিমরা এইসব দেখে…
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“লজ্জা শরম না থাকলে যা ইচ্ছা তা করো।”
এইসমস্ত বেহায়া সংস্কৃতির জোয়ারে মুসলিম
নামাযী ভাই-বোনেরাই লজ্জা শরম
ভুলে বিপথগামী হচ্ছে। আজকাল শতকরা খুব খুব কম ভাইদের ঈমান, আকীদা ঠিক আছে, নামায রোযাকে ভুলতে বসেছে,
তাদেরকে দেখলে চেনা মুশকিল কে HINDU,
আর কে MUSLIM. অধিকাংশ নারীই বেপর্দা,
২-১ জন যাও পর্দা করে তাদের হিজাবের
অবস্থা বড়ই করুণ। আধুনিকতার নামে,
নারী অধিকার ও নারীর ক্ষমতায়নের
নামে নারীদেরকে বিকৃত পুরুষতান্ত্রিক সমাজের
“দাসীতে” পরিণত করা হচ্ছে। আল্লাহ
আমাদেরকে হেফাজত করুন, আমিন।: ইসলামের দৃষ্টিতে গান-
বাজনা :____________
মিউজিক বা গান-বাজনার
প্রতি আসক্তি মুসলিম যুব সমাজের অধঃপতনের
অন্যতম কারণ।
মিউজিক মানুষকে অলস, কর্ম বিমুখ ও আরাম
প্রিয় করে তোলে । প্রত্যয়, দৃঢ়তা ও চ্যালেঞ্জ
মোকাবেলার আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরায় ।
মানুষকে অশ্লীলতা ও চরিত্রহীনতার দিকে পথ
প্রদর্শন করে । মানুষ সুরের মূর্ছনায় দুনিয়া ও
আখেরাত থেকে গাফেল হয়ে যায় । গান-বাজনায়
অভ্যস্ত ব্যক্তিদের অন্তর চেতনা শূন্য
পাথরে পরিণত হয় । ফলে ইসলামী আলোচনা ও
ইবাদতের প্রতি সৃষ্টি হয় চরম অনীহা ।
এভাবে আস্তে আস্তে তারা পৃথিবীতে আগমনের
মূল উদ্দেশ্যকে ভুলে পার্থিব ভোগ-বিলাসের
গড্ডালিকায় গা ভাসিয়ে দেয় । আল্লাহ্র
গোলামির শৃঙ্খল থেকে নিজেদেরকে মুক্ত
করে খাটি শয়তানের গোলামে পরিণত হয় ।
কোরআন-সুন্নাহর দলীলের ভিত্তিতে চার
ইমাম গান-বাজনা হারাম হওয়ার
ব্যপারে ঐক্যমত পোষণ করেছেন ।
———————————————
————————–
ইবনে তাইমিয়া (রঃ) বলেন, চার ইমাম গান-
বাজনা হারাম হওয়ার ব্যপারে একমত।
—(মাজমুয়াতুল ফাতওয়া)
আলবানী (রঃ) বলেন, চার মাজহাব গান-
বাজনা হারাম হওয়ার ব্যপারে একমত ।
—(সিলসিলাতুস সাহিহাহ )
*****************কোরআনের
ভাষ্যঃ****************
(১) “””আর মানুষের মধ্যে থেকে কেউ কেউ
না জেনে আল্লাহ্র পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত
করার জন্য অসার বাক্য ক্রয় করে । আর
তারা এগুলোকে হাসি ঠাট্টা হিসাবে গ্রহণ
করে । তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর আজাব
।””” ( লোকমান-৬ )
অসার বাক্য এর ব্যাখ্যায় আব্দুল্লাহ
ইবনে মাসউদ (রাঃ) তিন বার কসম করে বলেন,
এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল গান-বাজনা ও রাগ-
রাগিণী ।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ), জাবির (রাঃ),
ইকরামা (রাঃ), সাইদ ইবনে জুবায়ের (রাঃ),
মুজাহিদ (রাঃ), মাকহুল (রাঃ), আমর
ইবনে শুয়াইব (রাঃ) প্রমুখ গুরুজনদের এটাই
উক্তি ।
হাসান বসরী (রঃ) বলেন, গান-বাজনা, রঙ-
তামাসা ইত্যাদির ব্যপারে এ আয়াতটি অবতীর্ণ
হয়েছে । ( তাফসিরে ইবনে কাসীর )
(২) “””তোমার (শয়তান) কণ্ঠ দিয়ে তাদের
মধ্যে যাকে পার প্ররোচিত কর
।””” (বনী ইসরাইল-৬৪)
ইবনে কাসীর, ইবনে জারীর, ইমাম কুরতুবী প্রমুখ
তাফসীরকার মুজাহিদ (রাঃ) এর বরাত
দিয়ে বলেন, “”শয়তানের কণ্ঠ বলতে গান-
বাজনা বুঝানো হয়েছে । এ আয়াত গান-
বাজনা হারাম হওয়ার প্রমাণ বহন করে ।””
(৩) “””আর যারা মিথ্যা সাক্ষী দেয় না ।
এবং যখন তারা অনর্থক কথা-কর্মের পাশ
দিয়ে চলে তখন সসম্মানে চলে যায়
।””” ( ফোরকান- ৭২)
প্রসিদ্ধ তাফসীর অনুযায়ী ﻻ ﻳﺸﻬﺪﻭﻥ ﺍﻟﺰﻭﺭ
অর্থ যারা মিথ্যা সাক্ষী দেয় না । এ আয়াতের
অন্য একটি তাফসীর হল, “যারা গান-বাজনায়
শরিক হয় না ।” ইবনে জারীর ও ইমাম
কুরতুবী মুজাহিদ (রাঃ) এর বরাত দিয়ে বলেন, ﻻ
ﻳﺸﻬﺪﻭﻥ ﺍﻟﺰﻭﺭ অর্থ ﻻ ﻳﺴﻤﻌﻮﻥ ﺍﻟﻐﻨﺎﺀ
তথা যারা গান-বাজনা শুনে না ।
ইবনে কাসীর মুহাম্মাদ বিন হানাফিয়ার বরাত
দিয়ে বলেন, ﺍﻟﺰﻭﺭ অর্থ ﺍﻟﻐﻨﺎﺀ তথা গান ।
(৪) ﻭ ﺃﻧﺘﻢ ﺳﺎﻣﺪﻭﻥ .
“””আর তোমরা তো গাফিল ।””” ( নাজম-৬১)
ইবনে জারীর আব্বাস (রাঃ) এর বরাত
দিয়ে বলেন, ﺳﻤﻮﺩ অর্থ ﺍﻟﻐﻨﺎﺀ তথা গান-
বাজনা ।
মানুষ যখন গান-বাজনা শুনায় অভ্যস্ত হয় তখন
সে গাফেল হয়ে যায় ।
*****************হাদীসের
ভাষ্যঃ****************
(১) আমার উম্মতের মাঝে অবশ্যই এমন
কতগুলো দল সৃষ্টি হবে । যারা ব্যভিচার,
রেশমি কাপড়, মদ ও বাদ্য যন্ত্রকে হালাল
জ্ঞান করবে । (বুখারী )
ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রঃ) বলেন, এই হাদীস
বাদ্য-বাজনা হারাম হওয়াকে সাব্যস্ত করে ।
(মাজমুয়াতুল ফাতওয়া)
(২) রাসুল (সাঃ) বলেনঃ ভূমিধ্বস,
চেহারা বিকৃতি এবং পাথর বর্ষণের আজাব এ
উম্মতের মাঝে ঘনিয়ে আসবে । জনৈক মুসলিম
ব্যক্তি প্রশ্ন করল, হে আল্লাহ্র রাসুল ! কখন
এ আজাব সংগঠিত হবে ? তিনি বললেনঃ যখন
গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্র বিস্তৃতি লাভ
করবে এবং মদ্যপানের সয়লাব শুরু হবে ।
( তিরমিযী, হাসান-সহিহ )
(৩) দুনিয়া ও আখেরাতে দুটি অভিশপ্ত আওয়াজ
রয়েছে । সুখের সময় বাঁশির আওয়াজ ও বিপদের
সময় বিলাপ করে কান্নার আওয়াজ ।
( জামে আস-সাগীর, বাযযার,
আলবানী হাদিসটিকে হাসান বলেছেন । )
(৪) জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত,
রাসুল (সাঃ) আব্দুর রহমান ইবনে আওফ (রাঃ)
এর হাত ধরে তাকে নিয়ে স্বীয় পুত্র ইব্রাহীম
(রাঃ) এর নিকটে গেলেন । তাকে তিনি মুমূর্ষূ
অবস্থায় দেখতে পেলেন । রাসুল (সাঃ)
তাকে কোলে তুলে নিলেন । এমতাবস্থায়
সে মারা গেল । তিনি তাকে রেখে দিলেন
এবং কাঁদলেন । আব্দুর রহমান ইবনে আওফ
(রাঃ) তাঁকে বললেন, আপনিও কাঁদছেন ?
আপনে কি কান্না করতে বারণ করেন নি ?
তিনি বললেনঃ না, বরং আমি দুইটি নির্বোধ
সুলভ ও পাপাচার মূলক আওয়াজ নিষেধ করেছি ।
সুখের সময় বাদ্য-বাজনার আওয়াজ, শয়তানের
বাঁশির আওয়াজ । বিপদের সময় চিৎকার করা,
মুখমণ্ডলে আঘাত করা এবং জামার সম্মুখ ভাগ
ছিড়ে ফেলা । ( ইমাম তিরমিযী ও
আলবানী হাদিসটিকে হাসান বলেছে । )
সালফে সালেহীনদের ভাষ্যঃ
(১) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, গান
অন্তরে মোনাফেকির জন্ম দেয়, যেরূপ
ভাবে পানি শস্যকে জন্ম দেয় । ( আবু দাউদ,
জামে আস-সাগীর)
(২) নাফে (রাঃ) বলেন, একদা ইবনে উমর (রাঃ)
বাঁশির আওয়াজ শুনতে পেয়ে তাঁর দুই আঙ্গুল দুই
কানে প্রবেশ করান
এবং রাস্তা থেকে দূরে সরে যান । এরপর
তিনি আমাকে বললেন, হে নাফে ! তুমি কি কিছু
শুনতে পাচ্ছ ? আমি বললাম, না । তিনি কান
থেকে দুই আঙ্গুল
সরিয়ে বললেনঃ আমি একদা নবী (সাঃ) এর
সাথে ছিলাম । তিনি এরূপ আওয়াজ
শুনতে পেলেন এবং এমনই আচরণ করলেন।
( আবু দাউদ )
(৩) উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রাঃ) তাঁর ভাইয়ের
গৃহে এক গায়ককে দেখলেন, যে গান গাচ্ছিল ।
গানের তালে তালে তার মাথা দুলছিল । (অন্য
বর্ণনায়) সে ছিল লম্বা চুল বিশিষ্ট ।
আয়েশা (রাঃ) (বিরক্ত হয়ে) বললেনঃ উফ!
একে বেড়করে দাও, একে বেড়করে দাও ।
( সিলসিলাতুস সাহিহাহ, সহিহ আদাবুল
মুফরাদ )
(৪) আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) এক ছোট
মেয়ের পাশ দিয়ে গেলেন । যে মেয়েটি গান
গাচ্ছিল । তিনি বললেনঃ শয়তান
যদি কাওকে ছেড়ে গিয়ে থাকে তবে এই
মেয়েটিকেই ছেড়ে গেছে । (সহিহ আদাবুল
মুফরাদ )
হে আল্লাহ্ ! আমাদের সকলকে গান-
বাজনা শুনা থেকে হেফাজত করুন ।
আমীন

Leave a comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.