আত্মসমালোচনাঃ গুরুত্ব ও পদ্ধতি


আত্মসমালোচনা : গুরুত্ব ও পদ্ধতি মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ মানবজাতিকে আল্লাহ তা‘আলা আশরাফুল মাখলূক্বাত হিসাবে স্বাধীন চিন্তাশক্তি দিয়ে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। ফলে তার মাঝে তিনপ্রকার নফসের সম্মিলন ঘটেছে। নাফসে আম্মারাহ, নফসে লাউওয়ামাহ এবং নাফসে মুতমাইন্নাহ। এর মধ্যে নফসে আম্মারাহ বা কুপ্রবৃত্তি মানুষকে জৈবিক কামনা-বাসনা ও দুনিয়ার লোভ- লালসার দিকে আকৃষ্ট করে তাকে মন্দ কাজের দিকে নিয়ে যায়। আল্লাহ বলেন, ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻨَّﻔْﺲَ ﻷَﻣَّﺎﺭَﺓٌ ﺑِﺎﻟﺴُّﻮْﺀِ ﺇِﻻَّ ﻣَﺎ ﺭَﺣِﻢَ ﺭَﺑِّﻲْ ‘নিশ্চয়ই মানুষের মন মন্দ কর্মপ্রবণ। কিন্তু সে মন নয়, আমার পালনকর্তা যার প্রতি অনুগ্রহ করেন’ (ইউসুফ ১২/৫৩)। অধিক হারে মন্দকাজ বান্দার অন্তরকে কঠিন করে তোলে ও ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। রাসুল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যখন বান্দা কোন পাপ করে তখন তার অন্তরে কালো দাগ পড়ে যায়। যখন সে তওবা করে তখন সেটা তুলে নেওয়া হয়। আর ইস্তেগফারের মাধ্যমে অন্তরকে পরিষ্কার করা হয়। আর যদি পাপ বাড়তেই থাকে তাহ’লে দাগও বাড়তে থাকে। আর এটাই হ’ল মরিচা।[1] যেমন আল্লাহ বলেন, ‘বরং তাদের কৃতকর্মের ফলেই মনের উপর মরিচা জমে গেছে’ (মুতাফফিফীন ৮৩/১৪)। দুনিয়াতে প্রতিটি মানবসত্তাই মন্দ কাজে লিপ্ত হয়ে থাকে। তাই তা থেকে বেঁচে থাকার জন্য আত্মসমালোচনা একান্ত প্রয়োজন। প্রতিদিন মানুষ নিজেই নিজের পাপের হিসাব নেওয়ার মাধ্যমে পুনরায় ঐ পাপে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকতে পারে। এছাড়া ব্যক্তির মাঝে যে পাপবোধ সৃষ্টি হয় আত্মসমালোচনা তাকে ক্ষমা লাভের উপযুক্ত করে তোলে। নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা পেশ করা হ’ল। আত্মসমালোচনার পরিচয় : আভিধানিক অর্থে আত্মসমালোচনা হ’ল নিজের সম্পর্কে সমালোচনা করা। একে আরবীতে বলা হয়, ﻣﺤﺎﺳﺒﺔ ﺍﻟﻨﻔﺲ অর্থাৎ স্বীয় আত্মার হিসাব গ্রহণ করা। লিসানুল আরব অভিধানে বলা হয়েছে, ‘মুহাসাবা’র শাব্দিক অর্থ হ’ল গণনা করা বা হিসাব করা। সুতরাং ‘মুহাসাবাতুন নাফস’-এর অর্থ হচ্ছে আত্মার হিসাব গ্রহণ করা। ইংরেজীতে একে বলা হয়, self-criticism বা self-accountability অর্থাৎ আত্মসমালোচনা। পারিভাষিক অর্থে আত্মসমালোচনা বলতে বুঝায়, সচেতনভাবে কোন কাজ সম্পন্ন করা বা পরিত্যাগ করা, যাতে কৃতকর্ম সম্পর্কে নিজের সুস্পষ্ট ধারণা থাকে। সুতরাং যদি তা আল্লাহর সন্তুষ্টিমূলক কাজ হয়, তবে তা নিষ্ঠার সাথে পালন করা। আর যদি তা আল্লাহর অসন্তুষ্টিমূলক কাজ হয় তবে তা থেকে সর্বতোভাবে বিরত থাকা। সাথে সাথে নিজেকে সর্বদা আল্লাহর সন্তুষ্টিমূলক কাজ তথা ইবাদতে মশগূল রাখা। আল্লামা ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, আত্মসমালোচনার অর্থ হচ্ছে- নিজের করণীয় এবং বর্জনীয় পৃথক করে ফেলা। অতঃপর সর্বদা ফরয ও নফল কতর্ব্যসমূহ আদায়ের জন্য প্রস্ত্তত থাকা এবং হারাম বা নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ পরিত্যাগ করার উপর সুদৃঢ় থাকা। তিনি আরো বলেন, আত্মসমালোচনার অর্থ হ’ল প্রতিটি কাজে সর্বপ্রথম আল্লাহর হক্ব সমূহের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া; অতঃপর সে হক্বগুলো যথাযথভাবে আদায় করা হচ্ছে কি- না সেদিকে লক্ষ্য রাখা (আল-ফাওয়ায়েদ) । আত্মসমালোচনার হুকুম ও গুরুত্ব : ‘মুহাসাবাতুন নাফস’ বা আত্মসমালোচনাকে প্রত্যেক মুমিনের জন্য অপরিহার্য ঘোষণা করে আল্লাহ বলেন, ﻱﺍَ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﺍﺗَّﻘُﻮﺍ ﺍﻟﻠﻪَ ﻭَﻟْﺘَﻨْﻈُﺮْ ﻧَﻔْﺲٌ ﻣَﺎ ﻗَﺪَّﻣَﺖْ ﻟِﻐَﺪٍ ﻭَﺍﺗَّﻘُﻮﺍ ﺍﻟﻠﻪَ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠﻪَ ﺧَﺒِﻴْﺮٌ ﺑِﻤَﺎ ﺗَﻌْﻤَﻠُﻮْﻥَ، ﻭَﻻَ ﺗَﻜُﻮﻧُﻮْﺍ ﻛَﺎﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﻧَﺴُﻮﺍ ﺍﻟﻠﻪَ ﻓَﺄَﻧْﺴَﺎﻫُﻢْ ﺃَﻧْﻔُﺴَﻬُﻢْ ﺃُﻭْﻟَﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﺍﻟْﻔَﺎﺳِﻘُﻮْﻥَ ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য উচিত আগামী কালের জন্য (অর্থাৎ আখিরাতের জন্য) সে কি প্রেরণ করেছে, তা চিন্তা করা। আর তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছে, ফলে আল্লাহ তাদেরকে আত্মভোলা করে দিয়েছেন। নিশ্চয়ই তারা ফাসিক’ (হাশর ১৮) । ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ রাববুল আলামীন প্রত্যেক মুমিনের জন্য আত্মসমালোচনাকে ওয়াজিব করে দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ বলছেন, তোমাদের অবশ্যই চিন্তা করা কর্তব্য যে, আগামী দিনের জন্য তুমি যা প্রেরণ করেছ তা তোমার জান্নাতের পথ সুগম করছে, না-কি তোমাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে? [2] অন্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা আত্মসমালোচনাকারীদের প্রসংশা করে বলেন, ﺇِﻥَّ ﺍﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﺍﺗَّﻘَﻮﺍْ ﺇِﺫَﺍ ﻣَﺴَّﻬُﻢْ ﻃَﺎﺋِﻒٌ ﻣِّﻦَ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥِ ﺗَﺬَﻛَّﺮُﻭﺍْ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻫُﻢْ ﻣُّﺒْﺼِﺮُﻭْﻥَ – ‘যাদের মনে আল্লাহর ভয় রয়েছে, তাদের উপর শয়তানের আগমন ঘটার সাথে সাথেই তারা সতর্ক হয়ে যায় এবং তখনই তাদের বিবেচনা শক্তি জাগ্রত হয়ে উঠে’ (আ‘রাফ ৭/২০১)। আত্মসমালোচনার গুরুত্ব সম্পর্কে ওমর (রাঃ)-এর নিম্নোক্ত বাণীটি প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন, ﺡَﺍﺳِﺒُﻮْﺍ ﺃَﻧْﻔُﺴَﻜُﻢْ ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥْ ﺗُﺤَﺎﺳَﺒُﻮْﺍ، ﻭَﺯِﻧُﻮْﺍ ﺃَﻧْﻔُﺴَﻜُﻢْ ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥْ ﺗُﻮْﺯِﻧُﻮْﺍ. ﻓَﺈِﻧَّّﻪُ ﺃَﻫْﻮَﻥُ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻓِﻲْ ﺍﻟْﺤِﺴَﺎﺏِ ﻏَﺪًﺍ، ﺃَﻥْ ﺗُﺤَﺎﺳَﺒُﻮْﺍ ﺃَﻧْﻔُﺴَﻜُﻢُ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ، ﻭَﺗَﺰَﻳَّﻨُﻮْﺍ ﻟِﻠْﻌَﺮْﺽِ ﺍﻷَﻛْﺒَﺮِ ﻳَﻮْﻣَﺌِﺬٍ ﺗُﻌْﺮَﺿُﻮْﻥَ ﻻَ ﺗَﺨْﻔَﻰ ﻣِﻨْﻜُﻢْ ﺧَﺎﻓِﻴَﺔٌ ‘তোমরা নিজেদের আমলনামার হিসাব নিজেরাই গ্রহণ কর, চূড়ান্ত হিসাব দিবসে তোমাদের কাছ থেকে হিসাব গৃহীত হবার পূর্বেই। আর তোমরা তোমাদের আমলনামা মেপে নাও চূড়ান্ত দিনে মাপ করার পূর্বেই। কেননা আজকের দিনে নিজের হিসাব নিজেই গ্রহণ করতে পারলে আগামীদিনের চূড়ান্ত মুহূর্তে তা তোমাদের জন্য সহজ হয়ে যাবে। তাই সেই মহাপ্রদর্শনীর দিনের জন্য তোমরা নিজেদেরকে সুসজ্জিত করে নাও, যেদিন তোমরা (তোমাদের আমলসহ) উপস্থিত হবে এবং তোমাদের কিছুই সেদিন গোপন থাকবে না’।[3] অনুরূপভাবে হাসান বছরী (রহঃ) বলেন, ﺍﻟﻤﺆﻣﻦ ﻗﻮّﺍﻡ ﻋﻠﻰ ﻧﻔﺴﻪ ﻳﺤﺎﺳﺐ ﻧﻔﺴﻪ ﻟﻠﻪ، ﻭﺇﻧﻤﺎ ﺧﻒّ ﺍﻟﺤﺴﺎﺏ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ ﻋﻠﻰ ﻗﻮﻡ ﺣﺎﺳﺒﻮﺍ ﺃﻧﻔﺴﻬﻢ ﻓﻲ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ، ﻭﺇﻧﻤﺎ ﺷﻖّ ﺍﻟﺤﺴﺎﺏ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ ﻋﻠﻰ ﻗﻮﻡ ﺃﺧﺬﻭﺍ ﻫﺬﺍ ﺍﻷﻣﺮ ﻣﻦ ﻏﻴﺮ ﻣﺤﺎﺳﺒﺔ অর্থাৎ মুমিন ব্যক্তিকে স্বীয় আত্মার পরিচালক হিসাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই আত্মসমালোচনা করতে হবে। যারা দুনিয়াতে আত্মসমালোচনা করবে, ক্বিয়ামতের দিন অবশ্যই তাদের হিসাব হালকা হবে। আর যারা এ থেকে বিরত থাকবে, ক্বিয়ামতের দিন তাদের হিসাব কঠিন হবে।[4] ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন, ﺃَﻋْﻘَﻞُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﻣَﻦْ ﺗَﺮَﻙَ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥْ ﺗُﺘْﺮَﻛَﻪُ، ﻭَﺃَﻧَﺎﺭَ ﻗَﺒْﺮَﻩُ ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥْ ﻳُّﺴْﻜِﻨَﻪُ، ﻭَﺃَﺭْﺿَﻰ ﺭَﺑَّﻪُ ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥْ ﻳَّﻠْﻘَﺎﻩُ ﻭَﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟْﺠَﻤَﺎﻋَﺔَ ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥْ ﺗُﺼَﻠَّﻲ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟْﺠَﻤَﺎﻋَﺔُ، ﻭَﺣَﺎﺳَﺐَ ﻧَﻔْﺴَﻪُ ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥْ ﺗُﺤَﺎﺳَﺒَﻪُ ‘সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি সে-ই যে দুনিয়াকে পরিত্যাগ করে দুনিয়া তাকে পরিত্যাগ করার পূর্বেই। কবরকে আলোকিত করে কবরে বসবাস করার পূর্বেই। স্বীয় প্রভুকে সন্তুষ্ট করে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ লাভের পূর্বেই, জামা‘আতে ছালাত আদায় করে তার উপর জামা‘আতে ছালাত (অর্থাৎ জানাযার ছালাত) পঠিত হবার পূর্বেই। নিজের হিসাব নিজেই গ্রহণ করে হিসাব দিবসে তার হিসাব গ্রহণ করার পূর্বেই’। মালেক বিন দীনার (রহঃ) বলেছেন, ﺭﺣﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺒﺪﺍً ﻗﺎﻝ ﻟﻨﻔﺴﻪ: ﺃﻟﺴﺖ ﺻﺎﺣﺒﻪ ﻛﺬﺍ؟ ﺃﻟﺴﺖ ﺻﺎﺣﺒﺔ ﻛﺬﺍ؟ ﺛﻢ ﺫﻣﻬﺎ، ﺛﻢ ﺧﻄﻤﻬﺎ، ﺛﻢ ﺃﻟﺰﻣﻬﺎ ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ ﻓﻜﺎﻥ ﻟﻬﺎ ﻗﺎﺋﺪﺍً. ‘আল্লাহর রহম ঐ বান্দার প্রতি যে তার নফসকে (কোন মন্দ কাজের পর) বলে, তুমি কি এর সাথী নও? তুমি কি এর সঙ্গী নও? অতঃপর তাকে নিন্দা করে, অতঃপর তার লাগাম টেনে ধরে, অতঃপর আল্লাহর কিতাবের উপরে তাকে আটকে রাখে তখন সে হয় তার পরিচালক’।[5] মাইমুন বিন মিহরান বলেন, ﻻ ﻳﻜﻮﻥ ﺍﻟﻌﺒﺪ ﺗﻘﻴﺎً ﺣﺘﻰ ﻳﻜﻮﻥ ﻟﻨﻔﺴﻪ ﺃﺷﺪ ﻣﺤﺎﺳﺒﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﺸﺮﻳﻚ ﻟﺸﺮﻳﻜﻪ ‘কোন বান্দা প্রকৃত মুত্তাক্বী হ’তে পারে না, যতক্ষণ না অন্তরের হিসাব করে, এমনকি অংশীদারের চেয়েও বেশী শক্ত করে হিসাব করে’।[6] আত্মসমালোচনার উপকারিতা: ১. নিজের দোষ-ত্রুটি নিজের সামনে প্রকাশ করার মাধ্যমে মানুষ স্বীয় ভুল- ত্রুটি জানতে পারে। ফলে তার হৃদয় ভাল কাজের দিকে আকৃষ্ট হয় এবং মন্দ কাজ থেকে দূরে থাকতে পারে। ২. আত্মসমালোচনা দ্বীনের উপর দৃঢ়তা অর্জনের সবচেয়ে কার্যকরী মাধ্যম, যা মানুষকে আল্লাহর দরবারে মুহসিন ও মুখলিছ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করে। ৩. আত্মসমালোচনার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর নে‘মতসমূহ, অধিকারসমূহ জানতে পারে। আর সে যখন আল্লাহর নে‘মত ও তার অবস্থান সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে, তখন সে আল্লাহর নে‘মতের শুকরিয়া আদায়ে উদ্বুদ্ধ হয়। ৪. আত্মসমালোচনার মাধ্যমে মানুষের মাঝে পরকালীন জওয়াবদিহিতার উপলব্ধি সৃষ্টি হয়। মাইমুন বিন মিহরান বলতেন, ‘মুত্তাক্বী ব্যক্তি সেই, যে নিজের জওয়াবদিহিতা এমন কঠোরভাবে গ্রহণ করে যেন সে একজন অত্যাচারী শাসক’।[7] ৫. আত্মসমালোচনা জীবনের লক্ষ্যকে সবসময় সজীব করে রাখে। এর মাধ্যমে আমরা অনুভব করতে পারি আমাদেরকে এই পৃথিবীর বুকে অনর্থক সৃষ্টি করা হয়নি। পার্থিব জীবন শুধু খাওয়া-দাওয়া, হাসি-ঠাট্টার নয়, এ জীবনের পরবর্তী যে অনন্ত এক জীবন, তার জন্য যে আমাদের সবসময় প্রস্ত্তত থাকতে হবে, আত্মসমালোচনা আমাদেরকে সর্বক্ষণ তা স্মরণ করিয়ে দেয়। ৬. মুহাসাবার ফলে কোন পাপ দ্বিতীয়বার করতে গেলে বিবেকে বাধা দেয়। ফলে পাপের কাজ থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ আমাদের জন্য সহজ হয়ে যায়। আত্মসমালোচনা না করার ফলাফল : ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, মুহাসাবা পরিত্যাগ করার অর্থ কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে চলা। এতে মানুষের অন্তর পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। অর্থাৎ মুহাসাবা পরিত্যাগ করার ফলে দ্বীনের প্রতি তার শিথিলতা চলে আসে, যা তাকে নিশ্চিতভাবেই দুনিয়াবী জীবন ও পরকালীন জীবনে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়। কেবলমাত্র আত্মগর্বী, প্রতারিত আত্মাই মুহাসাবা পরিত্যাগ করতে পারে। ফলশ্রুতিতে সে কোন কিছুর পরিণাম চিন্তা করে না। সমস্ত পাপ তার কাছে অত্যন্ত সহজ বিষয় হয়ে যায়। অবশেষে একসময় পাপ থেকে বেরিয়ে আসাটা তার কাছে অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। কখনো যদি সে সৎপথের সন্ধান পায়ও, তবুও সে তার অন্যায় অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসা অত্যন্ত কঠিন বলে মনে করে।[8] আত্মসমালোচনার পদ্ধতি : আত্মসমালোচনা দু’ভাবে করা যায়। যথা- 1. 1. কোন আমল শুরু করার পূর্বে মুহাসাবা করা : অর্থাৎ কোন কাজের সংকল্প করার পূর্বেই সে কাজটি সম্পর্কে চিন্তা করতে হবে যে, কাজটি ইহলৌকিক ও পরলৌকিক জীবনের জন্য উত্তম, না ক্ষতিকর? কাজটি কি হারাম, না হালাল? কাজটিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি নিহিত রয়েছে, না অসন্তুষ্টি? অতঃপর যখন কাজটি উত্তম হবে, তখন আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা রেখে কাজে নেমে পড়তে হবে। আর কাজটি খারাপ হ’লে একইভাবে পূর্ণ একনিষ্ঠতা ও তাওয়াক্কুলের সাথে তা থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রতিদিন সকালে আন্তরিকভাবে প্রত্যয় দীপ্ত হ’তে হবে যেন সারাদিন সৎ আমলের সাথে সংযুক্ত থেকে অসৎ আমল থেকে বিরত থাকা যায়। 2. 2. আমল শেষ করার পর মুহাসাবা করা : এটা তিনভাবে করা যায়- (ক) আল্লাহর আদেশ সমূহ আদায়ের ব্যাপারে আত্মসমালোচনা করা : আমাদের উপর নির্দেশিত ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত ও নফলগুলি পর্যালোচনা করা। নিজেকে জিজ্ঞেস করতে হবে যে, আমি কি আমার উপর আরোপিত ফরযগুলি আদায় করেছি? আদায় করলে সাথে সাথে নফল বা মুস্তাহাবগুলি কতটুকু আদায় করেছি? কারণ ফরযের কোন অপূর্ণতা হ’লে নফলগুলি সেটা পূরণ করে দেয়।[9] সাথে সাথে খেয়াল করতে হবে যে, উক্ত ইবাদতসমূহে আল্লাহর হক্ব পরিপূর্ণ আদায় করা হয়েছে কি-না? উল্লেখ্য যে, ইবাদতে আল্লাহর হক্ব ছয়টি- ক. আমলের মধ্যে খুলূছিয়াত থাকা, খ. তার মাঝে আল্লাহর জন্য নছীহত থাকা (আল্লাহর একত্বের প্রতি সঠিক বিশ্বাস পোষণ করা), গ. রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি আনুগত্য থাকা, ঘ. একাগ্রতা থাকা, ঙ. নিজের উপর আল্লাহর ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের পূর্ণ উপলব্ধি থাকা, চ. অতঃপর এ সকল বিষয়াদির প্রতিটিতে নিজের ত্রুটি হচ্ছে- এই অনুতপ্তভাব থাকা।[10] এ সকল হক্ব পূর্ণভাবে আদায় করা হয়েছে কি-না আমল সম্পন্ন করার পর তা চিন্তা করতে হবে। (খ) অপ্রয়োজনীয় কাজ পরিত্যাগ করা : দ্বীনী দৃষ্টিকোণে যে হালাল কাজ করার চেয়ে না করাই বেশী উত্তম মনে হয়, তা থেকে নিজেকে বিরত রাখা। কোন নির্দোষ কিন্তু গুরুত্বহীন কাজ করে থাকলে তা থেকেও নিজেকে সাধ্যমত নিয়ন্ত্রণ করা। অর্থাৎ আগামীতে কেন এটা করব? এর দ্বারা কি আমি আল্লাহর পথে আরো অগ্রসর হ’তে পারব? এর দ্বারা কি দুনিয়াবী ও পরকালীন জীবনে আমার বা মানবসমাজের কোন লাভ হবে? তা অন্য কোন লাভজনক কাজ থেকে আমাকে বিরত করছে কি? ইত্যাদি প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর না পেলে সে পথে আর অগ্রসর না হওয়া।[11] (গ) ক্ষমা প্রার্থনা করা ও সৎআমল করা : পূর্ণ সতর্কতার পরও যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে কোন পাপ হয়ে যায়, তাহ’লে সঙ্গে সঙ্গে লজ্জিত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা ও তওবা করা। সাথে সাথে সৎআমল দ্বারা এই অপরাধের ক্ষতিপূরণ করার চেষ্টা করা। আল্লাহ বলেন, ﺇِﻥَّ ﺍﻟْﺤَﺴَﻨَﺎﺕِ ﻳُﺬْﻫِﺒْﻦَ ﺍﻟﺴَّـﻴِّﺌَﺎﺕِ ﺫَﻟِﻚَ ﺫِﻛْﺮَﻯ ﻟِﻠﺬَّﺍﻛِﺮِﻳْﻦَ – ‘নিশ্চয়ই ভালকাজ মন্দকাজকে দূর করে দেয়, আর এটা স্মরণকারীদের জন্য স্মরণ’ (হূদ ১১/১১৪)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ﺍﺗَّﻖِ ﺍﻟﻠﻪَ ﺣَﻴْﺜُﻤَﺎ ﻛُﻨْﺖَ ﻭَﺃَﺗْﺒِﻊِ ﺍﻟﺴَّﻴِّﺌَﺔَ ﺍﻟْﺤَﺴَﻨَﺔَ ﺗَﻤْﺤُﻬَﺎ ‘তুমি যেখানেই থাক আল্লাহকে ভয় কর। কোন পাপ কাজ সংঘটিত হয়ে গেলে সাথে সাথে সৎআমল কর যাতে তা মিটে যায়’।[12] সালাফে ছালেহীনের আত্মসমালোচনার দৃষ্টান্ত : আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত। তিনি বলেন, ﺧَﺮَﺟْﺖُ ﻣَﻌَﻪُ ﺣَﺘَّﻰ ﺩَﺧَﻞَ ﺣَﺎﺋِﻄًﺎ ﻓَﺴَﻤِﻌْﺘُﻪُ ﻭَﻫُﻮَ ﻳَﻘُﻮْﻝُ ﻭَﺑَﻴْﻨِﻲْ ﻭَﺑَﻴْﻨَﻪُ ﺟِﺪَﺍﺭٌ ﻭَﻫُﻮَ ﻓِﻲْ ﺟَﻮْﻑِ ﺍﻟْﺤَﺎﺋِﻂِ ﻋُﻤَﺮُ ﺑْﻦُ ﺍﻟْﺨَﻄَّﺎﺏِ ﺃَﻣِﻴْﺮُ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴْﻦَ ﺑَﺦٍ ﺑَﺦٍ ﻭَﺍﻟﻠﻪِ ﻟَﺘَﺘَّﻘِﻴَﻦَّ ﺍﻟﻠﻪَ ﺃَﻭْ ﻟَﻴُﻌَﺬِّﺑَﻨَّﻚَ অর্থাৎ ‘আমি একবার ওমর (রাঃ)-এর সাথে বের হ’লাম। পথিমধ্যে তিনি একটি বাগানে ঢুকলেন। এমতাবস্থায় আমার ও তাঁর মধ্যে বাগানের একটি দেয়াল আড়াল হয়েছিল। আমি তাঁকে বলতে শুনলাম, তিনি নিজেকে সম্বোধন করে বলছেন, ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব! আমীরুল মুমিনীন সাবাস! সাবাস! আল্লাহর শপথ! হে ইবনুল খাত্তাব! অবশ্যই তোমাকে আল্লাহর ভয়ে ভীত হ’তে হবে। অন্যথা তিনি তোমাকে শাস্তি দিবেন’।[13] ওছমান (রাঃ) যখন কোন কবরের নিকট দাঁড়াতেন তখন তিনি কাঁদতেন। যাতে তাঁর দাড়ি ভিজে যেত। তাকে বলা হ’ল জান্নাত-জাহান্নামের বর্ণনায় আপনি কাঁদেন না, অথচ কবর দেখলে আপনি কাঁদেন কেন? জবাবে তিনি বললেন, রাসূল (ছঃ) বলেছেন যে, ‘কবর হ’ল পরকালের পথের প্রথম মনযিল। যদি এখানে কেউ মুক্তি পায় তাহ’লে পরের মনযিলগুলি তার জন্য সহজ হয়ে যায়। আর যদি এখানে মুক্তি না পায় তাহ’লে পরেরগুলি আরও কঠিন হয়ে যায়’। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমি কবরের চাইতে ভয়ংকর কোন দৃশ্য আর দেখিনি’।[14] বারা বিন আযেব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে ছিলাম। হঠাৎ তিনি একদল লোককে দেখতে পেয়ে বললেন, ওরা কি উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়েছে? একজন বললেন, এরা একটি কবর খুড়ছে। রাবী বলেন, একথা শুনে রাসূল (ছাঃ) আতংকিত হয়ে পড়লেন এবং সঙ্গী-সাথীদের আগে দ্রুতবেগে কবরের নিকটে পৌঁছে হাঁটু গেড়ে বসলেন। রাবী বলেন, তিনি কি করছেন তা দেখার জন্য আমি তাঁর মুখোমুখি বসলাম। তিনি কেঁদে ফেললেন, এমনকি অশ্রুতে মাটি ভিজে গেল। অতঃপর তিনি আমাদের দিকে ফিরে বসে বললেন, হে ভাইয়েরা! এ রকম দিবসের জন্য রসদ প্রস্ত্তত রেখো’।[15] হানযালা আল-উসাইদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা তিনি কাঁদতে কাঁদতে আবুবকর (রাঃ)-এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আবুবকর (রাঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, হে হানযালা! তোমার কি হয়েছে? তিনি বললেন, হে আবুবকর! হানাযালা তো মুনাফিক হয়ে গেছে। আমরা যখন রাসূল (ছাঃ)-এর দরবারে অবস্থান করি এবং তিনি আমাদের জান্নাত-জাহান্নাম স্মরণে নছীহত করেন, তখন মনে হয় যেন আমরা সেগুলো প্রত্যক্ষভাবে দেখছি। কিন্তু বাড়ী ফিরে আসার পর স্ত্রী-পুত্র, পরিবার- পরিজন ও সহায়-সম্পদের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি এবং অনেক কিছুই ভুলে যাই। আবুবকর (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! আমাদেরও তো একই অবস্থা! চল আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে যাই। অতঃপর আমরা সেদিকে রওয়ানা হ’লাম। রাসূল (ছাঃ) তাকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, হানযালা! কি খবর? তখন উত্তরে তিনি অনুরূপ বক্তব্যই পেশ করলেন। রাসূল (ছাঃ) বললেন, আমার নিকট থেকে তোমরা যে অবস্থায় প্রস্থান কর, সর্বদা যদি সেই অবস্থায় থাকতে তাহ’লে ফেরেশতারা অবশ্যই তোমাদের মজলিসে, বিছানায় এবং পথে- ঘাটে তোমাদের সাথে মুছাফাহা করত। হে হানযালা! সেই অবস্থা তো সময় সময় হয়েই থাকে’।[16] উপরোক্ত হাদীছগুলি থেকে আত্মসমালোচনায় গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায় এবং পরকালের জন্য প্রস্ত্ততি গ্রহণের আবশ্যকতা সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয়। উপসংহার : পরিশেষে বলব, আত্মসমালোচনা আমাদের পার্থিব জীবনে দায়িত্বশীলতা সৃষ্টি করে, পরকালীন জওয়াবদিহিতার চিন্তা বৃদ্ধি করে এবং বিবেককে শাণিত করে। করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভে সাহায্য করে। সর্বোপরি জীবনের উচ্চতম লক্ষ্যকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে একজন প্রকৃত মানুষ হয়ে গড়ে উঠার কাজে সর্বদা প্রহরীর মত দায়িত্ব পালন করে। আত্মসমালোচনা, অন্যের ত্রুটি ধরার পূর্বে নিজের ত্রুটি ধরতে আমাদের শিক্ষা দেয়। অন্যের নিন্দা করার পূর্বে নিজের মধ্যে বিদ্যমান খারাপ দূর করতে উদ্বুদ্ধ করে। এর দ্বারা আমরা নিজেদেরকে যেমন সংশোধন করে নেওয়ার চেষ্টা চালাতে পারব, তেমনি অন্যের মাঝে ভুল দেখতে পেলে ভালবাসা ও স্নেহের সাথে তাকেও শুধরে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারব। এভাবে সমাজ পরিণত হবে পারস্পরিক সহযোগিতা, ভালবাসা ও সৌহার্দ্যে পূর্ণ এক শান্তিময় সমাজ। অতএব আসুন! আমরা নিজেদেরকে একজন প্রকৃত মানুষ হিসাবে, প্রকৃত মুসলমান হিসাবে গড়ে তোলার জন্য জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ সতর্কতার সাথে ফেলি। নিজেকে সচ্চরিত্রবান, নীতিবান ও আদর্শবান হিসাবে গড়ে তুলি। এর মাধ্যমে সমাজের আরো দশটা লোক আমাদের দ্বারা প্রভাবিত হবে। আর এভাবেই গড়ে উঠবে আদর্শ পরিবার; আদর্শ সমাজ থেকে আদর্শ রাষ্ট্র। আল্লাহ আমাদেরকে সে তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!! * তুলাগাঁও, নোয়াপাড়া, দেবিদ্বার, কুমিল্লা। [1]. তিরমিযী হা/৩৩৩৪; মিশকাত হা/২৩৪২। [2]. ইবনুল ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালেকীন (বৈরূত: দারুল কিতাব আল- আরাবিইয়াহ, ৩য় প্রকাশ, ১৯৯৬), ১/১৮৭ পৃঃ। [3]. তিরমিযী হা/২৪৫৯, সনদ মওকূফ ছহীহ। [4]. ইগাছাতুল লাহফান (মাকতাবাতুল মা‘আরিফ, তাবি) ১/৭৯। [5]. ইগাছাতুল লাহফান ১/৭৯। [6]. তদেব। [7]. ইহয়াউ উলূমিদ্দীন ৩/৩৯৫। [8]. ইবনুল ক্বাইয়িম, ইগাছাতুল লাহফান  ১/৮২। [9]. আবু দাঊদ, মিশকাত হা/১৩৩০ সনদ ছহীহ। [10]. ইহয়াউ উলূমিদ্দীন, ৪/৩৯৪। [11]. ইহয়াউ উলূমিদ্দীন, ৪/৩৯৪। [12]. তিরমিযী, মিশকাত হা/৫০৮৩। [13]. মুওয়াত্ত্বা মালেক হা/৩৬৩৮, আল-বিদায়াহ ৭/১৩৫। [14]. তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১৩২, ’কবরের আযাবের প্রমাণ’ অনুচ্ছেদ । [15]. আহমাদ, সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৭৫১। [16]. মুসলিম হা/২৭৫০, মিশকাত হা/২২৬৮।

Leave a comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.