সকল নবী রাসুলের দাওয়াতের মুল বিষয় তাওহীদ বা আল্লাহর একত্ববাদ:


সকল নবী রাসুলের দাওয়াতের মুল বিষয় তাওহীদ বা আল্লাহর একত্ববাদ:

আল্লাহ তা‘আলা যুগে যুগে অসংখ্য নাবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন যাতে মানুষ সঠিক পথ প্রাপ্ত হয়, অর্থাৎ বহুত্ববাদ বা শিরক মতবাদ বর্জন করে একত্ববাদ বা তাওহীদী মতবাদ গ্রহণ করে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্যই যাবতীয় ইবাদাত সম্পাদন করতে পারে। তাই সর্বপ্রথম রাসূল নূহ (আ) হতে সর্বশেষ নাবী ও রাসূল মুহাম্মদ (সা) পর্যন্ত সকলেই এক আল্লাহর ইবাদাতের দাওয়াত দিয়েছেন। নিম্নে নমুনা স্বরূপ নাবী রাসূলদের দাওয়াত বাণী অতি সংেেপ আলোকপাত করা হল। নূহ (আ) এর দাওয়াত ঃ আল্লাহ তা‘আলা বলেন: لَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحًا إِلَى قَوْمِهِ فَقَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُواْ اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـهٍ غَيْرُهُ إِنِّيَ أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍ “নিশ্চয়ই আমি নূহকে তাঁর সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরণ করেছি, তিনি বললেন: হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার ইবাদাত কর। কারণ তিনি ব্যতীত তোমাদের সত্যিকার কোন উপাস্য নেই। (নচেত) আমি তোমাদের জন্য কঠিন দিবসের শাস্তির আশঙ্কা করছি।” (সূরা আরাফ:৫৯) নূহ (আ) এর দীর্ঘ সারে নয়শত বৎসরে প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে রাতে দিনে সর্বদায় দাওয়াত ছিল শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদাতের মাধ্যমে তাঁর তাওহীদ বাস্তবায়ন করা। ইবরাহীম (আ) এর দাওয়াত ঃ মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহীম (আ) গোটা জীবন তাওহীদ বা একত্ববাদের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে স্বীয় কাউমকে একই দাওয়াত দিলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন: وَإِبْرَاهِيمَ إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاتَّقُوهُ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ “স্মরণ করুন ইবরাহীমের কথা, যখন তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন ঃ তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাকে ভয় কর। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা জেনে থাক।” সূরা আনকাবুত: ১৬ হুদ (আ) এর দাওয়াত: আল্লাহ তা‘আলা হুদ (আ) এর তাওহীদের প্রতি আহ্বানের বর্ণনা দিয়ে বলেন: وَإِلَى عَادٍ أَخَاهُمْ هُوداً قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُواْ اللّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـهٍ غَيْرُهُ أَفَلاَ تَتَّقُونَ “আদ সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছি তাদের ভাই হুদকে। তিনি বললেন ঃ হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত কর, তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন সত্যিকার মাবুদ নেই। তোমরাকি এখনও সাবধান হবেনা।” সূরা আরাফ:৬৫ সালেহ (আ) এর দাওয়াত: সালেহ (আ) এর দাওয়াত সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: وَإِلَى ثَمُودَ أَخَاهُمْ صَالِحًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُواْ اللّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـهٍ غَيْرُهُ “ছামুদ সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছি তাদের ভাই সালেহকে তিনি বলেন: হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত কর তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন সত্যিকার মাবুদ নেই।“ (সূরা আরাফ: ৭৩) শুয়াইব (আ) এর দাওয়াত ঃ আল্লাহ তা‘আলা শুয়াইব (আ) এর দাওয়াতের বর্ণনা দিয়ে বলেন: وَإِلَى مَدْيَنَ أَخَاهُمْ شُعَيْبًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُواْ اللّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـهٍ غَيْرُهُ “মাদয়ান সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছি তাদের ভাই শুয়াইব (আ) কে, তিনি বলেন ঃ হে আমার সম্প্রদায়। তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত কর, তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন সত্যিকার মাবুদ নেই। সূরা আরাফ: ৮৫ একই নিয়মে সকল নাবী ও রাসূল তাওহীদ বাস্তবায়ন টার্গেট রেখেই স্বীয় দাওয়াত পরিচালনা করেন। এমনকি সর্বশেষ নাবী মুহাম্মদ (সা) জীবনের সর্বস্তরে একই ল্য উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে দাওয়াত পরিচালনা করেন। সর্বশেষ নাবী ও রাসূল মুহাম্মদ (সা) এর দাওয়াতের মূল ল্যবস্তু তাওহীদ বাস্তবায়ন এবং শিরক নির্মূল করা: বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত মুহাম্মদ (সা) পূর্ববর্তী সকল নবী ও রাসূলের দাওয়াতকে বিশ্বব্যাপী পূর্ণাঙ্গ রূপ দানের দায়িত্ব নিয়ে আবির্ভূত হলেন এমন এক সমাজে, যারা শিা দিায় অন্যের তুলনায় উন্নত হলেও আত্মমর্যাদা ভুলে গিয়ে স্বীয় হস্তে তৈরী মাটি বা পাথরের মূর্তির কাছে মাথা নত করে বর্বর জাতিতে পরিণত হয়ে ছিল, তারা ছিল বহুত্ববাদে বিশ্বাসী। কিন্তু নবীদের একই সুত্রে গাঁথা নাবী মুহাম্মদ (সা) তাদের সে সব বহুত্ববাদ বর্জন করে দাওয়াত দিলেন একত্ববাদ বা আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদের প্রতি তিনি (সা) বললেন: قولوا لا اله إلا الله تفلحون “তোমরা বল একমাত্র আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার ইবাদাতের যোগ্য কোন মাবুদ নেই, তাহলেই সকল কাম হতে পারবে।” কেনইবা তিনি তাওহীদের দাওয়াত দিবেন না? এ মিশন নিয়েই তো তিনি এসেছেন, এ নির্দেশইতো পেয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ: قُلْ إِنِّي أُمِرْتُ أَنْ أَعْبُدَ اللَّهَ مُخْلِصًا لَّهُ الدِّينَ – وَأُمِرْتُ لِأَنْ أَكُونَ أَوَّلَ الْمُسْلِمِينَ “বল আমি আদেশ প্রাপ্ত হয়েছি আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করার জন্য এবং আরো আদিষ্ট হয়েছি আমি যেন সর্বপ্রথম মুসলিম হই।” সূরা যুমার: ১২ নাবী (সা) তাঁর মাক্কা জীবনের গোটা তেরটি বছর একই কর্মসূচী সামনে রেখে দাওয়াতী কার্যক্রম চালালেন। কিভাবে মানুষকে শিরক হতে মুক্ত করে তাওহীদের পথে আনা যায়? এ দাওয়াতই সকাল সন্ধ্যায় দিতে থাকলেন। এমনিভাবে মদীনার জীবনের দাওয়াতও শুরু হল তাওহীদ প্রতিষ্ঠা ও শিরক মুক্ত করার মাধ্যমে। মদীনায় ইসলামী জীবনের সূচনা হল মিনার প্রান্তে বাইয়াতে আকাবার মধ্যদিয়ে। আকাবার প্রথম বাইয়াতে নবী (সা) মদীনাবাসীদের বলেছিলেনঃ تعالوا بايعوني على أن لا تشركوا با لله شيئا “আস তোমরা আমার সাথে অঙ্গিকার কর যে তোমরা আল্লাহর সাথে কোনরূপ শরীক স্থাপন করবেনা।” সহীহুল বুখারী হাদীস নং ১৮ এভাবেই শুরু হল মদীনার দাওয়াতী জীবন, সকল েেত্র একই নির্দেশ, একই আদেশ, একই নির্দেশনা তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত কর এবং তার সাথে কাউকে শরীক করনা। এমনকি মৃত শয্যায় থেকেও সতর্ক করছেন শিরক কার্মকান্ড হতে শিরকের সকল পথ ও ঘাট যেন নির্মূল করেই বিদায় নিতে চাচ্ছেন, তিনি বলছেন: قاتل الله اليهود والنصارى اتخذوا قبورأنبيائهم مساجد – “আল্লাহ ঐ সব ইয়াহুদ ও নাসারাকে ধবংস করুন যারা তাদের নবীদের কবরগুলিকে মসজিদে পরিণত করে শিরকের কেন্দ্র করেছে। (মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং ৩২১। নিজের কবরকে কেন্দ্র করেও তিনি (সা) বলেন: لاتتخذوا قبري وثنا يعبد “তোমরা আমার কবরকে এমন প্রতিমা বানাইয়া নিও না যার উপাসনা করা হবে।” (মুয়াত্তা মালিক) সুতরাং নাবী (সা) এর দাওয়াতের শুরু হতে শেষ পর্যন্ত সকল েেত্র তাওহীদ বাস্তবায়নই হল মূল ল্য-উদ্দেশ্য, এমন কি তিনি কাউকে দাওয়াতের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করলে প্রথমে তাওহীদের দাওয়াত দেওয়ারই নির্দেশনা দিতেন। দাঈদের কর্তব্য সর্বপ্রথম তাওহীদের দাওয়াত প্রদান করা: ইসলামের প্রতি দাওয়াত প্রদান একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা ছোট করে দেখার কোন সুযোগ নেই বরং প্রতিটি মুসলিম ব্যক্তি স্বীয় যোগ্যতা ও দতা অনুযায়ী দাওয়াতী কাজে অংশ গ্রহণ করবে। এখন প্রশ্ন হল কোন বিষয়ের প্রতি দাওয়াত দিব? কেননা কেউ দাওয়াত দেয় স্বীয় দলের প্রতি, আবার কেউ দাওয়াত দেয় স্বীয় চিন্তা চেতনার প্রতি, আবার কেউ দাওয়াত দেয় আদব আখলাকের প্রতি, আবার কেউ দাওয়াত দেয় আদব আখলাকের প্রতি আবার কেউ দাওয়াত দেয় মতা অর্জনের প্রতি। আসলে দাওয়াতের বিষয়বস্তু হওয়া উচিৎ নাবী মুহাম্মদ (সা) আল্লাহর প হতে যে ইসলাম নিয়ে এসেছেন সেই পুর্ণাঙ্গ ইসলামের প্রতি। এখন প্রশ্ন সর্ব প্রথম ইসলামের কোন বিষয়ের প্রতি দাওয়াত দিব? এ প্রশ্নের উত্তর কারো প হতে না হয়ে নাবী (সা) এর প হতে হলেই তা সঠিক ও নিরপে উত্তর হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। আসুন আমরা নবী (সা) হতে এর সমাধান জেনে নেই। প্রসিদ্ধ সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) বলেন ঃ নবী (সা) যখন মূয়ায বিন জাবাল (রা)কে ইয়ামান দেশে দাওয়াতের জন্য প্রেরণ করলেন তখন তাকে বললেন: فليكن أول ما تدعوهم إليه شهادة أن لا إله إلا الله وفي رواية أن يوحدوا الله فان هم أطاعوك لذلك فأعلمهم أن الله افترض عليهم خمس صلوات فى كل يوم وليلة সর্বপ্রথম তোমার দাওয়াতের বিষয়বস্তু যেন হয় আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত সত্যিকার কোন ইবাদাতের যোগ্য মাবুদ নেই এ স্যাপ্রদান করা, অন্য বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদের বা একত্ববাদের প্রতি যেন তোমার সর্বপ্রথম দাওযাত হয়, তারা যদি তোমার এ তাওহীদের দাওয়াত পূর্ণভাবে মেনে নেয় অতঃপর তাদের জানিয়ে দাও যে, আল্লাহ তা‘আলা প্রতি রাত ও দিনে তোমাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করে দিয়েছেন …। সহীহুল বুখারী হাদীস নং ১৪৫৮, সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১৯ এ হাদীসে প্রমাণিত হয় য়ে দাঈ বা আহ্বানকারী সর্বপ্রথম তাওহীদ বা সহীহ আকীদার প্রতি দাওয়াত দিবে, কারণ আকীদা সংশোধন বা শুদ্ধ করণ ছাড়া কোন ব্যক্তির ঈমান সঠিক হতে পারেনা, আর ঈমান সঠিক না হলে অন্য কোন ইবাদাত গ্রহণ যোগ্য হবে না। সালাত সিয়াম যতই সুন্দর হোক না কেন ঈমান আকীদা সঠিক না হলে তার কোন মূল্য নেই। এজন্য সর্বপ্রথম দাওয়াত হতে হবে আকীদাহ বা তাওহীদ এর প্রতি। কোন ব্যক্তির আকীদাহ বা তাওহীদ যখন কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে গড়া হবে তারপর তার কাজ হল সালাত, সিয়াম ইত্যাদি। ইসলামের অন্যান্য বিষয় সমূহ। অতএব কুরআন ও সহীহ হাদীস এবং নবী রাসূলদের দাওয়াতী পদ্ধতি অনুযায়ী আমাদের দাওয়াত হতে হবে সর্বপ্রথম তাওহীদ বা আল্লাহর একত্ববাদ ও ঈমান আকীদার প্রতি, অতঃপর ইসলামের অন্যান্য ইবাদাতের প্রতি। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে নাবী রাসূলদের রেখে যাওয়া দায়িত্ব তাঁদের পদ্ধতি অনুযায়ী পালন করে সঠিকভাবে সঠিক পথে দাওয়াতী কাজের আনজাম দেয়ার তাওফীক দান করুন, আমীন।

Leave a comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.