সালাতে বিনয়ী হওয়ার তেত্রিশ উপায় (২য় পর্ব)


সালাতে বিনয়ী হওয়ার তেত্রিশ উপায় (২য় পর্ব)

 ১৮- সালাতের পর হাদিসে বর্ণিত দো‘আ:
এ দো‘আগুলো অন্তরে সালাতের প্রতি মনোযোগ সৃষ্টি ও সালাত দ্বারা বরকত লাভ ও উপকার লাভে সাহায্য করে।
আর এতে কোন সন্দেহ নেই যে, প্রথম ইবাদতকে সংরক্ষণ করা ও তার হেফাযত করার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে সে ইবাদতের সাথে সাথে অন্য দ্বিতীয় কিছু ইবাদত করে নেওয়া। সালাতের পর যিকিরসমূহের মধ্যে চিন্তা করা দ্বারা বিষয়টি আরও ভালোভাবে বুঝে আসবে। কারণ, সে প্রথমে ক্ষমা প্রার্থনা দিয়ে শুরু করবে; সালাত শেষ করার সাথে সাথে সালাতে তার যে সব দুর্বলতা- অমনোযোগীতা, খুশুহীনতা প্রকাশ পেয়েছে এবং সালাতে তার যে সব ভুলত্রুটি দেখা দিয়েছে, তার জন্য তিনবার এস্তেগফার পড়বে। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, নফল সালাত আদায় করবে, কারণ, নফল সালাত দ্বারা ফরযের ঘাটতি পূরণ করা হয়ে থাকে এবং সালাতে খুশু না থাকার ক্ষতিপূরণ হয়ে থাকে।
সালাতের খুশু‘ বা বিনয়াবনত অবস্থা আনয়নকারী উপায়গুলোর কথা উল্লেখ করার পর, দ্বিতীয় পর্যায়ে সে সব বিষয়ের আলোচনা করব, যে কর্মগুলো মানুষকে খুশু থেকে ফিরিয়ে রাখে, অন্য মনষ্ক করে এবং সুন্দর করে সালাত আদায় করা হতে বিরত রাখে।
দ্বিতীয় প্রকার: সালাতে খুশুর পথে বাধা হয়, প্রতিবন্ধক তৈরী করে, অথবা খুশু বিনষ্ট করে এমন যাবতীয় কাজ থেকে বিরত থাকা। যেমন,  
১৯- যে সব বস্তু একজন মুসল্লির মনোযোগ নষ্ট করে, সালাতের স্থান থেকে সেগুলো দূর করাআনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা’ এর একটি পর্দা [যাতে নকশা ছিল বা রঙিন] ছিল, যার দ্বারা তিনি তাঁর ঘরের একপাশকে ঢেকে রাখতেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, কাপড়টি সরিয়ে নাও। কারণ, এ কাপড়ের ছবিগুলো সব সময় আমার সালাতে ভেসে উঠে।[106]
হাদিস বর্ণনাকারী কাশেম রহ. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা’ থেকে বর্ণনা করেন,
“আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার একটি কাপড় ছিল, যা একটি ছোট ঘর (যা ঘর থেকে একটু নিচুতে ছিল অনেকটা স্টোর রুমের মত, সে) দিক ঝুলানো ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে ফিরে সালাত আদায় করতেন, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কাপড়টি সরাও; কারণ, কাপড়টির ছবিগুলো সবসময় সালাতে আমার সামনে ভেসে উঠে। তারপর আমি কাপড়টি সরিয়ে ফেলি এবং তা দিয়ে কয়েকটি বালিশ বানিয়ে নেই।[107]
বিষয়টির উপর প্রমাণ হিসেবে আরও একটি হাদিস পেশ করা যায়, তা হল,
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কাবা শরীফে সালাত আদায়ের জন্য প্রবেশ করেন, তিনি দুটি ভেড়ার শিং দেখেন। সালাত আদায় করার পর, তিনি ওসমান আল হাজাবীকে বলেন, আমি তোমাকে শিং দুটিকে ঢেকে রাখার কথা বলতে ভুলে গেছি। কারণ, কা‘বা ঘরের মধ্যে এমন কোনো জিনিষ থাকা উচিত নয় যা একজন মানুষকে সালাত থেকে বিরত রাখে”।[108]
উল্লেখিত বিষয়ের সাথে সাথে এ বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হবে। অর্থাৎ মানুষের চলাচলের স্থানে সালাত আদায়, মানুষের কোলাহল, চিল্লা-পাল্লা ও গোলযোগের স্থানে সালাত আদায়, কোন আলোচনার মজলিশের পাশে সালাত আদায় এবং যে সব স্থান খেলা-ধুলা ও হৈ-চৈ ইত্যাদি করা হয়, সেখানে সালাত আদায় থেকে বিরত থাকা।
অনুরূপভাবে যদি সম্ভব হয়, যে সব স্থানে অধিক গরম বা অধিক ঠাণ্ডা জায়গার মধ্যে সালাত আদায় করা হতে বিরত থাকবে। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গরমের দিনে গরমের কারণে যোহরের সালাতকে ঠাণ্ডার মধ্যে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।  আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেন, কঠিন গরমের সময় সালাত আদায় করা, একজন মানুষকে সালাতে খুশু ও মনোযোগী হওয়াতে বাধা দেয় এবং ইবাদতকে অপছন্দ ও ঘৃণিত বানায়। এ কারণেই শরিয়তের বিধান দাতা বান্দাদের সালাতকে দেরীতে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন যাতে গরম কমে যায়। যাতে বান্দা মনোযোগ সহকারে সালাত আদায় করতে পারে এবং সালাত আদায়ে তার যে উদ্দেশ্য অর্থাৎ সালাতে মনোযোগী ও বিনয়ী হওয়া এবং আল্লাহর প্রতি দাবিত হওয়া তা হাসিল হয়।[109]
২০- এমন কাপড়ে সালাত আদায় করবেন না, যাতে নকশা অথবা লেখা অথবা বিভিন্ন রঙ অথবা ছবি থাকে, যা একজন মুসল্লিকে সালাতে মনোযোগী হতে বিরত রাখে:
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা’ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নকশী বিশিষ্ট এক জামা পরিধান করে সালাত আদায় করতে দাঁড়ান। সালাতে জামার নকশার দিকে তাঁর দৃষ্টি পড়ে। সালাত শেষ করে তিনি বলেন, তোমরা এ জামাটিকে আবু জাহাম ইবন হুযাইফাকে দাও এবং তার থেকে তার আন্বেজানিয়্যা অর্থাৎ এমন একটি জামা নিয়ে আস যাতে কোন নকশা দাগ ও বুটা নেই। কারণ, এটি এখনই আমাকে আমার সালাতের মনোযোগ নষ্ট করে দিয়েছিল”। অপর বর্ণনায় এসেছে, شغلتني أعلام هذه এ কাপড়ের পাড় আমাকে আমার সালাত থেকে অমনোযোগী করেছে। অপর এক বর্ণনায় এসেছে,كانت له خميصة لها علم ، فكان يتشاغل بها في الصلاة  “রাসূলের একটি চাদর ছিল, যাতে বিভিন্ন ধরনের নকশা ছিল, যা তাঁকে তার সালাতে মনোযোগ দেওয়া থেকে বিরত রেখেছিল।[110]
সুতরাং, যে সব কাপড়ে জীব-জন্তু বা কোনো প্রাণীর ছবি রয়েছে তাতে সালাত আদায় করা, যেমনটি বর্তমানে আমাদের সময়ে প্রচলিত রয়েছে, তা আরও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নিষিদ্ধ হওয়া উচিত।
২১- খাওয়ার সামনে উপস্থিত হলে,  তাকে সামনে রেখে সালাত আদায় করবেন না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لا صلاة بحضرة طعام»
“খানা হাজির থাকা অবস্থায় কোনো সালাত আদায় করা যাবে না”।[111]
যখন খানাকে সামনে রাখা হয় এবং খানা সামনে উপস্থিত থাকে অথবা তার সামনে খানাকে পেশ করা হল, তখন প্রথমে খানা খাওয়ার কাজটি সেরে নেবে। কারণ, যখন খানা খাওয়া ছেড়ে দেয় এবং সালাতে দাঁড়ায় অথচ তার নফস খানার সাথে সম্পৃক্ত থাকে, তখন সালাতে তার মনোযোগ নষ্ট হবে। বরং বান্দার উপর ওয়াজিব হল, তার প্রয়োজনসমূহ শেষ করে তার পর সালাতে দাঁড়াবে, তাড়াহুড়া করবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
«إذا قرِّب العَشاء وحضرت الصلاة ، فابدؤا به قبل أن تصلوا صلاة المغرب. ولا تعجلوا عن عشائكم.»
“যখন তোমাদের সামনে রাতের সালাত ও রাতের খাওয়ার উপস্থিত করা হয়, তখন তোমরা মাগরিবের সালাতের পূর্বে খাওয়ারের কাজ আগে সেরে নাও। তোমরা তোমাদের রাতের সালাত আদায়ে তাড়াহুড়া করো না”। অপর এক বর্ণনায় এসেছে,
«إذا وُضع عشاء أحدكم وأقيمت الصلاة فابدؤا بالعشاء ولا يعجلنّ حتى يفرغ منه»
“যখন তোমাদের রাতের খাওয়ার সামনে রাখা হয়, আর সালাতের একামত দেওয়া হয়, তখন তোমরা রাতের খাওয়া দিয়ে শুরু কর। খাওয়া শেষ করার পূর্বে সালাতের জন্য তাড়াহুড়া করবে না”।[112]
২২- পেশাব ও পায়খানার বেগ নিয়ে সালাত আদায় করবে না:
নিশ্চিতভাবে এ কথা বলা যায়, কোনো ব্যক্তি যখন পায়খানা ও পেশাবকে আটকে রেখে সালাত আদায় করে, তা সালাতে খুশুতে বিঘ্ন ঘটায়। এ কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পায়খানা পেশাবের বেগ নিয়ে সালাত আদায় করা থেকে নিষেধ করেছেন। হাদিসে বর্ণিত,
(نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم أن يصلي الرجل وهو حاقن)
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পেশাবকে আটকে রেখে সালাত আদায় করা থেকে নিষেধ করেন”।[113]
সুতরাং কারো যদি পায়খানা বা পেশাবের বেগ হয়, তখন তার করণীয় হল, সে তার প্রয়োজন সেরে নেয়ার জন্য বাথরুমে যাবে যদিও জামাতে সালাত আদায় ছুটে যায়। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إذا أراد أحدكم أن يذهب الخلاء وقامت الصلاة فليبدأ بالخلاء».
“যখন তোমাদের কেউ পায়খানায় যেতে চায় এবং সালাতের একামত হয়, তখন সে প্রথমে পায়খানা সেরে নেবে”।[114]
বরং যখন এ ধরনের কোনো সমস্যা সালাতের মাঝখানে দেখা দেয়, তখন সে পায়খানা বা পেশাব করার জন্য সালাত ছেড়ে দেবে। তারপর অজু করবে এবং সালাত আদায় করবে। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لا صلاة بحضرة طعام ولا وهو يدافعه الأخبثان»
“খাবারের উপস্থিতিতে কোনো সালাত নেই এবং পায়খানা ও পেশাবকে প্রতিহত করা অবস্থায় কোনো সালাত নেই”।[115] এ ধরনের প্রতিহত করা অবশ্যই সালাতের খুশু‘ খুজু বিনষ্ট করে। বায়ূ চেপে রাখাও এ নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত।
২৩-যখন তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়, তখন সালাত আদায় না করা:
আনাস ইবন মালেক থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إذا نعس أحدكم في الصلاة فلينم حتى يعلم ما يقول»
“যখন তোমাদের কারো সালাতের মধ্যে তন্দ্রা আসে, সে যেন ঘুমিয়ে পড়ে; যতক্ষণ না সে কি বলে তা বুঝতে পারে। অর্থাৎ শুয়ে পড়বে, যাতে সালাতে ঘুমাতে না হয়”।[116]
এখানে কারণও উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إذا نعس أحدكم و هو يصلي فليرقد ، حتى يذهب عنه النوم فإن أحدكم إذا صلى وهو ناعس لا يدري لعله يستغفر فيسب نفسه».
যখন তোমাদের কারো সালাতে তন্দ্রা আসে, সে যেন শুয়ে পড়ে। যতক্ষণ না তার ঘুম দূর হয়ে যায়। কারণ, যখন তোমাদের কেউ তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে সালাত আদায় করে, তখন সে কি বলবে, তা বুঝতে পারে না। হতে পারে সে ক্ষমা চাচ্ছে, কিন্তু সে নিজেকে গালি দিয়ে বসছে।[117]
এ ধরনের সমস্যা রাতের সালাত তথা তাহাজ্জুদের মধ্যেও হতে পারে, আর দেখা গেল দো‘আ কবুল হওয়ার সময়, না জেনে সে তার নিজেরই বিরুদ্ধে দো‘আ করে বসল। আর যখন ঘুমানোর পরে সালাত আদায় করার পর্যাপ্ত সময় থাকে, তখন এ হাদিস ফরয সালাতকেও অন্তর্ভুক্ত করে।[118]
২৪- কথা বলায় মগ্ন বা ঘুমন্ত ব্যক্তির পিছনে সালাত আদায় করবে না
কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের পিছনে সালাত আদায় হতে নিষেধ করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করে বলেন,
«لا تصلوا خلف النائم ولا المتحدث»
“তোমরা কথায় মগ্ন ব্যক্তি এবং ঘুমন্ত ব্যক্তির পিছনে সালাত আদায় করো না।[119]”
কারণ, কথায় মগ্ন ব্যক্তি তার কথা দ্বারা সালাত আদায়কারীকে অমনোযোগী করে দিবে, আর ঘুমন্ত ব্যক্তি দ্বারা এমন কিছু প্রকাশ পায় যা সালাতে বিঘ্ন ঘটায়।
আল্লামা খাত্তাবী রহ. বলেন, ইমাম শাফেয়ী ও ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল রহ. কথায় মগ্ন লোকদের সামনে রেখে সালাত আদায়কে অপছন্দ করেন। কারণ, তাদের কথা একজন মুসল্লিকে তার সালাত থেকে বিরত রাখতে পারে।[120]
ঘুমন্ত ব্যক্তির পিছনে সালাত আদায় করা মাকরূহ ও নিষিদ্ধ হওয়া সম্পর্কে প্রমাণগুলোকে কতক আহলে ইলম দুর্বল আখ্যায়িত করেন। তাদের মধ্যে একজন ইমাম আবু দাউদ; তিনি তার সুনানে আবু দাউদে সালাত অধ্যায়, বিতরের সালাত পরিচ্ছেদ ও দো‘আ পরিচ্ছেদে বিষয়টি উল্লেখ করেন।[121] অনুরূপভাবে ইবন হাজার রহ. তার ফাতহুল বারীর শারহু বাবিস সালাত খালফান নায়েম, কিতাবুস সালাত।
ইমাম বুখারি স্বীয় সহীহ গ্রন্থে ঘুমন্ত ব্যক্তির পিছনে সালাত আদায় পরিচ্ছেদে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার হাদিস বর্ণনা করেন, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন,
كان النبي صلى الله عليه وسلم يصلي وأنا راقدة معترضة على فراشه..
“আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিছানায় শুয়ে থাকতাম, আর তিনি সালাত আদায় করতেন।[122]
মুসল্লিকে সালাতে মনোযোগ দেয়া থেকে বিরত রাখে এমন কোনো বিষয় প্রকাশ পাওয়ার আশঙ্কা থাকলে তখনই কেবল মুজাহিদ, তাউস ও ইমাম মালেক ঘুমন্ত ব্যক্তির দিকে সালাত আদায়কে মাকরূহ বলেছেন।[123]
আর যদি এ ধরনের কোনো বিষয় প্রকাশ পাওয়ার আশঙ্কা না থাকে তাহলে ঘুমন্ত ব্যক্তির পিছনে সালাত আদায় মাকরূহ হবে না। আল্লাহই ভালো জানেন।
২৫- পাথর সরানো [অনুরূপভাবে জায়নামায ঠিক করার] কাজে ব্যস্ত না হওয়া
ইমাম বুখারি রহ. মু‘আইকিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ থেকে বর্ণনা করেন,
أن النبي صلى الله عليه وسلم قال في الرجل يسوي التراب حيث يسجد قال : «إن كنت فاعلا فواحدة»
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেজদার জায়গায় পাথর পরিষ্কার করছে, এমন এক ব্যক্তিকে বলেন, যদি এ কাজটি করতেই হয়, তবে একবার কর”।[124]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لا تمسَح وأنت تصلي فإن كنتَ لا بدَّ فاعِلا فواحدة»
“তুমি সালাতরত অবস্থায় পাথর স্পর্শ করবে না। আর যদি করতেই চাও তবে একবার করবে”।[125]
হাদিসে নিষেধ করার কারণ, সালাতের খুশু ও বিনায়বণত অবস্থার হেফাযত করা, আর যাতে তা দ্বারা ‘আমলে কাসীর’ বা অতিরিক্ত কাজ না হয়। সেজদার স্থান যদি সমান করার প্রয়োজন পড়ে তবে সালাত আরম্ভ করার পূর্বেই সেটি সমান করে নেয়া উত্তম।
অনুরূপভাবে সালাতের মধ্যে কপাল পরিষ্কার করা, নাক পরিষ্কার করা, ইত্যাদি উল্লেখিত হাদিসের আওতায় পড়বে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাটি ও পানির মধ্যে সেজদা করেন এবং কপালে তার দাগ পড়েছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যতবার সেজদা থেকে উঠতেন ততবার তিনি কপাল পরিষ্কার করতেন না। কারণ, সালাতে মগ্ন থাকা ও মনোযোগী হওয়া কপালের ময়লা পরিষ্কার করাকে ভুলিয়ে দেয় এবং এ ধরণের কাজ থেকে বিরত রাখে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إن في الصلاة شغلا»
“নিশ্চয় সালাতে রয়েছে ব্যস্ততা।”[126]
ইবনু আবি শাইবা রহ. আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
ما أحب أن لي حمر النعم وأني مسحت مكان جبيني من الحصى
“আমি আমার সেজদার জায়গা থেকে পাথর পরিষ্কার করাকে আমার জন্য লাল উটের বিনিময়ে হলেও পছন্দ করি না।” আল্লামা কাযী আয়াদ্ব রহ. বলেন, ‘সালাতে কপাল পরিষ্কার করাকে সালাফে সালেহীনগণ মাকরূহ বলেছেন’।[127] অর্থাৎ সালাত শেষ করার পূর্বে।
যেমনিভাবে সালাতে মনোযোগ নষ্ট করে, এমন সব বিষয় যেগুলো আমরা উল্লেখ করেছি তা হতে মুসল্লিকে বিরত থাকতে হবে, তেমনিভাবে অপর মুসল্লির সালাতে বিঘ্ন হয় ও তার মনোযোগ নষ্ট করে, এমন কোনো কাজ না করা একজন মুসল্লির দায়িত্ব ও কর্তব্য। তন্মধ্যে রয়েছে:
২৬- কিরাত বা সূরা পড়তে গিয়ে অন্যদের সালাতে ডিস্টার্ব করবে না:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ألا إن كلكم مناج ربه ، فلا يؤذين بعضكم بعضا ، ولا يرفع بعضكم على بعض في القراءة»
“সাবধান! তোমাদের সবাই আল্লাহর সাথে কথোপকথন করছ। তোমরা একে অপরকে কষ্ট দেবে না। তোমরা কিরাতে (অথবা বলেন, সালাতে) একে অপরের কিরাতের উপর নিজের আওয়াজকে উঁচু করবে না”।[128]
অন্য বর্ণনায় এসেছে,
«لا يجهر بعضكم على بعض بالقرآن»
“তোমাদের কেউ যেন অপর কারও উপর কুরআনের শব্দকে উচ্চ না করে”[129]।
২৭-সালাতে এদিক সেদিক তাকানো ছেড়ে দেয়া:
আবু যর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لا يزال الله عز وجل مقبلا على العبد وهو في صلاته ما لم يلتفت ، فإذا التفت انصرف عنه »
“যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দা সালাতে এদিক সেদিক তাকাবে না, আল্লাহ তা‘আলা সে বান্দার দিক চেয়ে থাকেন। অতঃপর যখন সে এদিক সেদিক তাকায় তখন আল্লাহ তা‘আলা তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন”।[130]
সালাতে এদিক সেদিক তাকানো দুই ধরনের হয়ে থাকে।
এক. অন্তরকে মহান আল্লাহ ব্যতীত অন্য কিছুর দিকে মনোনিবেশ করা।
দুই. চোখের দ্বারা এদিক সেদিক তাকানো। উভয় প্রকারের তাকানোই নিষিদ্ধ এবং এতে সালাতের সাওয়াব কমে যায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাতে এদিক সেদিক তাকানো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি বলেন,
«اختلاس يختلسه الشيطان من صلاة العبد»
এটি একটি ছিনতাই, শয়তান বান্দার সালাত থেকে তা ছিনতাই করে নিয়ে যায়।[131] যে ব্যক্তি স্বীয় সালাতে চোখ দিয়ে ও অন্তর দিয়ে এদিক সেদিক তাকায় তার দৃষ্টান্ত সে ব্যক্তির মত, যাকে বাদশাহ তার দরবারে ডাকলে সে বাদশাহর ডাকে সাড়া দেয় এবং বাদশাহর দরবারে উপস্থিত হয়। আর যখন বাদশাহ তার সাথে কথা বলছে এবং তাকে সম্বোধন করছে, তখন সে বাদশাহর কথা না শোনে ডান ও বাম দিক তাকায়। বাদশাহর কথার প্রতি কোন মনোযোগ না দেয়াতে সে বাদশাহ কি বলছে, তা বুঝতে পারছে না। কারণ, তার অন্তর উপস্থিত নেই। এ ধরনের লোকের সাথে বাদশাহর কি আচরণ করবে বলে তোমার ধারণা? এ ব্যক্তির ভাগ্যে এটিই হওয়া উচিত যে, সে আল্লাহর দরবার হতে, আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও ক্ষোভ নিয়ে ফিরে যাবে এবং আল্লাহর দৃষ্টি হতে সে দূরে সরে যাবে। এ ধরনের মুসল্লি কখনও সে মুসল্লির সমান হবে না, যে ব্যক্তি সালাতে আল্লাহর সম্মুখে নিজেকে পেশকারী, যে ব্যক্তি অন্তরে আল্লাহর বড়ত্ব ও মহত্বকে অনুভব করে, যার সামনে দাঁড়াল তার প্রতি সজাগ থাকে, যার ফলে তার অন্তর আল্লাহর ভয়ে ভরে যায় এবং আল্লাহর জন্য তার মাথা ঝুঁকে পড়ে; আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর প্রতি মনোযোগ দেয়া বা কোনো দিকে তাকানো থেকে লজ্জা করে। তাদের উভয়ের সালাত এক রকম হতে পারে না। তাদের উভয়ের সালাতের মধ্যে তেমন পার্থক্য যেমনটি বলেছেন হাস্‌সান ইবন আতিইয়া, “দুই ব্যক্তি একই সালাত আদায় করছে, অথচ তাদের উভয়ের সালাতের মধ্যে ব্যবধান, আসমান ও জমিনের মধ্যের ব্যবধানের সমান। কারণ, তাদের একজন অন্তর দিয়ে আল্লাহর সমীপে নিজেকে পেশ করেছে, আর অপর ব্যক্তি অমনোযোগী ও গাফেল।[132]”
তবে প্রয়োজনের সময়, ‘তাকানো’তে কোনো অসুবিধা নেই। ইমাম আবু দাউদ সাহাল ইবনুল হানযালিয়্যাহ্‌ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
(ثُوَّبَ بالصلاة – صلاة الصبح – فجعل رسول الله صلى الله عليه وسلم يصلي وهو يلتفت إلى الشعب).
“সালাতের ঘোষণা দেওয়া হলো, অর্থাৎ ফজরের সালাতের ঘোষণা দেয়া হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করছিলেন এবং তিনি পাহাড়ের চুড়ার দিকে তাকাচ্ছিলেন”। ইমাম আবু দাউদ বলেন, (وكان أرسل فارسا من الليل إلى الشعب يحرس) “রাতে তিনি অশ্বারোহীকে পাহাড়ের চুড়ায় পাহারা দেয়ার জন্য পাঠিয়েছিলেন”। (অর্থাৎ তিনি সেটার অবস্থা জানার জন্যই তাকাচ্ছিলেন)। আর অনুরূপ হচ্ছে, উমামা বিনতে আবিল আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে সালাতে বহন করা, ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার জন্য সালাত-রত অবস্থায় দরজা খোলা, মিম্বার থেকে নেমে নেমে সাহাবীদের সালাত শিক্ষা দেয়া, সালাতুল কুসুফে আগে পিছে যাওয়া, শয়তানকে বেধে রাখা ও তার গলা চেপে ধরা যখন সে সালাত ভেঙ্গে দিতে চেষ্টা করে, সালাতে সাপ ও বিচ্ছুকে হত্যা করা, সালাতের সামনে দিয়ে অতিক্রমকারীকে প্রতিহত করা ও তার সাথে যুদ্ধ করার নির্দেশ দেয়া এবং নারীদেরকে সালাতের মধ্যে হাতের তালি দেয়ার নির্দেশ প্রদান এবং সালাতের মধ্যে কোনো প্রয়োজনীয় ইঙ্গিত প্রদান করা, ইত্যাদি কাজগুলো, যা প্রয়োজনের সময় করার অনুমতি রয়েছে। আর যদি বিনা প্রয়োজনে সালাতে এ ধরনের কোন কাজ করা হয়ে থাকে, তাহলে তা হবে সালাতে অনর্থক ও নিষিদ্ধ কর্ম করা যেগুলো সালাতের মনোযোগকে নষ্ট করে এবং খুশর পরিপন্থী হয়।[133]
২৮- আকাশের দিক তাকানো হতে বিরত থাকা:
হাদিসে আকাশের দিক তাকানো হতে নিষেধ করেছেন এবং যারা সালাতে আকাশের দিক তাকায় তাদের হুমকি দেয়া হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إذا كان أحدكم في الصلاة فلا يرفع بصره إلى السماء ، أن يلتمع بصره »
“যখন তোমাদের কেউ সালাতের মধ্যে থাকে, সে যেন আকাশের দিক না তাকায়; যাতে তার চোখের আরো ছিনিয়ে নেওয়া না হয়।”[134] অপর এক বর্ণনায় এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ما بال أقوام يرفعون أبصارهم إلى السماء في صلاتهم»
“তাদের কি হয়েছে, যারা সালাতে তাদের চোখকে আকাশের দিক উঠায়?” অপর এক বর্ণনায়, “সালাতে দো‘আ করার সময় তাদের চক্ষুকে আসমানের দিক উঠানো হতে নিষেধ করা হয়”।[135] এ বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত কঠিন হুমকি দেন, এমনকি তিনি বলেন,
«لينتهنّ عن ذلك أو لتخطفن أبصارهم »
“তারা হয়, আকাশের দিক তাকানো থেকে বিরত থাকবে, না হয় তাদের চোখ ছিনিয়ে নেওয়া হবে”।[136]
২৯- সালাতের মধ্যে মুসল্লি তার সামনে থু থু ফেলবে না:
        কারণ, তা সালাতে খুশুর পরিপন্থী এবং আল্লাহর সাথে বেআদবি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
 «إذا كان أحدكم يصلي فلا يبصق قِبَل وجهه فإن الله قِبَل وجهه إذا صلى».
“যখন তোমাদের কেউ সালাত আদায় করে, সে যেন তার সামনের দিকে থুতু না ফেলে। কারণ, যখন কোনো ব্যক্তি সালাত আদায় করে, তখন আল্লাহ তার চেহারার দিকেই থাকেন”।[137]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
“যখন তোমাদের কেউ সালাতে দাঁড়াবে, সে যেন সামনে থুতু না ফেলে। কারণ, সে যতক্ষণ পর্যন্ত সালাতে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে আল্লাহর সাথে কথা বলতে থাকে। আর ডান দিকেও থুতু ফেলবে না কারণ, তার ডান দিকে একজন ফেরেশতা থাকে। যদি থুতু ফেলতে হয়, তবে বাম দিকে ফেলবে অথবা পায়ের নিচে ফেলবে, অতঃপর তা পুতে রাখবে”।[138]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
«إِنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا قَامَ فِي صَلاَتِهِ فَإِنَّهُ يُنَاجِي رَبَّهُ، أَوْ إِنَّ رَبَّهُ بَيْنَهُ وَبَيْنَ القِبْلَةِ، فَلاَ يَبْزُقَنَّ أَحَدُكُمْ قِبَلَ قِبْلَتِهِ، وَلَكِنْ عَنْ يَسَارِهِ أَوْ تَحْتَ قَدَمَيْهِ»
“যখন তোমাদের কেউ সালাতে দাঁড়াবে, সে যেন সামনে থুতু না ফেলে। আর নিশ্চয় তার রব থাকেন তার মাঝে ও তার কিবলার মাঝে। আর তোমাদের কেউ যেন, স্বীয় কিবলার দিক থুতু না ফেলে। তবে যদি ফেলতে হয়, সে যেন বাম দিক বা তার দু’ পায়ের নিচে ফেলে।”[139]
আর যদি বর্তমান যুগের মত মসজিদে জায়নামায ইত্যাদি বিছানো থাকে, তখন যদি থুতু ফেলার প্রয়োজন পড়ে, পকেট থেকে একটি রুমাল বের করে, তাতে থুতু ফেলে তা আবার পকেটে রেখে দেবে।
৩০- সালাতের মধ্যে হাইকে ধমিয়ে রাখতে চেষ্টা করা:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إذا تثاءَب أحدُكم في الصلاة فليكظِم ما استطاع فإن الشيطان يدخل».
“যখন সালাতে তোমাদের কারো হাই আসে তখন তা যথা সম্ভব প্রতিহত করবে। কারণ, তাতে শয়তান প্রবেশ করে।[140]” যখন শয়তান মানুষের মধ্যে প্রবেশ করে, তখন মুসল্লির সালাতে বিঘ্ন ঘটাতে শয়তান আরও বেশি সক্ষম হয়। এ ছাড়াও যখন মুসল্লি হাই দেয় তখন শয়তান হাসে।
৩১-সালাত আদায়ের সময় কোমরে হাত রাখা থেকে বিরত থাকা:
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
(نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن الاختصار في الصلاة)
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের মধ্যে কোমরে হাত রাখা থেকে নিষেধ করেন”।[141] আর হাদিস উল্লেখিত ‘আল-ইখতিছার’ শব্দের অর্থ, দু হাত কোমরে রাখা।
যিয়াদ ইবন সাবিহ আল-হানাফী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
صليت إلى جنب ابن عمر فوضعت يدي على خاصرتي فضرب يدي فلما صلى قال هذا الصّلب في الصلاة وكان رسول الله صلى الله عليه وسلم ينهى عنه
“আমি ইবনে ওমরের পাশে সালাত আদায় করি, আমি আমার হাতদ্বয় কোমরে রাখলে তিনি আমার হাতের উপর প্রহার করেন। যখন সালাত আদায় শেষ হল, তখন বললেন, এটি সালাতের মধ্যে এক প্রকার শূল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ থেকে আমাদের নিষেধ করতেন”।[142]
অপর একটি মারফু হাদিসে বর্ণিত, তাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أن التخصّر راحة أهل النار»
“কোমরে হাত রাখা জাহান্নামীদের প্রশান্তি”। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে ইমাম বাইহাকী তা বর্ণনা করেন। আল্লামা ইরাকী রহ. বলেন, হাদিসটির সনদের প্রকাশ্য কথা হচ্ছে বিশুদ্ধ হওয়া।
৩২- সালাতের মধ্যে কাপড় ঝুলিয়ে দেয়াকে পরিহার করা
কারণ, হাদিসে বর্ণিত,
ৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের মধ্যে সদল তথা মাথার উপর থেকে কাপড় ঝুলিয়ে দেয়া ও মুখ ঢেকে রাখা হতে নিষেধ করেন।[143] আউনুল মাবুদ গ্রন্থকার বলেন, আল্লামা খাত্তাবী রহ. বলেছেন, “সদল বলতে বুঝায়, কাপড়কে এমনভাবে ছেড়ে দেয়া যাতে মাটির সাথে গড়ায়[144]।” মিরকাতুল মাফাতীহ কিতাবে উদ্ধৃত[145] যে, ‘সদল’ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কারণ, এটি অহংকারের অন্তর্ভুক্ত। আর সালাতের মধ্যে সদল করা আরও বেশি মারাত্মক ও নিন্দনীয়। আর নিহায়ার প্রণেতা বলেন, দুই কাপড় দিয়ে মুড়ি দিয়ে হাত দ্বয়কে ভিতরে প্রবেশ করিয়ে রুকু করা ও সেজদা করাকে ‘সদল’ বলে। কেউ কেউ বলেন, এ ধরনের কাজ ইয়াহূদীরা করত। আর কেউ কেউ বলেন, ‘সদল’ হল, কাপড়কে মাথা অথবা কাঁধের উপর রাখা এবং সামনের দিকে বা বুকের উপর ছেড়ে দেওয়া; ফলে মুসল্লি সালাতের মধ্যে কাপড় যাতে না পড়ে সে জন্য কাপড় নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয় যা সালাতে খুশু‘ অবলম্বনে বিঘ্ন ঘটায় এবং খুশুর পরিপন্থী হয়। তবে যদি কাপড় বাঁধা থাকে বা বোতাম লাগানো থাকে, যাতে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না, তখন সেটা মুসল্লিকে ব্যস্ত রাখে না, ফলে তা খুশুরও বিপরীত হয় না। বর্তমানে কিছু আফ্রিকান ও অন্যান্য বন্ধু বান্ধবের পোশাক ও তাদের পরিধেয় আমরা দেখতে পাই, তারা সালাতের মধ্যে তাদের কাপড় ঠিক করাতেই অধিকাংশ সময় ব্যস্ত থাকে। দেখা যায় যদি পড়ে যায় তা উঠায় আবার ছুটে গেলে তার মিলায় ইত্যাদি। এ বিষয়ে আমাদের অবশ্যই সতর্ক হতে হবে।
আর মুখ ঢেকে রাখতে নিষেধ করার কারণ সম্পর্কে আলেমগণ বলেন, এতে সুন্দরভাবে কিরাতকে পরিপূর্ণ করা হতে নিষেধ করে এবং পরি পূর্ণরূপে সেজদা করতে বিরত রাখে।[146]
৩৩- চতুষ্পদ জন্তুর সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করা হতে বিরত থাকা
আল্লাহ তা‘আলা আদম সন্তানকে বিশেষ সম্মান দেন এবং তাকে সুন্দর আকৃতিতে সৃষ্টি করেন। সুতরাং একজন মানুষ স্বীয় আকৃতি বাদ দিয়ে কোন জন্তুর আকৃতি ধারণ করা খুবই অন্যায়। আমাদেরকে সালাতে জন্তুর আকৃতি ধারণ করা ও তাদের মত উঠ-বস করা হতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ, এটি সালাতের মনোযোগী ও খুশু অবলম্বনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী; অথবা (নিষেধ করার কারণ হচ্ছে,) খারাপ আকৃতি ধারণ একজন মুসল্লির জন্য কখনো সমীচীন নয়। যেমন হাদিসে এসেছে,
(نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم في الصلاة عن ثلاث : عن نقر الغراب وافتراش السبع وأن يوطن الرجل المقام الواحد كإيطان البعير)
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের মধ্যে তিনটি জিনিষ থেকে নিষেধ করেন। কাকের ঠোকর, হিংস্র জন্তুর বসা ও উটের মত একজন ব্যক্তি কোনো একটি জায়গাকে নিজের জন্য নির্ধারণ করা”।[147] অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি মসজিদের কোনো একটি বিশেষ স্থানকে সালাত আদায়ের জন্য নির্ধারণ করা। যেমন, উট, সে তার বসার জায়গাকে পরিবর্তন করে না; বরং একই স্থানকে নির্ধারণ করে থাকে।[148] অপর এক বর্ণনায় এসেছে তিনি বলেন,
(نهاني عن نقرة كنقرة الديك ، وإقعاء كإقعاء الكلب، والتفات كالتفات الثعلب.)
“আমাকে নিষেধ করেছেন, মোরগের ঠোকরের মত ঠোকর দেয়া হতে, কুকুরের বসার মত পা তুলে বসা হতে এবং শিয়ালের মত এদিক সেদিক তাকানো হতে”।[149]
এ পর্যন্ত যে বিষয়গুলো আলোচনা করার সুযোগ হয়েছে তা ছিল ঐ সব উপায়-উপকরণ, যেগুলো সালাতে খুশু আনয়ন করে, যাতে খুশু অর্জন করা সহজ হয় এবং ঐ সব কারণ যেগুলো সালাতে মনোযোগ ও খুশু নষ্ট করে, যাতে সেগুলো হতে বেঁচে থাকা সম্ভব হয়।
আলেমদের নিকট খুশুর মাসআলাটি গুরুত্বপূর্ণ হওয়া ও মর্যাদা অনেক বেশি হওয়ার কারণে তারা নিচে উল্লেখিত বিষয়টি নিয়ে মতামত ব্যক্ত করেন।
মাসআলা: কোন ব্যক্তির সালাতে বেশি ওয়াস-ওয়াসা পরিলক্ষিত হলে, তার সালাত সহীহ হবে ? নাকি তাকে সালাত পুনরায় আদায় করতে হবে?
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেন:
যদি বলা হয়, যার সালাতে খুশু উপস্থিত না থাকে তার সালাত সম্পর্কে তোমাদের মতামত কি, তার সালাতকে বিশুদ্ধ ধরা হবে নাকি ধরা হবে না।
উত্তরে বলা হবে, সাওয়াবের ক্ষেত্রে ধরা হবে না। ততটুকু ধরা হবে, যতটুকু সে বুঝতে পারে এবং আল্লাহর স্মরণ করে।
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ليس لك من صلاتك إلا ما عقلت منها  তোমার সালাত হতে ততটুকুরই তুমি হকদার, যতটুকু সালাত তুমি মনোযোগ দিয়ে আদায় করছ।
মুসনাদে একটি মারফু হাদিস বর্ণিত, তাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إن العبد ليصلي الصلاة ، و لم يكتب له إلا نصفها ، أو ثلثها أو ربعها حتى بلغ عشرها.»
“নিশ্চয় বান্দা সালাত আদায় করে, তার সালাতের পুরো সাওয়াব পায় না বরং অর্ধেক সাওয়াব পায় অথবা এক তৃতীয়াংশ পায় অথবা এক চতুর্থাংশ পায়, এভাবে রাসূল বলতে বলতে এক দশমাংশ পর্যন্ত বললেন।”
আল্লাহ তা‘আলা মুসল্লিদের সফলতা পাওয়াকে তাদের সালাতের মধ্যে খুশু থাকার সাথে সম্পৃক্ত করেন। এতে প্রমাণিত হয়, যে ব্যক্তি সালাতে খুশু অবলম্বন করে না, সে সফল ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত হবে না। যদি সালাতে খুশু না থাকাতে পরিপূর্ণ সাওয়াব পাওয়া যেত, তাহলে মুসল্লি সফল ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত হতেন। আর দুনিয়াবি বিধান অনুযায়ী যদি সালাতের অধিকাংশ সময়ে খুশু থাকে এবং অধিকাংশ সালাতকে বুঝতে পারে, সকলের ঐক্য মতের ভিত্তিতে তখন সালাত শুদ্ধ হয়ে যাবে এবং এ ধরনের সালাত পুনরায় আদায় করতে হবে না। তবে সুন্নাত হল, সালাতের পরে হাদিসে বর্ণিত সুন্নাত ও যিকিরগুলো পড়া, যাতে তাদের সালাতের দুর্বলতা পূর্ণতা পায় ও ক্ষতিপূরণ হয়ে যায়।
আর যদি সালাতের অধিকাংশ সময় খুশু না থাকে এবং মনোযোগ না থাকে, তাহলে তার সালাত পুনরায় আদায় করা ওয়াজিব হওয়া বিষয়ে ফকীহগণের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। ইমাম আহমদের অনুসারী আল্লামা ইবনে হামেদ রহ. এর মতে এ ধরনের সালাতকে পুনরায় আদায় করা ওয়াজিব। তাছাড়া সালাতের খুশুর বিধান সম্পর্কেও ফকীহগণের মধ্যে দুই রকম কথা পাওয়া যায়। আর দুটি মতই আহমদ ও তার অনুসারীদের মত।
দুটি মতামত অনুযায়ী, যদি কারো সালাতে ওয়াসওয়াসা প্রাধান্য পায়, তাহলে তার সালাত পুনরায় পড়তে হবে কিনা এ সম্পর্কে ইমাম আহমদ রহ. এর অনুসারী আল্লামা ইবনে হামেদ রহ. সালাত পুনরায় আদায় করাকে ওয়াজিব বলেন। তবে অধিকাংশ ফকীহগণের মতে পুনরায় সালাত আদায় করা ওয়াজিব নয়।
তারা দলীল দেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে ভুলকারীকে দুটি সাহু সেজদা করা নির্দেশ দেন, কিন্তু সালাত পুনরায় পড়ার নির্দেশ দেন নি। রাসূল আরও বলেছিলেন,
«إن الشيطان يأتي أحدكم في صلاته فيقول : أذكر كذا ، أذكر كذا ، لما لم يكن يذكر ، حتى يُضل الرجل أن يدري كم صلى»
“শয়তান তোমাদের সালাতে উপস্থিত হয়ে তাকে বলে, তুমি এ কথা স্মরণ কর, তুমি এ কথা স্মরণ কর, যে বিষয়গুলো সে ভুলে গিয়েছিল সেগুলো সে স্মরণ করিয়ে দেয়। ফলে লোকটি কত রাকাত সালাত পড়ল তা ভুলে যায়।”
তবে এ বিষয়ে কোনো মতবিরোধ নেই যে, এ ধরনের সালাতে কোন সাওয়াব নেই; শুধু ততটুকু সাওয়াব পাবে যতটুকুর মধ্যে মুসল্লির অন্তর উপস্থিত থাকে এবং আল্লাহর আনুগত্য করে। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إن العبد لينصرف من الصلاة ولم يكتب له إلا نصفها ، ثلثها ، ربعها ، حتى بلغ عشرها»
“নিশ্চয় বান্দা সালাত আদায় করে, তার সালাতের পুরো সাওয়াব পায় না বরং অর্ধেক সাওয়াব পায় অথবা এক তৃতীয়াংশ পায় অথবা এক চতুর্থাংশ পায়, এভাবে রাসূল বলতে বলতে এক দশমাংশ পর্যন্ত বললেন।”
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ বলেন,
«ليس لك من صلاتك إلا ما عقلت منها»
“তুমি তোমার সালাত থেকে ততটুকুই পাবে, শুধু যতটুকু সালাতে তুমি মনোযোগী ছিলে।” যদিও এ ধরনের সালাতকে এ অর্থে শুদ্ধ বলা যায়, যে শরিয়ত এ ধরনের সালাত পুনরায় পড়তে বলে নি, কিন্তু সালাতের উদ্দেশ্যের প্রতি লক্ষ্য করলে এ সালাতকে শুদ্ধ বলা যায় না।[150]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ হাদিস বর্ণিত, তিনি বলেন,
“যখন মুয়াজ্জিন সালাতের আযান দেয়, তখন শয়তান বায়ু ছাড়তে ছাড়তে পালাতে আরম্ভ করে। যতক্ষণ পর্যন্ত আযানের আওয়াজ শোনা যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত সে দৌড়াতে থাকে। আর যখন আযান দেয়া শেষ হয়, তখন শয়তান ফিরে আসে। আবার যখন সালাতের একামত দেয়া হয়, তখন সে আবার পলায়ন করে। যখন একামত দেয়া শেষ হয়, তখন আবার ফিরে আসে এবং মানুষের অন্তরে বিভিন্ন ধরনের কু-মন্ত্রণা দেয়। তখন শয়তান মুসল্লিকে বল, এটি স্মরণ কর, এটি স্মরণ কর, তার ভুলে যাওয়া বিষয়গুলো শয়তান তাকে তার সালাতের মধ্যে স্মরণ করিয়ে দেয়। ফলে সে বুঝতে পারে না যে, কত রাকাত সালাত সে আদায় করল। তোমাদের কারো সালাতে এ ধরনের এ সমস্যা দেখা দিলে, তোমরা বসা অবস্থায় দুটি সেজদা সাহু করে নেবে”। ফকীহগণ বলেন, এটি এমন একটি সালাত, যাতে শয়তান সালাত আদায়কারীকে সালাত হতে গাফেল বানিয়ে দেয়। কিন্তু তাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেজদা সাহু করার নির্দেশ দেন, সালাত পুনরায় আদায় করার নির্দেশ দেন নি। যদি সালাত বাতিল হত, যেমনটি তোমরা মনে করছ, তাহলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতকে পুনরায় আদায় করার নির্দেশ দিতেন।
তারা আরও বলেন: এটি হল, সেজদা সাহু দেয়ার আসল রহস্য বা উদ্দেশ্য। অর্থাৎ শয়তান বান্দাকে সালাতে ওয়াস-ওয়াসা দেয়া ও একজন বান্দা সালাতে মনোযোগী হওয়া বিষয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করার কারণে তাকে সেজদা সাহুর মাধ্যমে অপমান-অপদস্ত করা। এ কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেজদা সাহুকে ‘মুরগামাতাইন’ বা নাকে খত প্রদানকারী বলে নামকরণ করেন।
আর যদি সালাত পুনরায় আদায় করা দ্বারা তোমাদের উদ্দেশ্য এ সব ফলাফল ও উপকার লাভ করা, তাহলে এটা জানা আবশ্যক যে এ সবই বান্দার উপর সোপর্দ। সে যদি চায় তা লাভ করতে পারবে, আর যদি চায় ছেড়ে দিতে পারবে।
আর যদি ওয়াজিব হওয়া দ্বারা তোমাদের উদ্দেশ্য হয়, আমরা তাকে তা করতে বাধ্য করব এবং সালাতে খুশু ছেড়ে দেওয়ার কারণে তাকে আমরা শাস্তি দেব এবং তার উপর সালাত ত্যাগকারীর বিধান চালু করব, তাহলে আমরা তোমাদের সাথে নেই। এ ধরনে কাজকে আমরা প্রশ্রয় দেই না। এটিই হল, সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মত। আল্লাহই ভালো জানেন।
সালাতে খুশুর বিষয় কোন ছোট-খাটো বিষয় নয়। এটি একটি বড় ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং খুশুর বিষয়টি খুবই ভয়ানক ও বিপদজনক। এটি তার ভাগ্যে জুটে যাকে আল্লাহ তা‘আলা তাওফীক দেয়। আর সালাতে খুশু অনুপস্থিত থাকা, বড় বিপদ ও মারাত্মক খারাপ কাজ। এ কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দো‘আতে বলতেন,
«اللهم إني أعوذ بك من قلب لا يخشع..»
“হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট এমন অন্তর থেকে আশ্রয় কামনা করি, যাতে খুশু নেই।”[151]
সালাতে খুশু অবলম্বনকারীদের বিভিন্ন স্তর রয়েছে। আর খুশু হল, মানুষের আত্মার কাজ। সালাতে খুশু কখনো বাড়ে আবার কখনো কমে। অনেক মানুষ আছে যাদের খুশু আসমান পর্যন্ত পৌঁছে, আবার কতক লোক আছে যারা তাদের সালাত হতে বের হয় তারা কিছুই বলতে পারে না। আর সালাতের মধ্যে মানুষ পাঁচটি শ্রেণীতে বিভক্ত:
এক- ঐ ব্যক্তি, যে তার স্বীয় আত্মার উপর অধিক অত্যাচারী, যে সালাত আদায় করার জন্য ভালোভাবে ওজু করে নি, সময়মত সালাত আদায় করে নি এবং সালাতের ফরয-ওয়াজিবগুলো ঠিক মত আদায় করে নি।
দুই- ঐ ব্যক্তি, যে সালাত সময়মত আদায় করেছে, সালাতের ফরয-ওয়াজিবগুলো ঠিক মত আদায় করেছে এবং সুন্দরভাবে ওজুও করেছে, কিন্তু সে তার অন্তরের চেষ্টাকে শয়তানের কু-মন্ত্রণায় পড়ে নষ্ট করে ফেলছে। ফলে সে ওয়াস-ওয়াসা ও চিন্তা-ফিকিরের সাথে সব কিছু হারিয়ে ফেলেছে।
তিন- ঐ ব্যক্তি, যে সালাতের রুকন ও ফরয-ওয়াজিব সমূহের হেফাজত করেছে এবং শয়তানে কু-মন্ত্রণা ও দুশ্চিন্তাকে প্রতিহত করতে সংগ্রাম করছে। সে সর্বদা সালাতের মধ্যে তার দুশমন শয়তানের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত, যাতে শয়তান তার সালাতের কোন অংশ ছিনিয়ে নিতে না পারে। এ লোকটি সালাত ও জিহাদ উভয় কাজে নিয়োজিত।
চার- ঐ ব্যক্তি, সে যখন সালাতে দাড়ায়, তখন সে সালাতের হক আদায় করে, আরকান-আহকাম ও ফরয-ওয়াজিবসমূহ আদায় করে এবং তার অন্তর সর্বদা সালাতের হক আদায় ও ফরয ওয়াজিবসমূহ আদায়ে ব্যস্ত থাকে, যাতে কোনো কিছু ছুটে না যায় এবং নষ্ট না হয়, বরং তার চিন্তা চেতনা তার সাধ্য অনুযায়ী সবসময় সালাত কায়েম করা, সালাতকে পরিপূর্ণ করা এবং সুন্দর করাতে ব্যয় হয়। মোটকথা, আল্লাহর ইবাদত করা ও সালাতের গুরুত্ব তাকে সালাতের মধ্যে ডুবিয়ে দিয়েছে।
পাঁচ- ঐ ব্যক্তি, যে যখন সালাতে দাড়ায়, তখন সে অনুরূপই (পূর্বে বর্ণিত রূপেই) দাঁড়ায়। কিন্তু এ ছাড়াও তার অন্তরের অবস্থা ও আল্লাহ রাব্বুল আল্লামীনের সামনে দণ্ডায়মান হওয়ার অবস্থা এমন হয়, যেন সে তার অন্তর দিয়ে আল্লাহকে দেখছে এবং সে আল্লাহর প্রত্যক্ষ দৃষ্টিতে আছে। আল্লাহর মহব্বত ও তার মহত্বে লোকটির অন্তর যেন একেবারেই পরিপূর্ণ। তার মনে উদ্রেক হয়, আল্লাহ যেন তাকে দেখছেন, আল্লাহ তাকে প্রত্যক্ষ করছেন। যাবতীয় ওয়াস-ওয়াসা ও বিভিন্ন ধরনের আশঙ্কা সবই ধুলায় মিশে গেছে। এখন তার মনের মাঝে কেবল আল্লাহর মহব্বত ও বড়ত্ব ছাড়া কোনো কিছুই স্থান পাচ্ছে না। তার ও তার রবের মাঝে আর কোনো পর্দা বা দূরত্ব রইল না, সব কিছু দূর হয়ে গেছে। এ লোকের মধ্যে ও সাধারণ সালাত আদায়কারীর মধ্যে আসমান ও যমিনের মধ্যে যে ব্যবধান রয়েছে তার চেয়েও অধিক ব্যবধান রয়েছে। এ লোক তার স্বীয় সালাতে তার প্রভুর সাথে ব্যস্ত, আল্লাহর দর্শনে তার চক্ষুদ্বয় সিক্ত।
প্রথম শ্রেণীর সালাত আদায়কারী, শাস্তি পাবে। দ্বিতীয় শ্রেণীর সালাত আদায়কারী, জিজ্ঞেসিত হবে। আর তৃতীয় শ্রেণীর সালাত আদায়কারীর গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে। চতুর্থ শ্রেণীর সালাত আদায়কারীকে সাওয়াব দেয়া হবে, আর পঞ্চম শ্রেণীর সালাত আদায়কারী আল্লাহর কাছের লোক। কারণ, তার জন্য সালাতের চক্ষুর সিক্ততার একটি অংশ নির্ধারিত করা হয়েছে। দুনিয়াতে সালাতের কারণে যার চক্ষুদ্বয় সিক্ত হবে, আখেরাতে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে, সে ধন্য হবে। দুনিয়াতেও সেটার (আল্লাহর নৈকট্যের) মাধ্যমে তার চক্ষুদ্বয় সিক্ত হবে। আর আল্লাহর সাথে যার চক্ষু শীতল হবে, তার সব চক্ষু প্রশান্ত হবে। আর আল্লাহর সাথে যার চোখ সিক্ত হতে পারল না, তার জীবন দুনিয়াতে বিষণ্ণ হয়ে পড়বে এবং তার না পাওয়ার যন্ত্রণায় সে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পড়বে।”[152]
অবশেষে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট আমাদের বিনীত প্রার্থনা এই যে, তিনি যেন আমাদের সালাতে খুশু অবলম্বন কারীদের অন্তর্ভুক্ত করেন। আর যে ব্যক্তি এ পুস্তিকা তৈরিতে অংশগ্রহণ করেছে, আল্লাহ যেন তাকে উত্তম বিনিময় দেন এবং এ পুস্তিকাটি যারা পড়েন, তাদের উপকার পৌঁছান। আমীন, আলহামদু লিল্লাহি রাব্বুল আলামীন। সকল হামদ তথা প্রশংসা সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহর জন্যই।

[1] সূরা বাকারাহ, আয়াত: ২৩৮।
[2] সূরা বাকারাহ, আয়াত: ৪৫।
[3] সূরা আরাফ, আয়াত: ১৭।
[4] মাদারেজ আস-সালেকীন, ১/৫২১।
[5] সূরা আল মুমিনুন, আয়াত: ১, ২।
[6] তাফসীরে ইবন কাসীর ৬/৪১৪।
[7] মাদারেজুস সালেকীন ১/৫২০।
[8] সূরা বাকারাহ, আয়াত: ৪৫।
[9] তা‘যীমু কাদরিস সালাত ১/১৮৮।
[10] মাদারেজুস সালেকীন ১/৫২১।
[11] কিতাবুর রূহ, পৃ: ৩১৪, দারুল ফিকির, জর্দান।
[12] তাফসীরে ইবন কাসীর ৫/৪৫৬; মুসনাদে আহমদ ৩/১২৮; সহীহুল জামে‘ ৩১২৪।
[13]  সূরা আহযাব, আয়াত: ৩৫।
[14]  সূরা, বাকারাহ, আয়াত: ৪৫।
[15] তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/১২৫।
[16] আল্লামা হাইসামী স্বীয় রহ. মাজমাউয যাওয়ায়েদ গ্রন্থে ২/১৩৬ বলেন: আল্লামা তাবরানী তার মু‘জামুল কাবীরে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। আর হাদিসটির সনদ হাসান। হাদিসটি ‘সহীহুত তারগীব কিতাবেও বর্ণিত, হাদিস নং ৫৪৩ এবং তার লেখক শাইখ আলবানী বলেন, হাদিসটি বিশুদ্ধ।
[17]  দেখুন, মাদারেজ: ১/৫২৬।
[18] সূরা বাকারাহ, আয়াত: ৪৫।
[19] সূরা মুমিনুন, আয়াত: ১, ১১।
[20] মাজমু‘ ফাতাওয়া ২২/৫৫৩-৫৫৮
[21] আবু দাউদ, হাদিস নং ৪২৫, সহীহুল জামে‘, হাদিস: ৩২৪২।
[22] বুখারি, হাদিস: ১৫৮, নাসায়ী ৯৫/১, সহীহুল জামে‘: ৬১৬৬।
[23] মাজমু‘ ফাতাওয়া: ৬০৬-৬০৭।
[24] বাযযার রহ.। তিনি বলেন, আলী রা. হতে এ সনদের থেকে উত্তম আর কোন বর্ণনা আমি জানি না। দেখুন: কাশফুল আসতার। আল্লামা হাইসামী রহ. বলেন, হাদিসটির বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য, পৃ: ২/৯৯, আল্লামা আলবানী রহ. বলেন, হাদিসটির সনদ উত্তম, দেখুন: আল-আহাদিসুস সাহীহা: পৃ: ১২১৩।
[25] সূরা আ‘রাফ, আয়াত: ৩১।
[26] আল্লামা আলবানী রহ. সালাতের প্রদ্ধতি কিতাবে হাদিসটির সনদকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। পৃ: ১৩৪। আল্লামা ইবনে খুযাইমাহ রহ এর নিকটও হাদিসটি বিশুদ্ধ। যেমনটি উল্লেখ করেন, হাফেয ইবনে হাজার রহ. ফতহুল বারীতে। দেখুন, পৃ: ২/৩০৮।
[27] আবু দাউদ, হাদিস নং ৫৩৬, ৮৫৮।
[28] আহমদ ও হাকেম, হাদিস: ১/২৯ এবং সহীহুল জামে‘, হাদিস: ৯৯৭।
[29] কবীর গ্রন্থে আল্লামা তাবরানী ৪/১১৫, সহীহুল জামে‘তে হাদিসটিকে হাসান বলা হয়েছে।
[30] আল্লামা আলবানীর সিলসিলাতুস সাহীহা, হাদিস: ১৪২১। আল্লামা সুয়ুতী বলেন, হাফেজ ইবনে হাজার হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন।
[31] আহমদ, হাদিস: ৫/৪১২। সহীহুল জামে‘তে হাদিস নং ৭৪২।
[32] সূরা সাদ, আয়াত: ২৯।
[33] সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৭৩।
[34] মুকাদ্দামাতু শাইখ মাহমূদ শাকের লি তাফসীর তাবারী, ১/১০।
[35]  ইবনু খুযাইমা ১/২৭১, আহমদ ৫/১৪৯। শাইখুল আলবানীর সিফাতুস সালাত, পৃ: ১০২।
[36]  সূরা মায়েদা, আয়াত: ১১৮।
[37] মুসলিম, হাদিস: ৭৭২।
[38]  তা‘যীমু কাদরিস সালাত ১/৩২৭।
[39]  বুখারি, ৯/৫৯; আহমাদ, ৩/৪৩।
[40] সূরা গাফের, আয়াত: ৭০,৭২।
[41] বাকারাহ, আয়াত: ২৮১।
[42] সূরা নাহাল আয়াত: ১৮।
[43] আল্লামা কুরতবী রহ. এর তাযকিরাহ, পৃ: ১২৫।
[44] সূরা আন‘আম, আয়াত: ২৭।
[45] সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ১০৯।
[46] ইবনু হিব্বান। আর শাইখ আলবানী সিলসিলা সহীহাতে (হাদিস নং ৬৮) বলেন, হাদিসটির সনদ উত্তম।
[47] বুখারি, ৭৪৭।
[48] বুখারি ২/২৮৪।
[49]  আবু দাউদ, হাদিস নং ৪০০১। আল্লামা আলবানী রহ. হাদিসটিকে সহীহ বলেন এবং তার বিভিন্ন সনদ উল্লেখ করেন, ২/৬০।
[50] মুসনাদে আহমদ ৬/২৯৪; বিশুদ্ধ সনদে। আরও দেখুন, আল্লামা আলবানী রহ. এর ‘সিফাতুস সালাত’ গ্রন্থে এ বিষয়ে আলোচনা, পৃ. ১০৫।
[51] মুসলিম, হাদিস নং ৭৩৩।
[52]  হাকেম, হাদিস: ১/৫৭৫, সহীহুল জামে‘, হাদিস: ৩৫৮১।
[53]  ইবনু মাজাহ্‌, হাদিস: ১/১৩৩৯, সহীহুল জামে‘, হাদিস: ২২০২।
[54] মুসলিম, সালাত অধ্যায়; পরিচ্ছেদ: প্রতি রাকাতে সূরা ফাতেহা ওয়াজিব হওয়া বিষয়ে আলোচনা।
[55]  মুস্তাদরাকে হাকেম, ১/২৩৬; সহীহুল জামে‘, হাদিস: ১৫৩৮।
[56]  আবু দাউদ, হাদিস: ৬৯৫, ১/৪৪৬। সহীহুল জামে‘, হাদিস: ৬৫১।
[57]  আবু দাউদ হাদিস: ৬৯৫, ১/৪৪৬, সহীহুল জামে‘ ৬৫০।
[58]  বুখারি, ফতহুল বারী দেখুন। ১/৫৭৪, ৫৭৯।
[59]  মুসলিম, হাদিস ১/২৬০ সহীহুল জামে‘, হাদিস: ৭৫৫।
[60]  দেখুন, সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যা, ৪/২১৬।
[61]  মুসলিম, হাদিস নং ৪০১।
[62] আবুদাউদ, হাদিস ৭৫৯। দেখুন ইরওয়াউল গালীল: ২/৭১। তবে আবু দাউদের শব্দ হচ্ছে, «يَضَعُ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى يَدِهِ الْيُسْرَى، ثُمَّ يَشُدُّ بَيْنَهُمَا عَلَى صَدْرِهِ وَهُوَ فِي الصَّلَاةِ» এর সনদটি মুরসাল। [সম্পাদক]
[63] মুজামে কবীরে আল্লামা তিবরানী, হাদিস: ১১৪৮৫। আল্লামা হাইসামী রহ. বলেন, আল্লামা তীবরানী হাদিসটিকে আওসাতে উল্লেখ করেন এবং হাদিসটির বর্ণনাকারীগণ বিশুদ্ধ বর্ণনাকারী; আল-মাজমা: ৩/১৫৫।
[64] দেখুন, আল্লাম ইবনু রজব রহ. এর আল-খুশু ফিস সালাত, পৃ: ২১।
[65]  দেখুন, ফতহুল বারী: ২/২২৪।
[66]  হাকেম, হাদিস নং ১/৪৭৯। আর তিনি বলেন, হাদিসটি শাইখাইনের শর্ত অনুযায়ী বিশুদ্ধ। আল্লামা আলবানী রহ. সালাতের হাদিসটি বিশুদ্ধ হওয়ার বিষয়ে সহমত পোষণ করেন।  পৃ: ৮৯।
[67] হাকেম ১/৪৭৯ মুস্তাদরাকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হাদিসটি শাইখাইনের শর্ত অনুযায়ী বিশুদ্ধ। আল্লামা যাহাবী রহ. হাদিসটি বিশুদ্ধ হওয়ার বিষয়ে সহমত পোষণ করেন। আল্লামা আলবানী রহ. তাদের উভয়ের সাথে একমত পোষণ করেন; দেখুন, এরওয়াল গালিল: ২/৭৩।
[68] ইবনু খুযাইমা: ১/৩৫৫; হাদিস: ৭১৯। আর মুহাক্কিক বলেন, হাদিসটির সনদ বিশুদ্ধ। দেখুন, সালাতের পদ্ধতি, পৃ: ১৩৯। অপর এক বর্ণনায় এসেছে, (وأشار بالسبابة ولم يجاوز بصره إشارته) মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ৪/৩, আবু দাউদ, হাদিস: ৯৯০।
[69]  যাদুল মা‘আদ: ১/২৯৩।
[70]  হাসান সনদে ইমাম আহমদ: ২/১১৯। সালাতের পদ্ধতি, পৃ: ১৫৯।
[71] আল-ফাতহুর রাব্বানী, লিস সা‘আতী, ৪/১৫।
[72] সাহাবীদের আমলে বর্ণিত আছে,
(كان أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم يأخذ بعضهم على بعض. يعني : الإشارة بالأصبع في الدعاء)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণ একে অপরকে পাকড়াও করতেন। অর্থাৎ, দো‘আয় আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করার বিষয়ে।
ইবনু আবি শাইবা বিশুদ্ধ সনদে। আলবানী, সিফাতুস সালাত, পৃ: ১৪১।
[73] সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৮৫।
[74] তাফসীরুল কুরআনিল ‘আজিম ৫/২৩৮।
[75] সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ১০৯।
[76]  বর্ণনায়, ইমাম মুসলিম স্বীয় সহীহ, হাদিস নং ১৩৩।
[77] সূরা নিসা, আয়াত: ৭৬।
[78] মাজমু‘ ফাতাওয়া ২২/৬০৮
[79] আল ওয়াবিলুস সাইয়্যেব: ৪৩
[80] আল ওয়াবিলুস সাইয়্যেব: ৩৬।
[81]  মুসলিম: ২২০৩।
[82] বুখারি, সেজদা সাহু অধ্যায়: নফল ও ফরয সালাতে সেজদা সাহুর করার আলোচনা।
[83]  মুসলিম, হাদিস: ৩৮৯।
[84]  তাবরানী, খণ্ড ১১, পৃ: ২২২, হাদিস: ১১৫৫৬; মাজমায়ুয যাওয়েদ ১/২৪২ গ্রন্থে বলা হয়েছে, হাদিসটির বর্ণনাকারীগণ সহীহ হাদীসের বর্ণনাকারী।
[85] সূরা আনফাল, আয়াত: ৪৫।
[86] সূরা নিসা, আয়াত: ১০৩।
[87]  মাজমু‘ ফাতাওয়া: ২২/৬১০।
[88]  আল্লামা ইবনে রজবের কিতাব, আল-খুশু ফিস সালাত, পৃ: ২২।
[89]  তা‘যীমু কাদরিস সালাত: ১/১৮৮।
[90] সালাহুল ইয়াকজান লি তারদিশ-শাইতান: আব্দুল আজিজ আস-সালমান: ২০০।
[91]  ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. এর মাজমু‘ ফাতাওয়া: ২২/৬০৫।
[92] আল-খুশু ফিস সালাত, ২৭-২৮।
[93] তা‘যীমু কাদরিস সালাত, ১/৫৮।
[94] আল-কাওয়াকিবুদ দুররিয়্যাহ ফী মানাকিবিল মুজতাহিদ ইবন তাইমিয়্যাহ, লি মার‘য়ী আল-কারামী, পৃ. ৮৩। দারুল গারবিল ইসলামী।
[95]  মুসলিম, ১/২০৬।
[96]  ইমাম আহমদ: ৪/৩২১। হাদিসটি আলবানী রহ. সহীহুল জামে‘ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, হাদিস নং ১৬২৬।
[97] বাইহাকী, সুনানুল কুবরা ৩/১০। সহীহুল জামে‘তেও হাদিসটি বর্ণিত।
[98] বাইহাকী সুনানুল কুবরা ৩/১০।
[99]  আল-ওয়াবিলুস-সাইয়্যেব: ৩৭।
[100]  সূরা আরাফ, আয়াত: ৫৪।
[101] তিরমিযি: দু’আ অধ্যায় ১/৪২৬। আলবানী সহীহ তিরমিযিতে হাদিসটিকে হাসান বলেছেন।
[102] মুসলিম, সালাত অধ্যায়, রুকু-সেজদায় কি বলা হবে সে বিষয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে। হাদিস: ২১৫।
[103] বর্ণনায় মুসলিম, হাদিস: ২০৭, সালাত অধ্যায়। পরিচ্ছেদ: রুকু সেজদায় কুরআন পড়া নিষিদ্ধ হওয়া প্রসঙ্গে।
[104] মুসলিম, সালাত অধ্যায়; পরিচ্ছেদ: রুকু সেজদায় কি বলা হবে। হাদিস নং ২১৬।
[105]  নাসায়ী, হাদিস: ২/৫৬৯।
[106]  বুখারি, ফতহুল বারী: ৩৯১/১০।
[107]  মুসলিম: হাদিস: ৩/১৬৬৮।
[108]  আবু দাউদ: হাদিস: ২০৩০ সহীহুল জামে‘: হাদিস: ২৫০৪।
[109] আল ওয়াবিলুস সাইব, দারুল বায়ান: পৃ: ২২।
[110]  মুসলিম, হাদিস নং ৫৫৬; ১/৩৯১।
[111]  মুসলিম, হাদিস নং ৫৬০।
[112] বুখারি ও মুসলিম; বুখারি কিতাবুল আযান, পরিচ্ছেদ: যখন খানা উপস্থিত হয় এবং সালাতের একামত দেয়া হয় তখন করনীয় প্রসঙ্গে। মুসলিম: হাদিস নং ৫৫৯-৫৫৯।
[113] ইবনু মাজাহ্‌, হাদিস নং ৬১৭। সহীহুল জামে‘, হাদিস: ৬৮৩২। হাকেন অর্থ, পায়খানার বেগ হলে পায়খানা না করে তা আটকে রাখা।
[114]  আবু দাউদ, হাদিস: ৮৮। সহীহুল জামে‘, হাদিস: ২৯৯।
[115]  মুসলিম, হাদিস: ৫৬০।
[116]  বুখারি, হাদিস: ২১০।
[117]  বুখারি হাদিস নং ২০৯।
[118]  ফতহুল বারী, কিতাবুল ওজুর ব্যাখ্যা, পরিচ্ছেদ: ঘুম হতে জেগে ওজু করা বিষয়ে আলোচনা।
অর্থাৎ ফরয সালাতেও যদি কারও ঘুম বা তন্দ্রা আসে, তবে সে যেন ঘুমিয়ে নেয়, তবে তা হবে পর্যাপ্ত সময় অবশিষ্ট থাকা অবস্থায়। নতুবা ঘুম তাড়িয়ে ফরয সালাত সময়মত আদায় করতে হবে। [সম্পাদক]
[119] আবু দাউদ, হাদিস:৬৯৪; সহীহুল জামে‘ হাদিস ৩৭৫। তিনি বলেন, হাদিসটি হাসান।
[120] ‘আওনুল মাবুদ: ২/৩৮৮।
[121]  দেখুন, ফতহুল বারী, সালাত অধ্যায়।
[122]  বুখারি, সালাত অধ্যায়।
[123]  দেখুন, ফতহুল বারী, উল্লেখিত সূত্র।
[124]  দেখুন ফতহুল বারী, হাদিস: ৭৯/৩।
[125]  আবু দাউদ, হাদিস: ৯৪৬; সহীহুল জামে‘, হাদিস: ৭৪৫২।
[126]  বুখারি ৩/৭২।
[127]  দেখুন, ফতহুল বারী, নং ৩/৭৯।
[128]  আবু দাউদ, হাদিস ২/৮৩; সহীহুল জামে‘, হাদিস: ৭৫২ ।
[129]  ইমাম আহমদ: ২/৩৬। সহীহুল জামে‘: ১৯৫১।
[130]  আবু দাউদ: ৯০৯ সহীহ আবু দাউদ।
[131] বুখারি: কিতাবুল আযান, পরিচ্ছে: সালাতে এদিক সেদিক তাকানো প্রসঙ্গে আলোচনা।
[132]  আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেমের আল-ওয়াবিলুস সাইয়্যেব, পৃ: ৩৬।
[133]  মাজমু‘ ফাতাওয়া: ২২/৫৫৯।
[134]  আহমদ: ২৯৪/৫। সহীহুল জামে‘, হাদিস: ৭৬২।
[135]  মুসলিম, হাদিস: ৪২৯।
[136]  ইমাম আহমদ: ২৫৮/৫; সহীহুল জামে‘: ৫৫৭৪।
[137]  বুখারি, হাদিস: ৩৯৭।
[138] বুখারি, হাদিস নং ৪১৭, ৫১৩।
[139] বুখারী, নং ১৪১৭/৫১৩। ফাতহুল বারী।
[140] মুসলিম, হাদিস ৪/২২৯৩।
[141] আবুদাউদ, হাদিস: ৯৪৭। সহীহ বুখারিতে সালাতে কর্ম করা অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: সালাতে কোমরে হাত দেয়া প্রসঙ্গে আলোচনা।
[142]  ইমাম আহমদ ১/১০৬ ও অন্যান্যরা। হাফেয ইরাকী তাখরীজুল এহইয়া কিতাবে, হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। দেখুন, আল-ইরওয়া: ৪/৯৪।
[143] আবু দাউদ, হাদিস নং ৬৪৩। সহীহুল জামে‘, হাদিস: ৬৮৮৩; এবং বলেছেন, হাদিসটি হাসান।
[144] ২/৩৪৭।
[145] মিরকাতুল মাফাতিহ কিতাবের ২/২৩৬ নং পৃষ্ঠায় বর্ণিত, সদল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ
[146] দেখুন: মিরকাতুল মাফাতিহ: ২/২৩৬।
[147] আহমদ: ৩/৪২৮।
[148] দেখুন, ফতহুর রাব্বানী ৪/৯১।
[149]  ইমাম আহমাদ: ২/৩১১। সহীহ আত-তারগীব: হাদিস:  ৫৫৬।
[150] মাদারেজুস সালেকীন ১/১১২।
[151] তিরমিযি, হাদিস ৫/৪৮৫। সহীহ সুনানে তিরমিযি: হাদিস নং ২৭৬৯।
[152] আল-ওয়াবিলুস সাইয়্যেব, পৃ. ৪০।
____________________________________________________________

Leave a comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.