প্রত্তেক মুসলিম কি জান্নাতে প্রবেশ করবে? এমনকি যদি সে মুনাফিক হয় অথবা ছলাত্ আদায় না করে অথবা শিরক করে?


প্রত্যেক মুসলিম কি জান্নাতে প্রবেশ
করবে, এমন কি যদি সে মুনাফিক হয় অথবা
ছ্বালাত আদায় না করে অথবা শিরক করে?
JANNAT (9)
মুনাফিক অথবা ছ্বালাত আদায় করে না অথবা শিরক করে
তারা সহ সমস্ত মুসলিম কি কিছু সময় জাহান্নামে
অবস্থানের পর জান্নাতে প্রবেশ করবে?
সমস্ত প্রসংশা আল্লাহর
জান্নাতে প্রবেশ এবং জাহান্নামে অনন্তকাল অবস্থান
করার বিষয়ে সাধারণ নীতি সমন্ধে আমাদের
সঠিকভাবে জানা উচিত। ইহা একটি সহজ বিষয় যা একটি
সংক্ষিপ্ত হাদীছে ব্যাখ্যা করা হয়, জাবির(আল্লাহ তাঁর
উপর সন্তুষ্ট হউন) থেকে মুসলিম তার সহিহ
গ্রন্থে(১৩৫) এটি বর্ণনা করেন। তিনি বলেনঃ
একজন ব্যক্তি নাবী(সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া
সাল্লাম)এর নিকট আসলেন এবং বললেন, হে
আল্লাহর রাসুল দু’টি কাজ কি যা জান্নাতে অথবা
জাহান্নামে প্রবেশকে অব্যশম্ভাবী করে?
তিনি বললেনঃ ‘যেকেউ আল্লাহতায়ালার সাথে
কোনো কিছুকে শিরক না করে মৃতু বরণ করে
সে জান্নাতে যাবে।এবং যে আল্লাহতায়ালার সাথে
কোনো কিছুকে শিরক করে মৃতু বরণ করে সে
জাহান্নামে যাবে।’
আন-নাওয়ায়ী বলেনঃ এই বাক্য সমন্ধে, ‘ দু’টি কাজ
কি যা জান্নাতে অথবা জাহান্নামে প্রবেশকে
অব্যশম্ভাবী করে? ’ এখানে ঐ চরিত্রকে
বোঝানো হয়েছে যা জান্নাতকে অনিবার্য করে
এবং ঐ চরিত্র যা জাহান্নামকে অনিবার্য করে।
এই হাদীছ বর্ণনা করে যে, কি ইহাকে
অব্যশম্ভাবী করে যে যদি একজন ব্যক্তি
তাওহীদে বিশ্বাস করে মৃতু বরণ করে তাহলে
সে জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং কি ইহাকে
অব্যশম্ভাবী করে যে যদি একজন ব্যক্তি শিরকে
বিশ্বাস করে মৃতু বরণ করে তাহলে সে অনন্তকাল
জাহান্নামে অবস্থান করবে।
এটি একটি সুনিদিষ্ট নীতি যা ইসলাম ধর্মে সুপরিচিত এবং
ভালভাবে প্রতিষ্ঠিত। মুতাওয়াতির পাঠ্যগুলি যা ইহাকে
সমর্থন করে ও স্বীকৃতি প্রদান করে। আল্লাহ,
তিনি মর্যাদাবান বলেছেন (অর্থের ব্যাখ্যা)
“নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে
লোক তাঁর সাথে শরীক করে। তিনি ক্ষমা করেন
এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন।
আর যে লোক অংশীদার সাব্যস্ত করলো
আল্লাহর সাথে, সে যেন অপবাদ আরোপ
করলো।(আন-নিসা-৪/৪৮)
নাবী (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম) হাদীছে
বর্ণনা করেছেন, মধ্যস্থতা, জাহান্নামে পাপীদের
অবস্থা সম্পর্কে এবং তিনি বর্ণনা করেছেন যে,
যারা তাওহীদে বিশ্বাস রেখে মৃতু বরণ করে এবং
শাহাদা উচ্চারন করে (ঈমানের সাক্ষ্য) এবং যাদের
অন্তরে কিছু ঈমান আছে তারা ব্যতিত কাউকে
জাহান্নাম থেকে বের করা হবে নাঃ “যে ব্যক্তি ‘লা
ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ছারা অন্য কোনো উপাস্য
নেই) বলেছে এবং তার হৃদয়ে একটি যবের দানার
ওযন পরিমান কল্যান (ঈমান) আছে, তাকেও জাহান্নাম
থেকে বের করা হবে। তারপর তাদেরকেও
জাহান্নাম থেকে বের করা হবে, যারা ‘লা ইলাহা
ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ছারা অন্য কোনো উপাস্য
নেই) বলেছে এবং তার হৃদয়ে একটি গমের দানার
ওযন পরিমান কল্যান (ঈমান) আছে। তারপর
তাদেরকেও জাহান্নাম থেকে বের করা হবে, যারা
‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ছারা অন্য কোনো
উপাস্য নেই) বলেছে এবং যার হৃদয়ে অনু পরিমান
মাত্র কল্যান (ঈমান) আছে।’’
বর্ণনা করেছেন আল-বুখারী-৬৮৬১;মুসলিম-২৮৫
এটার উপর ভিত্তি করে, প্রশ্নে যাদের কথা
উল্লেখ আছে তাদের অবস্থান আমরা খুজে পাই।
এক
যদি কোনো ব্যক্তি বড় শিরক করে,
প্রকৃতপক্ষেই সে একজন মুশরিক হোক
যেমনঃইহুদী,খৃষ্টান,বৌদ্ধ এবং অন্যান্য ধরনের
অবিশ্বাসী অথবা বড় শিরক করে ইসলাম ধম ত্যাগী
কোনো মুসলিম হোক যা প্রশ্নে উল্লেখ করা
হয়েছে।অতঃপর ইসলামে অন্তভুক্তিতে তার দাবী
অথবা তার মুসলিম নাম তার কোনো উপকারে
আসবে না।যদি সে বড় শিরক করে এবং তওবা
(অনুশোচনা)না করে ঐ অবস্থায় মৃতু বরণ করে
তাহলে তার কোনো ভালো কাজ যা সে
করেছিলো এবং এ রকম কোন কিছু, তার কোন
কাজে আসবে না। আল্লাহ, তিনি মযাদাবান বলেছেন
(অথের ব্যাখ্যা)ঃ
“আপনার প্রতি এবং আপনার পূববতীদের প্রতি
প্রত্যাদেশ হয়েছে, যদি আল্লাহর শরীক স্থির
করেন, তবে আপনার কৃতকম নিষ্ফল হবে এবং
আপনি ক্ষতিগ্রস্থদের একজন হবেন।বরং আল্লাহরই
ইবাদত করুন এবং কৃতজ্ঞদের অন্তভুক্ত
থাকুন।’’ (আয-যুমার ৩৯/৬৫-৬৬)
দুই
ঐ ব্যক্তি যে আদৌ ছ্বালাত আদায় করে না, তার
বাড়ীতে অথবা মসজিদে এবং জুম’আতে অংশ গ্রহন
করেনা অথবা আনুষ্ঠানিক ছ্বালাতে, তারও ভালো কাজ
গ্রহন করা হবে না, আদৌ ছ্বালাত আদায় না করে সে
কুফরে নিমজ্জিত হয়।আল্লাহর রাসুল(সাল্লাল্লাহু
আলায়হি ওয়া সাল্লাম)বলেছেনঃ ‘চুক্তি যা আমাদের ও
তাদের মাঝে দাঁড়িয়ে যায় তা হচ্ছে, ছ্বালাত- যা
মুসলমান এবং কাফেরের মধ্যে পাথক্য সৃষ্টি করে।
যেকেউ ছ্বালাত আদায় না করে সে কুফরী
করলো।’ বণনা করেছেন আত-
তিরমীযি-২৫৪৫,আন-নাসায়ী-৪৫৯,আলবানী সহিহ
হিসাবে আখ্যায়িত করেন।
ঐ ব্যক্তি যে ছ্বালাত আদায় না করে কুফরি করে তার
সম্পকে অধিক তথ্যের জন্য 5208 নং প্রশ্নের
উত্তর দেখুন।
তিন
মুনাফিক সমন্ধে, যদি বৃহত্তর কপটতার কোনো
ব্যক্তিকে বোঝানো হয়, অথা যারা এই
পৃথিবীতে ঈমানদ্বারের ভাব দেখায় অথচ তারা
তাদের হৃদয়ে কুফরকে গোপন রাখে এবং মানুষ
থেকে ইহাকে লুকিয়ে রাখে, তাদের অবস্থা
হবে কাফির এবং মুশরিকিনদের চেয়েও অধিকতর
খারাপ। এ কারনে তাদের চরম পরিনতি হবে
জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে| যেহেতু আল্লাহ, তিনি
মযাদাবান বলেছেন (অথের ব্যাখ্যা)ঃ
নিঃসন্দেহে মুনাফিকদের স্থান জাহান্নামের সর্বনিম্ন
স্তরে।আর তোমরা তাদের জন্য কোনো
সাহায্যকারী কখনও পাবে না।(আন-নিসা-৪/১৪৫)
চার
কিন্তু যদি তুমি মুনাফিক বলতে বোঝাও যে, যারা
কপটতার কিছু কাজে নিমজ্জিত হয় যেমনঃ মিথ্যাবলা
অথবা আমানতের খিয়ানত করা অথবা ওয়াদা ভঙ্গ করা
অথবা সে কিছু ছোট ধরনের শিরক করে, যেমনঃ
লোক দেখানো ইবাদত বা আল্লাহ ব্যতিত অন্য
কিছুর দ্বারা শপথ করা; অথবা যে কবীরা বা ছগীরা
গুনাহ করে, ঐগুলো করার মাধ্যমে একজন লোক
কাফের হয়ে যায় না। যদি সে তাওহীদের উপর
ঈমান রেখে মারা যায়, ইহা তাকে ইসলামের বাহিরে
নিয়ে যায় না এই কারনে সে জাহান্নামে চিরকাল
থাকবে না।বরং তার বিষয় আল্লাহ পযন্ত। তিনি ইচ্ছা
করলে তার পাপের জন্য তাকে শাস্তি দিতে পারেন,
অতঃপর তার একত্ববাদে বিশ্বাসের জন্য তাকে
জান্নাতে প্রবেশ করাবেন,অথবা তিনি তার প্রতি শুরু
থেকেই অনুগ্রহ করতে পারেন এবং তাকে
জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারেন এবং তার কৃত পাপ
সমুহ ক্ষমা করে দিতে পারেন।
আল-বুখারী(৬৯৩৩)এবং মুসলিম(১৬৫৯)বণনা
করেছেন যে, আবু যর বলেছেনঃ আল্লাহর রাসুল
(সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যেঃ হাররাহ
এর পাশে জিবরাঈল আমার নিকট উপস্থিত হলেন এবং
বললেন ‘আপনার উম্মতদেরকে আনন্দের সংবাদ
দিন যে, আল্লাহর সাথে কোনো কিছুকে
শরীক না করে যদি কেউ মারা যায়, তবে সে
জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ আমি বললাম, হে
জিবরাঈল এমন কি যদি সে চুরি করে এবং এমন কি যদি
সে যিনা করে তাহলেও? সে বললঃ হ্যাঁ, আমি বললামঃ
এমন কি যদি সে চুরি করে এবং এমন কি যদি সে যিনা
করে তাহলেও? সে বললঃ হ্যাঁ, আমি বললামঃ এমন কি
যদি সে চুরি করে এবং এমন কি যদি সে যিনা করে
তাহলেও? সে বললঃ হ্যাঁ এবং এমন কি যদি সে মদ পান
করে তাহলেও।’’’
এবং আল্লাহই ভালো জানেন ।