দাত পরিষ্কার করার আদবঃ


দাত পরিষ্কার করার আদবঃ
প্রত্যেক ওযূর আগে, ওযূ না করলেও নামাযের আগে, কুরআন তিলাওয়াতের আগে, ঘুম থেকে জেগে উঠে, বাইরে থেকে স্বগৃহে প্রবেশ করে, মুখ দুর্গন্ধময় অথবা দাঁত হলুদবর্ণ হলে দাঁতন করা সুন্নাত।
প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন, ‘‘আমি উম্মতের জন্য কষ্টকর না জানলে এশার নামাযকে দেরী করে পড়তে এবং প্রত্যেক নামাযের সময় দাঁতন করতে আদেশ দিতাম।’’[1]
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমি আমার উম্মতের পক্ষে কষ্টকর না জানলে (প্রত্যেক) ওযুর সাথে দাঁতন করা ফরয করতাম এবং এশার নামায অর্ধেক রাত পর্যন্ত দেরী করে পড়তাম।’’[2]
তাই সাহাবী যায়েদ বিন খালেদ জুহানী (রাঃ) মসজিদে নামায পড়তে হাজির হতেন, আর তাঁর দাঁতনকে কলমের মত তাঁর কানে গুঁজে রাখতেন। নামাযে দাঁড়াবার সময় তিনি দাঁতন করে পুনরায় কানে গুঁজে নিতেন।[3]

মুসলিমের প্রকৃতিগত কর্মসমূহের একটি হল, মিসওয়াক করে মুখ সাফ করা।[4]
বিশেষ করে জুমআর দিন গোসল ও দাঁতন করা এবং আতর ব্যবহার করা কর্তব্য।[5]
মহানবী (সাঃ) বলেন, ‘‘জিবরীল (আঃ) আমাকে (এত বেশী) দাঁতন করতে আদেশ করেছেন, যাতে আমি আমার দাঁত ঝরে যাওয়ার আশঙ্কা করছি।’’[6] অন্য এক বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘‘—এতে আমার ভয় হয় যে, দাঁতন করা আমার উপর ফরয করে দেওয়া হবে।’’[7]
বাড়িতে প্রবেশ করা মাত্র তিনি প্রথম যে কাজ করতেন, তা হল দাঁতন।[8] তাহাজ্জুদ পড়তে উঠলেই তিনি দাঁতন করে দাঁত মাজতেন।[9] আবার রাত্রের অন্যান্য সময়েও যখন জেগে উঠতেন, তখন মিসওয়াক করতেন।[10] আর এই জন্যই রাত্রে শোবার সময় শিথানে দাঁতন রেখে নিতেন।[11]
তিনি বলেন, ‘‘দাঁতন করায় রয়েছে মুখের পবিত্রতা এবং প্রতিপালক আল্লাহর সন্তুষ্টি। [12]
একদা হযরত আলী (রাঃ) দাঁতন আনতে আদেশ করে বললেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ‘‘বান্দা যখন নামায পড়তে দণ্ডায়মান হয় তখন ফিরিশ্তা তার পিছনে দণ্ডায়মান হয়ে তার ক্বিরাআত শুনতে থাকেন। ফিরিশ্তা তার নিকটবর্তী হন; পরিশেষে তিনি নিজ মুখ তার (বান্দার) মুখে মিলিয়ে দেন! ফলে তার মুখ হতে কুরআনের যেটুকুই অংশ বের হয় সেটুকু অংশই ফিরিশ্তার পেটে প্রবেশ করে যায়। সুতরাং কুরআনের জন্য তোমরা তোমাদের মুখকে পবিত্র কর।’’[13]
তিনি বলেন, ‘‘মিসওয়াক করে তোমরা তোমাদের মুখকে পবিত্র কর। কারণ, মুখ হল কুরআনের পথ।’’[14]
১। দাঁতন করা বিধেয় দিবারাত্রির যে কোন সময়। এমনকি রোযার দিনেও সকালে-বিকালে যে কোন সময় দাঁতন করা বিধেয়।
২। একটি দাঁতন স্বামী-স্ত্রী উভয়ে ব্যবহার করতে পারে।
 হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘নবী (সাঃ) মিসওয়াক করে আমাকে তা ধুতে দিতেন। কিন্তু ধোয়ার আগে আমি মিসওয়াক করে নিতাম। তারপর তা ধুয়ে তাঁকে দিতাম।’[15]
তাঁর নিকট মিসওয়াকের এত গুরুত্ব ছিল যে, তিরোধানের পূর্ব মুহূর্তেও তিনি হযরত আয়েশার দাঁতে চিবিয়ে নরম করে নিজে দাঁতন করেছেন।[16]
৩। দাঁতন করুন ভিজে বা শুকনা গাছের ডাল বা শিকড় দিয়ে। তিনি আরাক (পিল্লু) গাছের (ডাল বা শিকড়ের) দাঁতন করতেন।[17]
আঙ্গুল দ্বারা দাঁত মাজা যায়। তবে এটা সুন্নাত কি না বা এতেও ঐ সওয়াব অর্জন হবে কি না, সে ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীস মিলে না। হাফেয ইবনে হাজার (রঃ) তালখীসে (১/৭০) এ সম্পর্কে কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করার পর বলেন, ‘এগুলির চেয়ে মুসনাদে আহমাদে আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসটি অধিকতর সহীহ।’ কিন্তু সে হাদীসটিরও সনদ যয়ীফ।[18]
৪। আপনার ডান চোয়ালের দাঁত থেকে দাঁতন ঘষতে শুরু করুন। এটাই হল সুন্নাত।
৫। দাঁতন করার সময় কোন দু‘আ নেই। দাঁতন আধ হাতের বেশী লম্বা হলে তার উপর শয়তান চাপে ধারণা অমূলক।
হেঁটে হেঁটে দাঁতন করলে পরিবারে ও জীবনে অশান্তি নেমে আসে ধারণা করা একটি বিদআত।