আমি তাওবা করতে চাই কিন্তু !


 ভূমিকা
সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য। আমরা তাঁর প্রশংসা করছি এবং তাঁরই কাছে সাহায্য চাচ্ছি। আল্লাহ তা’আলা যাকে হেদায়াত দান করেন তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারেনা। আর তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন তাকে কেউ পথ দেখাতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য ইলাহ নেই। তিনি একক এবং তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল। অতঃপর:
মহান আল্লাহ সমস্ত মুমিনদেরকে তাওবা করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন:
“হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর পানে তাওবা (প্রত্যাবর্তন) কর, নিশ্চয় তোমরা সফলকাম হবে।” (আননূর: ৩১)
তিনি তাঁর বান্দাদেরকে তাওবাকারী ও অত্যাচারী হিসেবে ভাগ করেছেন। এখানে তৃতীয় কোন ভাগ নেই। মহান আল্লাহ বলেন:
“যারা তাওবা করবে না, তারাই অত্যাচারী।” (আলহুজুরাত: ১১)
আর এখন এমন এক সময় এসেছে যাতে মানুষ আল্লাহর দ্বীন থেকে দূরে সরে গেছে এবং পাপাচার ব্যাপকতা লাভ করছে ও বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। অবস্থা এমন হয়েছে যে, এ থেকে কেউই বাঁচতে পারছে না আল্লাহর বিশেষ রহমত ছাড়া।
আল্লাহর বিশেষ ইচ্ছা এই যে, তিনি তাঁর নূরকে অবশ্যই পূর্ণতা দান করবেন, যার ফলে অনেক লোকই তাদের গাফলতী ও তন্দ্রা থেকে জেগে উঠেছে। তারা বুঝতে পেরেছে যে, তারা আল্লাহর হকের ব্যাপারে কার্পণ্য করেছে, তার অবাধ্যতার জন্য অনুতপ্ত, যার ফলে তারা তাওবার দিকে এগিয়ে এসেছে। অন্যরা এই বিষাক্ত জীবনের ব্যাপারে বিতশ্রদ্ধ হয়ে উঠেছে। তারা পথ খুঁজছে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের হয়ে আসার জন্য। কিন্তু তাদের সামনে বাধা হয়ে উঠেছে কিছু প্রতিবন্ধকতা যা তাদের মাঝে ও তাওবার মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এসব প্রতিবন্ধকতার মধ্যে কিছু হলো মনের মধ্যে, আর কিছু হলো তার চতুর্পাশে। আমি এ পুস্তিকা রচনা করেছি এ আশা করে যে, এসব বিষয় পরিষ্কার করা ও এর হুকুম স্পষ্ট করে বর্ণনা করার লক্ষ্যে এবং শয়তানকে বিতাড়িত করার উদ্দেশ্যে।
এ পুস্তিকায় একটি ভূমিকা থাকবে গুনাহকে তুচ্ছজ্ঞান করার ভয়াবহতা সম্পর্কে, এরপর তাওবার শর্তাবলীর ব্যাখ্যা ও তার মানসিক চিকিৎসা সম্পর্কে। এরপর থাকবে তাওবা সম্পর্কে ফাত্‌ওয়া, দলীল প্রমাণসহ কুরআন, হাদীস এবং আহলুল ইলমের অভিমত। পরিশেষে থাকবে একটি উপসংহার। আল্লাহর নিকট দু’আ করি, তিনি যেন আমাকে এবং আমার ভাই-বোনদেরকে এ থেকে নসিহত ও উত্তম দাওয়াত গ্রহণ করার তাওফীক দান করেন এবং আমাদের সকলের তাওবা কবুল করেন। ([১])
মুহ্‌াম্মদ বিন সালেহ আল-মুনাজ্জিদ
পোস্ট বক্স নং – ২৯৯৯
আল-খুবার, সোউদী আরব
পাপকে তুচ্ছজ্ঞান করার ভয়াবহতা
আপনি জেনে রাখুন (আল্লাহ আপনার প্রতি ও আমার প্রতি দয়া করুন) পরাক্রমশালী আল্লাহ তার বান্দাদের নির্দেশ দিয়েছেন নিষ্ঠার সাথে তাওবা করার জন্য। তিনি বলেন:
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট নিষ্ঠার সাথে তাওবা কর (প্রত্যাবর্তন কর)।” (আত্‌তাহরীম: ৮)
কেরামান কাতেবীন (ফেরেশতা) আমাদের কারো গুনাহ্‌ লিখার পূর্বে আল্লাহ আমাদেরকে তাওবার ব্যাপারে অনেক ঢিল দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: নিশ্চয় বামপাশের ফেরেশতা কলম উঠিয়ে রাখে ছয় ঘন্টা পর্যন্ত ভূলকারী মুসলিম বান্দা থেকে। বান্দা যদি অনুতপ্ত হয় এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা চায় তাহলে তা মাফ করে দেয়া হয়, নতুবা একটি গুনাহ লিখা হয়। (তাবারানী, বায়হাকী, ইমাম আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলে অভিহিত করেছেন) আরেকটি ফুরসত হলো লিখার পরে এবং মৃত্যু উপস্থিত হওয়ার পূর্বে।
বর্তমান যুগের সমস্যা হলো অনেক মানুষই আল্লাহকে ভয় করে না, তারা রাতদিন বিভিন্ন রকমের গুনাহ করে চলেছে। এদের কেউ কেউ আবার গুনাহকে তুচ্ছজ্ঞান করে। এজন্য দেখবেন এদের কেউ কেউ সগীরা গুনাহকে খুবই তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখে থাকে। যেমন বলে, একবার খারাপ কিছু দেখলে অথবা কোন বেগানা মহিলার সাথে করমর্দন করলে কি-ই বা ক্ষতি হবে?
অনেকেই আগ্রহ ভরে হারাম জিনিসের দিকে নজর দেয় পত্র-পত্রিকায় বা টিভি সিরিয়াল বা সিনেমার দিকে, এমনকি এদের কেউ কেউ যখন জানতে পারে যে এটি হারাম, তখন খুবই রসিকতা করে প্রশ্ন করে, এতে কত গুনাহ রয়েছে? এটি কি কবীরা গুনাহ না সগীরা গুনাহ? আপনি যখন এটির বাস্তব অবস্থা জানবেন তখন তুলনা করে দেখুন নিম্নোক্ত দুটি বর্ণনার সাথে যা ইমাম বুখারী উল্লেখ করেছেন:
এক: হযরত আনাস রাযিআল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমরা এমন সব কাজ কর যা তোমাদের দৃষ্টিতে চুলের চেয়েও সূক্ষ্ণ। কিন্তু আমরা রাসূলুল্লাহর যুগে এগুলোকে মনে করতাম ধ্বংসকারী।
দুই: হযরত ইবনে মাসউদ রাযিআল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একজন মুমিন গুনাহকে এভাবে দেখে থাকে যে, সে যেন এক পাহাড়ের নিচে বসে আছে যা তার মাথার উপর ভেঙ্গে পড়বে। পক্ষান্তরে পাপী তার গুনাহকে দেখে যেন মাছি তার নাকের ডগায় বসেছে, তাকে এভাবে তাড়িয়ে দেয়।
এরা কি বিষয়টির বিপজ্জনকতা উপলব্ধি করতে পারবে যখন তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই হাদীস পাঠ করবে ;
“إيَّاكُمْ وَمُحَقَّرَاتِ الذُّنُوبِ فَإنَّمَا مَثَلُ مُحَقَّرَاتِ الذُّنُوبِ كَمَثَلِ قَوْمٍ نَزَلُوا بِبَطْنِ وَادٍ فَجَاءَ ذَا بِعُودٍ وَجَاءَ ذَا بِعُودٍ حَتَّى حَمَلُوا مَا أنْضَجُوا بِهِ خُبْزَهُمْ وَإنَّ مُحَقَّرَاتِ الذُّنُوبِ مَتَى يَأخُذُ بِهَا صَاحِبُهَا تُهْلِكُهُ” وَفِي رِوَايَةٍ: “إيَّاكُمْ وَمُحَقَّرَاتِ الذُّنُوبِ فَإنَّهُنَّ يَجْتَمِعْنَ عَلَى الرَّجُـلِ حَتَّى يُهْلِكَنَّهُ” رواه أحمد (صحيح الجامع: ২৬৮৬ ু ২৬৮৭)
“তোমরা নগণ্য ছোট ছোট গুনাহ থেকে সাবধান হও! নগণ্য ছোট ছোট গুনাহগুলোর উদাহরণ হল ঐ লোকদের মত যারা কোন মাঠে বা প্রান্তরে গিয়ে অবস্থান করল এবং তাদের প্রত্যেকেই কিছু কিছু করে লাকড়ি (জ্বালানি কাঠ) সংগ্রহ করে নিয়ে এলো। শেষ পর্যন্ত এতটা লাকড়ি তারা সংগ্রহ করল যা দিয়ে তাদের খাবার পাকানো হল। নিশ্চয় নগণ্য ছোট ছোট গুনাহতে লিপ্ত থাকা ব্যক্তিদেরকে যখন সেই নগণ্য ছোট ছোট গুনাহগুলো গ্রাস করবে (পাকড়াও করবে) তখন তাদেরকে ধ্বংস করে ফেলবে।” অন্য এক বর্ণনায় এসেছে যে, “তোমরা নগণ্য ছোট ছোট গুনাহ থেকে সাবধান হও; কেননা সেগুলো মানুষের কাঁধে জমা হতে থাকে অতঃপর তাকে ধ্বংস করে দেয়।” (আহমদ, সহীহ আল-জামে’ ২৬৮৬-২৬৮৭)
বিদ্যানগণ উল্লেখ করেছেন: যখন সগীরা গুনাহর সাথে লজ্জাশরম কমে যাবে, কোন কিছুতে ভ্রূক্ষেপ করবে না, খোদাভীতি থাকবে না এবং আল্লাহর ব্যাপারে ভক্তি হবে না তখন একে কবীরা গুনাহতে পরিণত করবে। এজন্যই বলা হয়েছে যে, ক্রমাগত পাপ করলে তা আর সগীরা থাকে না এবং ক্ষমা প্রার্থনা করলে কবীরা থাকে না। অর্থাৎ ক্রমাগতভাবে সগীরা গুনাহ করতে থাকলে তা কবীরা গুনাহে পরিণত হয় এবং ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকলে কবীরা গুনাহ আর থাকে না তা মাফ হয়ে যায়। যার এ অবস্থা তাকে আমরা বলি, গুনাহ ছোট আপনি এদিকে দৃষ্টি দিবেন না, বরং আপনি দৃষ্টি দিবেন এদিকে যে, আপনি কার অবাধ্যতা করছেন।
আমার এ কথাগুলো দ্বারা অবশ্যই উপকৃত হবেন ইনশাআল্লাহ সত্যবাদীগণ, যারা অনুভব করছেন তাদের গুনাহ ঘাটতির ব্যাপারটি। তারা নয় যারা তাদের গোমরাহীতে অনড়, তাদের বাতিল অবস্থার প্রতি অবিচল। এটি তাদের জন্য যারা বিশ্বাস করে মহান আল্লাহর এ বাণীকে:
“আপনি আমার বান্দাদের জানিয়ে দিন যে, নিশ্চয় আমিই একমাত্র ক্ষমাকারী দয়ালু “। (সূরা আল হিজর: ৪৯)
তেমনি যারা ঈমান রাখে এ বাণীর উপর:
“আর নিশ্চয়ই আমার শাস্তি হলো যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।” (সূরা আল হিজর: ৫০)
তাওবার শর্ত ও ইহার পরিপূরক বিষয়
তাওবা শব্দটি এক মহান শব্দ। এর অর্থ খুবই গভীর। এমন নয় যা অনেকেই মনে করে থাকেন, মুখে শব্দটি বললাম অতঃপর গুনাহে লিপ্ত থাকলাম। আপনি আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণী অনুধাবন করে দেখুন। আল্লাহ্‌ কি বলছেন:
“তোমরা তোমাদের প্রভূর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। অতঃপর তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন (তাওবা) কর।” (সূরা হুদ: ৩)
আয়াতের মধ্যে সকলকে ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে, অতঃপর তাওবা করতে বলা হয়েছে। সুতরাং তাওবা হচ্ছে ক্ষমা প্রার্থনার পর অতিরিক্ত আলাদা বিষয়।
কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের জন্য অবশ্যই কিছু শর্ত থাকে। আলেম-ওলামাগণ কুরআন ও হাদীস মন্থন করে তাওবার জন্য কতিপয় শর্ত উল্লেখ করেছেন, তা হলো:
এক: দ্রুত পাপ থেকে বিরত হওয়া।
দুই: পূর্বে যা ঘটে গেছে সে জন্য অনুতপ্ত হওয়া।
তিন: পুনরায় পাপ কাজে ফিরে না আসার জন্য দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করা।
চার: প্রাপকদের হক ফিরিয়ে দেয়া যা অন্যায়ভাবে নেয়া হয়েছিল অথবা তাদের নিকট থেকে মাফ চেয়ে নেওয়া।
আর খালেসভাবে তাওবার জন্য কতিপয় আলেম যেসব শর্ত উল্লেখ করেছেন, নিম্নে সেগুলো উদাহরণসহ আলোচনা করা হচ্ছে।
[এক]: শুধুমাত্র আল্লাহ্‌র জন্য পাপ ত্যাগ করা, অন্য কোন কারণে নয়, যেমন;
* অক্ষমতার কারণে পাপ থেকে দূরে থাকা, এসব কর্ম করতে ভাল না লাগা অথবা লোকজন মন্দ বলবে এই ভয়ে পাপ ত্যাগ করা।
* এজন্য তাকে তাওবাকারী বলা হবে না, যে ব্যক্তি পাপ ত্যাগ করেছে তার মানহানী ঘটায় বা এর জন্য হয়তো সে চাকুরীচ্যুত বা পদবী হারাতে পারে।
* তাকে তাওবাকারী বলা যাবে না, যে ব্যক্তি পাপ ত্যাগ করল তার শক্তি ও স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য। যেমন; কেউ জেনা করা ত্যাগ করলো যেন দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে বাঁচতে পারে অথবা তার শরীর ও স্মৃতি শক্তিকে দুর্বল না করে।
* তেমনিভাবে তাকে তাওবাকারী বলা যাবে না, যে ব্যক্তি চুরি করা ছেড়ে দিয়েছে; কোন বাড়ীতে ঢুকার পথ না পেয়ে বা সিন্দুক খুলতে অসমর্থ কিংবা পাহারাদার ও পুলিশের ভয়ে।
* তাকে তাওবাকারী বলা যাবে না, যে দূর্নীতি দমন বিভাগের লোকজনদের জোর তৎপরতায় ধরা পড়ার ভয়ে ঘুষ খাওয়া বন্দ রেখেছে।
* আর তাকেও তাওবাকারী বলা যাবে না, যে ব্যক্তি মদ পান, মাদকদ্রব্য বা হেরোইন সেবন ইত্যাদি ছেড়ে দিয়েছে দারিদ্রের কারণে।
* তেমনিভাবে তাকেও তাওবাকারী বলা যাবে না, যে সামর্থহীন হওয়ার কারণে গুনাহ করা ছেড়ে দিলো। যেমন মিথ্যা বলা ছেড়ে দিয়েছে তার কথায় জড়তা সৃষ্টি হওয়ার কারণে কিংবা জেনা করছে না যেহেতু সে সহবাস ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে, কিংবা চুরি করা ছেড়ে দিয়েছে আহত হয়ে পঙ্গু হয়ে পড়ার কারণে।
বরং এসবে অবশ্যই অনুতপ্ত হতে হবে, সব ধরনের পাপ থেকে মুক্ত হতে হবে এবং অতীত কর্মকান্ডের জন্য লজ্জিত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
এ জন্যেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “অনুতপ্ত হওয়াই হলো তাওবা।” (আহমাদ, ইবনে মাজা, সহীহ আল-জামে ৬৮০২)
মহান আল্লাহ আকাংখা পোষণকারী অপারগকে কর্ম সম্পাদনকারীর মর্যাদায় ভূষিত করেছেন। আপনি জানেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি বলেছেন:
((إِنَّمَا الدُّنْيَا لأَرَْبَعَةِ نَفَرٍ عَبْدٌ رَزَقَهُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ مَالاً وَعِلْمًا فَهُوَ يَتَّقِي فِيهِ رَبَّهُ وَيَصِلَ فِيهِ رَحِمَهُ وَيَعْلَمَ للهِ عَزَّ وَجَلَّ فِيهِ حَقًّا، قَالَ: فَهَذَا بِأفْضَلِ الْمَنَازِلِ، وَعَبْدٌ رَزَقَهُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ عِلْمًا وَلَمْ يَرْزُقْهُ مَالاً، قَالَ: فَهُوَ صَادِقُ النِّيَّة، يَقُوْلُ: لَوْ أَنَّ لِي مَالاً لَعَمِلْتُ بِعَمَلِ فُلاَنٍ، فَهُوَ بِنِيَّتِهِ، فَأَجْرُهُمَا سَوَاءٌ، وَعَبْدٌ رَزَقَهُ اللهُ مَالاً وَلَمْ يَرْزُقْهُ عِلْماً يَخْبِطُ فِي مَالِهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَلاَ يَتَّقِي فِيهِ رَبَّهُ، وَلاَ يَصِلُ فِيهِ رَحِمَهُ، وَلاَ يَعْلَمُ لِلّهِ فِيهِ حَقّاً، فَهَذَا بِأَخْبَثِ الْمَنَازِلِ، وَعَبْدٌ لَمْ يَرْزُقْهُ اللهُ مَالاً وَلاَ عِلْماً فَهُوَ يَقُوْلُ: لَوْ أَنَّ لِي مَالاً لَعَمِلْتُ فِيهِ بِعَمَلِ فُلاَنٍ، فَهُوَ بِنِيَّتِهِ، فَوِزْرُهُمَا سَوَاءٌ)) رواه أحمد والترمزي وصححه. (صحيح الترغيب والترغيب ১/৯).
“দুনিয়া চার প্রকার লোকের জন্য;
(১) সেই বান্দার জন্য যাকে আল্লাহ মাল ও জ্ঞান দান করেছেন সুতরাং সে এতে তার প্রভূকে ভয় করছে, তার আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক রাখছে এবং তার ব্যাপারে আল্লাহর হক জানছে, এ হলো সর্বোত্তম অবস্থানে।
(২) সেই বান্দা যাকে আল্লাহ জ্ঞান দান করেছেন কিন্তু মাল দেননি, সে হলো সঠিক নিয়তের লোক, সে বলে, যদি আমার টাকা পয়সা থাকতো তাহলে উমুক ব্যাক্তির মত কাজ করতাম। সে তার নিয়ত অনুযায়ী সওয়াব পাবে। এদের দুজনের নেকী সমান হবে।
(৩) আর সেই বান্দা যাকে আল্লাহ টাকা পয়সা দিয়েছেন কিন্তু জ্ঞান দান করেননি। সে না জেনেই তার টাকা পয়সা খরচ করছে। এতে সে আল্লাহকে ভয় করে না, আত্মীয়তা রক্ষা করে না এবং এতে আল্লাহর হকও সে জানে না। সে হলো সর্ব নিকৃষ্ট অবস্থানে।
(৪) আর সেই বান্দা যাকে আল্লাহ মালও দেননি জ্ঞানও দেননি, সে বলে আমার টাকা পয়সা থাকলে উমুকের মতই (খারাপ কাজ) করতাম। সে তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিদান পাবে। এরা দুজনই গুনাহর দিক থেকে সমান। (আহমদ, তিরমিযী, সহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব: ১/৯)
[দুই]: পাপের কদর্যতা ও ভয়াবহতা অনুভব করা; অর্থাৎ সঠিক তাওবার সাথে কখনো আনন্দ ও মজা পাওয়া যাবেনা অতীত পাপের কথা স্মরণ হলে অথবা কখনো ভবিষ্যতে সেসব কাজে ফিরে যাবে, এ কামনা মনে স্থান পাবে না।
ইবনুল কাইয়্যেম রহমতুল্লাহ আলাইহে তার লিখা [الداء والدواء] ‘রোগ ও চিকিৎসা’ এবং [الفوائد] ‘আল্‌ফাওয়াইদ’ নামক গ্রন্থে গুনাহের অনেক ক্ষতির কথা উল্লেখ করেছেন। তন্মধ্যে: জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হওয়া, অন্তরে একাকিত্ব অনুভব করা, কাজকর্ম কঠিন হয়ে যাওয়া, শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া, আল্লাহর আনুগত্য থেকে বঞ্চিত হওয়া, বরকত কমে যাওয়া, কাজে সমন্বয় না হওয়া, গুনাহর কাজে অভ্যস্থ হয়ে যাওয়া, আল্লাহর ব্যাপারে পাপীর অনাসক্তি সৃষ্টি হয় এবং লোকজন তাকে অশ্রদ্ধা করে, জীবজন্তু তাকে অভিশাপ দেয়, সে সর্বদা অপমানিত হতে থাকে, অন্তরে মোহর পড়ে যায়, লানতের মাঝে পড়ে এবং দু’আ কবুল হয় না, জলে ও স্থলে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়, আত্মমর্যাদাবোধ কমে যায়, লজ্জা চলে যায়, নিয়ামত দূর হয়ে যায়, আজাব নেমে আসে, পাপীর অন্তরে সর্বদা ভয় নেমে আসে এবং সে শয়তানের দোসরে পরিণত হয়, তার জীবন সমাপ্ত হয় মন্দের উপর এবং পরকালীন আজাবে নিপতিত হয়।
পাপের এই ক্ষতি ও বিপর্যয় যদি বান্দা জানতে পারে তাহলে সে পাপ থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকবে। কিছু কিছু লোক এক পাপ ছেড়ে আরেক পাপ করতে শুরু করে তার কিছু কারণ হলো:
১. মনে করে যে, এর পাপ কিছুটা হালকা।
২. মন পাপের দিকে বেশী আকৃষ্ট হয় এবং এর দিকে ঝোক খুবই প্রবল থাকে।
৩. এ পাপ করার জন্য পারিপার্শিক অবস্থা সহজ ও সহায়ক হয় অন্যটির তুলনায়, অন্য পাপের মোকাবেলায় যার জন্য অনেক কিছু জোগাড় করা লাগে।
৪. তার সঙ্গী সাথীরা এ পাপের সাথে জড়িত, তাদেরকে ত্যাগ করা কঠিন বলে মনে হয়।
৫. কোন কোন ব্যক্তির নিকট বিশেষ পাপ তার মান সম্মানের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় তার সঙ্গী সাথীদের মাঝে। এজন্য সে চিন্তা করে যেন তার অবস্থান সে ধরে রাখে এবং এ পাপ অব্যাহত রাখে, যেমনটি ঘটে বিভিন্ন অপরাধ ও সন্ত্রাসী গ্রুপের প্রধানদের বেলায়। যেমনটি ঘটেছিল অশ্লীল কবি আবু নাওয়াসের বেলায়, যখন তাকে কবি আবুল আতাহিয়া উপদেশ দেয় ও ভর্ৎসনা করে তার পাপের জন্য। সে তখন জবাবে লিখে –
হে আতাহিয়া! তুমি কি চাও আমি
ছেড়ে দেই আনন্দ ফূর্তি করা
তুমি কি চাও আমি ধর্মকর্ম করে হারিয়ে ফেলি
আমার লোকদের কাছে আমার মর্যাদা।
[তিন]: যার জন্য তাওবার প্রয়োজন সে যেন তাড়াতাড়ি তাওবা করে। কারণ তাওবা করতে দেরী করাটাই পাপ।
[চার]: আল্লাহর হক যা ছুটে গেছে তা যথাসম্ভব আদায় করা। যেমন জাকাত দেয়া যা সে পূর্বে দেয়নি। কেননা এতে আবার দরিদ্র লোকজনের অধিকারও রয়েছে।
[পাঁচ]: পাপের স্থানকে ত্যাগ করা যদি সেখানে অবস্থান করলে আবার সে পাপে জড়িয়ে পড়ার আশংকা থাকে।
[ছয়]: যারা পাপ কাজে সহযোগিতা করে তাদেরকে পরিত্যাগ করা (এটিও পূর্ববর্তী ১০০টি লোক হত্যাকারীর হাদীস থেকে গ্রহণ করা হয়েছে।)
মহান আল্লাহ বলেন:
“আন্তরিক বন্ধুরাই সেদিন একে অপরের শত্রুতে পরিণত হবে, মুত্তাকীরা ছাড়া।” (সূরা আল-যুখরুফ: ৬৭)
খারাপ সাথীরা একে অপরকে কিয়ামতের দিন অভিশাপ দিবে। এজন্য হে তাওবাকারী, আপনাকে এদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে ও এদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে, যদি আপনি তাদেরকে দাওয়াত দিতে অপারগ হন। শয়তান যেন আপনার ঘাড়ে আবার সওয়ার হবার সুযোগ না পায় এবং আপনাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে আবার কুপথে নিয়ে না যায়। আর আপনি তো জানেন যে, আপনি দুর্বল তাকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবেন না। এ ধরণের অনেক ঘটনা রয়েছে যে, অনেক লোকই তার পুরাতন বন্ধু বান্ধবের সাথে সম্পর্কিত হওয়ার পর আবার পাপে জড়িয়ে পড়েছে।
[সাত]: নিজের কাছে রক্ষিত হারাম জিনিসকে নষ্ট করে ফেলা। যেমন মাদক দ্রব্য, বাদ্যযন্ত্র, যেমন একতারা, হারমনিয়াম, অথবা ছবি, ব্লু ফ্লিম, অশ্লীল নভেল নাটক। এগুলো নষ্ট করে ফেলতে হবে অথবা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। তাওবাকারীকে সঠিক পথে দৃঢ়ভাবে থাকার জন্য অবশ্যই সব জাহেলিয়াতের জিনিস থেকে মুক্ত হতে হবে। এ ধরণের অনেক ঘটনা রয়েছে, যাতে দেখা যায়, এসব হারাম জিনিসই তাওবাকারীর পূর্বের অবস্থানে ফিরে যাবার পিছনে প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এর দ্বারাই সে পথভ্রষ্ট হয়েছে। আমরা আল্লাহর নিকট সঠিক পথে টিকে থাকার জন্য তাওফীক কামনা করছি।
[আট]: ভাল সঙ্গী-সাথী গ্রহণ করতে হবে যারা তাকে দ্বীনের ব্যাপারে সহায়তা করবে এবং এরা হবে খারাপ সঙ্গী সাথীর বিকল্প। আর চেষ্টা করতে হবে বিভিন্ন ধর্মীয় ও ইলমী আলোচনায় বসার জন্য। নিজেকে সব সময় এমন কাজে মশগুল রাখতে হবে যাতে কল্যাণ রয়েছে, যেন শয়তান তাকে পূর্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেবার সুযোগ না পায়।
[নয়]: নিজ শরীরের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে যাকে সে হারাম দিয়ে প্রতিপালন করেছে। একে আল্লাহর আনুগত্যের কাজে লাগাতে হবে এবং হালাল রুজি খেতে হবে যেন শরীরে আবার পবিত্র রক্ত-মাংস সৃষ্টি হয়।
[দশ]: তাওবা দম আটকে যাওয়া বা ফুরিয়ে যাবার (মৃত্যুর পূর্বক্ষণে শ্বাসকষ্ট শুরু হবার) পূর্বে এবং পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হবার পূর্বে হতে হবে। ঘড়ঘড়ার অর্থ হলো কণ্ঠনালী হতে এমন শব্দ বের হওয়া যা মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে হয়ে থাকে। এর উদ্দেশ্য হলো কিয়ামতের পূর্বেই তাওবা করতে হবে তা ছোট কিয়ামত হোক (মৃত্যু) বা বড় কিয়ামতই হোক (পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়া)।
কেননা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট তাওবা করবে ঘড়ঘড়া উঠার পূর্বে, আল্লাহ তার তাওবা কবুল করবেন।” (আহমাদ, তিরমিযী, সহীহ আল জামে’ : ৬১৩২)
অপর হাদীসে তিনি বলেন: “যে ব্যক্তি পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উঠার পূর্বে তাওবা করবে, আল্লাহ তা’আলা তার তাওবা কবুল করবেন।” (মুসলিম)

মহান তাওবা
আমরা এখানে এই উম্মতের প্রথম যুগের রাসূলের সাহাবাদের তাওবার ঘটনা উদাহরণ স্বরূপ উল্লেখ করবো।
হযরত বুরায়দা রাযিআল্লাহু তা’আল আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মায়েয ইবনে মালেক আল আসলামী রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আমার আত্মার উপর জুলুম করেছি, আমি জিনা করেছি। আমি চাই আপনি আমাকে পবিত্র করুন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সম্প্রদায়ের নিকট লোক পাঠিয়ে জিজ্ঞেস করলেন যে, তার মানসিক কোন সমস্যা আছে বলে তোমরা জান কি? তারা বললো, আমরা তো এ ধরণের কিছু জানিনা। তাকে আমরা পূর্ণ জ্ঞানবানই দেখছি। আমাদের দৃষ্টিতে সে সুস্থ মানুষ। এরপর সে তৃতীয়বার আবার রাসূলের নিকট আসে এবং রাসূল আবার তার কবিলার নিকট লোক পাঠিয়ে জিজ্ঞেস করেন। তারা জানায়, তার কোন মানসিক সমস্যা নেই। অতঃপর যখন সে চতুর্থবার আসে তখন তার জন্য গর্ত খুঁড়া হয়, তাকে পাথর ছুড়ে হত্যা করা হয়।
তিনি বলেন, গামেদিয়া (গামেদিয়া গোত্রের জনৈকা মহিলা) এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি ব্যভিচার করেছি, আপনি আমাকে পবিত্র করুন! তখন রাসূল তাকে ফিরিয়ে দিলেন। পরের দিন সে আবার এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! কেন আপনি আমাকে ফেরত পাঠালেন? হয়তো আপনি আমাকে মায়েযের মত ফেরত পাঠাচ্ছেন! আল্লাহর শপথ! আমি গর্ভবতী। তখন তিনি তাকে বললেন, যখন সন্তান প্রসব করবে, তারপর আসবে। সন্তান জন্ম নেবার পর বাচ্চাটিকে একটি কাপড়ে জড়িয়ে নিয়ে তিনি রাসূলের নিকট হাজির হলেন। তিনি তাকে বললেন, যাও যখন সে খাবার খেতে পারবে তখন আসবে। এরপর যখন বাচ্চা খাবার খেতে শুরু করে তখন মহিলা তার সন্তানকে নিয়ে এসে হাজির হয়, তখন বাচ্চার হাতে এক টুকরা রুটি ধরা ছিল। সে বলে, হে আল্লাহর রাসূল! বাচ্চা এখন খাবার খাচ্ছে। অতঃপর তার বাচ্চাটাকে একজন মুসলমানের জিম্মায় দেয়া হলো। এরপর তার বুক পর্যন্ত গর্ত খুড়তে নির্দেশ দেয়া হলো। এরপর লোকদের নির্দেশ দেয়া হলো তাকে যেন পাথর ছুড়ে হত্যা করা হয়। হযরত খালিদ ইবনে অলিদ একটা পাথর ছুঁড়ে তার মাথায় মারেন, যার ফলে রক্ত ছুটে খালিদের মুখে এসে পড়ে, এজন্য খালিদ তাকে গালি দেন। নবী করীম সাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম তার গালি শুনতে পেয়ে বলেন, ধীরে, হে খালিদ! আমার জীবন যে সত্বার হাতে রয়েছে তার কসম। এই মহিলা এমন তাওবা করেছে যদি এ তাওবা কোন অবৈধ ট্যাক্স আদায়কারী করতো তাহলে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হতো। এরপর নির্দেশ দেয়া হয় এবং তার জানাযা পড়ে তাকে দাফন করা হয়। (মুসলিম)
এক বর্ণনায় এসেছে, হযরত উমার রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি তাকে রজম (পাথর ছুড়ে হত্যা) করলেন এরপর তার আবার জানাযা পড়বেন? তখন তিনি বললেন, সে এমন তাওবা করেছে তা যদি মদীনার সত্তর জন লোকের মাঝে বন্টন করে দেয়া হতো তাহলে তা যথেষ্ট হতো। তুমি কি এর চেয়ে আর কাউকে উত্তম দেখেছো যে আল্লাহর উদ্দেশ্যেই নিজের জীবন নিয়ে উপস্থিত হয়েছে? (মুসান্নাফ আবদুর রাজ্জাক ৭/৩২৫)
তাওবা করলে পূর্বের গুনাহ মাফ হয়ে যায়
কেউ হয়তো বলতে পারেন, আমি তাওবা করতে চাই কিন্তু কে আমাকে নিশ্চয়তা দেবে যে, আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন? আমি সঠিক পথে চলতে চাই কিন্তু আমার মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব রয়েছে, যদি আমি নিশ্চিতভাবে জানতে পারতাম যে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন তাহলে আমি তাওবা করতাম?
আমি তাকে বলবো আপনার ভিতরে যে অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে সে অনুভূতি ইতিপূর্বে রাসূলের সাহাবাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছিল। আপনি যদি মনোযোগ সহকারে নিম্নোক্ত দুটি রেওয়ায়েত পড়েন তাহলে অপানার মনের প্রশ্ন আশা করি দূর হয়ে যাবে।
প্রথমত: ইমাম মুসলিম রহমাতুল্লাহ আলাইহি আম্‌র ইবনে আ’স রাযিআল্লাহু তা’আলা আনহুর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা বর্ণনা করেন। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি বলেন: মহান আল্লাহ যখন আমার অন্তরে ইসলামকে পছন্দনীয় করে দিলেন, তখন আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট গিয়ে বললাম, আপনি আপনার হাত বাড়ান আমি বাইয়াত করবো। তখন তিনি হাত বাড়ালে আমি হাত গুটিয়ে নি। তিনি বলেন, হে আম্‌র তোমার কি হলো? আমি বললাম, আমি শর্ত করতে চাই। তিনি বলেন, কিসের শর্ত? বললাম, আমাকে যেন ক্ষমা করে দেয়া হয়। তিনি বললেন, হে আম্‌র! তুমি কি জাননা যে, ইসলাম পূর্বের সবকিছু ধ্বংস করে দেয় এবং হিজরত পূর্বের সমস্ত গুনাহ ধ্বংস করে দেয়।
দ্বিতীয়ত: মুসলিম শরীফে হযরত ইবনে আব্বাস রাযিআল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে। কিছু মুশরিক লোক মানুষ হত্যা করে এবং তারা অনেক হত্যাকান্ড ঘটায়, জিনা করে এবং অনেক ব্যভিচার করে এরপর হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বলে, আপনি যা বলেন এবং যার দিকে আহ্বান করেন তা অতি উত্তম। এখন আপনি যদি আমাদেরকে জানাতেন যে, আমরা যা করেছি এর কি কাফ্‌ফারা রয়েছে? তখন আল্লাহর এ বাণী নাযিল হয়:
“আর যারা আল্লাহর সাথে অন্য কোন মা’বুদের উপাসনা করে না এবং আল্লাহ যাকে (হত্যা করা) হারাম করে দিয়েছেন, তাকে হত্যা করে না, শরীয়ত সম্মত কারণ ব্যতীত এবং তারা ব্যভিচার করে না, আর যে ব্যক্তি এরূপ কাজ করবে, তাকে শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। কিয়ামাতের দিন তার শাস্তি বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং সে তাতে অনন্তকাল লাঞ্ছিত অবস্থায় থাকবে। কিন্তু যারা তাওবা করবে এবং ঈমান আনবে আর নেক কাজ করতে থাকবে আল্লাহ তাদের পাপসমূহকে পুণ্যে পরিবর্তন করে দিবেন। আর আল্লাহ বড়ই করুণাময়। (সূরা আল ফুরকান: ৬৮-৭০)
এবং এ আয়াতটিও নাযিল হয়:
“আপনি বলে দিন, (আল্লাহ বলেন) হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর অত্যাচার করেছো, তোমরা আল্লাহ তায়ালার রহমত হতে নিরাশ হয়ো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ (অতীতের) সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করবেন। নিশ্চয় তিনি বড়ই ক্ষমাশীল, দয়ালু।” (সূরা আয্‌যুমার: ৫৩)
আল্লাহ কি আমাকে ক্ষমা করবেন?
আপনি হয়তো আমাকে বলতে পারেন, আমি তাওবা করতে চাই কিন্তু আমার গুনাহের পরিমাণ অনেক বেশী, যত রকমের গুনাহ আছে আমি তা সবই করেছি। পাপ কামাই করেছি। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে, বিগত এত বছরের সব পাপ কি আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন?
হে সম্মানিত ভাই! আপনাকে আমি বলছি, এটি বিশেষ কোন সমস্যা নয় বরং এটা অনেকেরই সমস্যা যারা তাওবা করতে চায়। একজন যুবকের কথা উদাহরণ স্বরূপ উল্লেখ করতে চাই যে একবার প্রশ্ন উত্থাপন করেছিল, খুব অল্প বয়স থেকেই সে পাপ কাজ করতে শুরু করে। এখন তার বয়স মাত্র সতের বছর। এই বয়সেই তার পাপের ফিরিস্তি অনেক লম্বা। ছোট বড় সব ধরণের পাপই সে করেছে। সে ছোট বড় বিভিন্ন মানুষের সাথে পাপ কর্ম করেছে। এমনকি সে ছোট মেয়েদেরকে পর্যন্ত ধর্ষণ করেছে। সে অনেক চুরিও করেছে। এরপর সে বলে, আমি আল্লাহর নিকট তাওবা করেছি। মাঝে মধ্যে রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়ি। প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার নফল রোজা রাখি এবং ফজর নামাযের পর কুরআন মজীদ পড়ি, আমার কি তাওবা কবুল হবে?
আমরা ইসলামের অনুসারী। আমাদের মূলনীতি হলো কুরআন সুন্নাহ থেকে ফয়সালা ও প্রতিকার গ্রহণ করা। তাতে পেলাম মহান আল্লাহর এ বাণী:
“আপনি বলে দিন যে, (আল্লাহ বলেন) হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর অত্যাচার করেছো, তোমরা আল্লাহ তা’আলার রহ্‌মত হতে নিরাশ হয়ো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ (অতীতের) সমস্ত গুনাহ্‌ ক্ষমা করবেন; নিশ্চয়ই তিনি বড়ই ক্ষমাশীল, দয়ালু। আর তোমরা তোমাদের রবের দিকে প্রত্যাবর্তন কর এবং তার নিকট আত্মসমর্পণ কর আযাব আসার পূর্বেই, অতঃপর আর সাহায্য করা হবেনা।” (সূরা আযযুমার: ৫৩-৫৪)
এটিই হচ্ছে উল্লিখিত সমস্যার সূক্ষ্ণ জবাব এবং এটি অত্যন্ত স্পষ্ট, ব্যাখ্যার কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু পাপের পরিমাণ বেশী হলে আল্লাহ ক্ষমা করবেন কিনা এ অনুভূতির কারণ হচ্ছে:
প্রথমত: আল্লাহর রহমতের ও ক্ষমার ব্যাপকতা সম্পর্কে বান্দার দৃঢ় বিশ্বাস না থাকা। এর ব্যাখ্যা হিসেবে মহান আল্লাহর এ বাণীই যথেষ্ট হবে:
” নিঃসন্দেহে আল্লাহ (অতীতের) সমস্ত গুনাহ্‌ ক্ষমা করবেন; নিশ্চয়ই তিনি বড়ই ক্ষমাশীল, দয়ালু।” (সূরা আয্‌যুমার: ৫৩)
দ্বিতীয়ত: আল্লাহর রহমত যে কত ব্যাপক সে সম্পর্কে ঈমানে ঘাটতি থাকা। এক্ষেত্রে হাদীসে কুদসীই যথেষ্ট। মহান আল্লাহ বলেন, “যে ব্যক্তি জানলো যে, আমি গুনাহ মাফ করার ক্ষমতা রাখি তাহলে তাকে ক্ষমা করে দেব এ ব্যাপারে কোন কিছুতেই পরওয়া করবো না। যদি সে আমার সাথে কোন কিছু শরীক (অংশীদার) করে থাকে।” (তাবারানী, হাকেম, সহীহ আল জামে’ ৪৩৩০) এটি হবে, যখন বান্দা আল্লাহর সাথে পরকালে সাক্ষাত করবে।
তৃতীয়ত: তাওবার কার্যকর ক্ষমতা সম্পর্কে এ ধারনা না থাকা যে, তা সব গুনাহকেই ক্ষমা করে দিতে পারে। এক্ষেত্রে রাসূলের এ হাদীসই যথেষ্ট, “যে ব্যক্তি তাওবা করবে তার যেন কোন গুনাহ থাকবে না।”
ক্ষমাকে যারা খুব কঠিন বলে মনে করে এবং চিন্তা করে, আল্লাহ কঠিন পাপ ক্ষমা করবেন কিনা? তাদের জন্য নিম্নোক্ত হাদীসটি পেশ করছি।
একশটি লোক হত্যাকারীর তাওবা
হযরত আবু সাঈদ সাদ বিন মালেক বিন সিনান আল খুদরী রাযিআল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমাদের পূর্বের জাতির একটি লোক নিরানব্বই জনকে হত্যা করে, এরপর সে সবচেয়ে বড় একজন জ্ঞানী লোকের (আলেমের) খোঁজ করে, তখন তাকে একজন আবেদের কথা বলা হয়। সে তাকে গিয়ে বলে, আমি নিরানব্বই জন মানুষকে খুন করেছি, আমার তাওবা হবে? সে বলল, না। অতঃপর তাকে হত্যা করে সে একশ জন লোক পুরা করে। অতঃপর সে একজন বিজ্ঞ ব্যক্তির খোঁজ করলে একজন আলেমের খোজ দেয়া হয়। সে তাকে গিয়ে বলে, আমি একশটি লোক হত্যা করেছি, আমার কি তাওবা করার সুযোগ আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ আছে। কে তোমার ও তাওবার মাঝে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে? তুমি উমুক স্থানে যাও সেখানে কিছু মানুষ রয়েছে যারা আল্লাহর ইবাদত করে, তুমি তাদের সাথে গিয়ে আল্লাহর ইবাদত কর। আর তুমি তোমার এলাকায় ফিরে যেও না। কেননা তোমার এলাকাটা খুব খারাপ এলাকা। সে তখন যাত্রা শুরু করে। অর্ধেক পথ অতিক্রম করার সময় তার মৃত্যু এসে উপস্থিত হয়। অতঃপর তার ব্যাপারে রহমত ও আযাবের ফেরেশতারা বিবাদে লিপ্ত হয়। রহমতের ফেরেশতারা বলে, সে তাওবা করে আল্লাহর পানে ছুটে এসেছে। পক্ষান্তরে আযাবের ফেরেশতারা বলে, সে কখনো কোন ভালো কাজই করেনি। অতঃপর সেখানে মানুষের বেশে একজন ফেরেশতা আসে। তারা তাকে বিচারক মানে। তিনি বলেন, তোমরা দুদিকটা মেপে দেখ। সে যেদিকে নিকটবর্তী হবে, তাকে সেদিকের বলে ধরে নেয়া হবে। অতঃপর মেপে দেখা গেল যে, সে যেদিকে যাচ্ছিল সে দিকটাই নিকটে। এর ফলে তাকে রহমতের ফেরেশতারা নিয়ে যায়। (বুখারী ও মুসলিম)
অপর বর্ণনায় এসেছে- সে ছিল ভাল গ্রামটার দিকে এক বিঘত পরিমাণ আগানো যার ফলে তাকে সেদিকের ধরে নেয়া হয়। অপর বর্ণনায় এসেছে- আল্লাহ অহি করে দেন যেন এদিক দূরে হয়ে যায় এবং ঐদিকটা নিকটে হয়ে যায় এবং বলেন এর মধ্যখান মাপো যার ফলে তারা মাত্র এক বিঘত পরিমাণ এর দিকে আগান পায়, যার ফলে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়।
হ্যাঁ, তার মাঝে ও তাওবার মাঝে কে বাধা হয়ে দাঁড়াবে? যারা আজকে তাওবা করতে চান তাদের গুনাহ কি এ ব্যক্তির চেয়েও বেশী বলে মনে করেন, তাহলে হতাশা কেন?
বরং হে মুসলিম ভাই! বিষয়টি এর চেয়েও বড়। আপনি মহান আল্লাহর এ বাণীকে একটু গভীরভাবে চিন্তা করে দেখুন:
“আর যারা আল্লাহর সাথে অন্য কোন মা’বুদের উপাসনা করে না এবং আল্লাহ যাকে (হত্যা করা) হারাম করে দিয়েছেন, তাকে হত্যা করে না, শরীয়ত সম্মত কারণ ব্যতীত এবং তারা ব্যভিচার করে না, আর যে ব্যক্তি এরূপ কাজ করবে, তাকে শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। কিয়ামাতের দিন তার শাস্তি বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং সে তাতে অনন্তকাল লাঞ্ছিত অবস্থায় থাকবে। কিন্তু যারা তাওবা করবে এবং ঈমান আনবে আর নেক কাজ করতে থাকবে আল্লাহ তাদের পাপসমূহকে পুণ্যে পরিবর্তন করে দিবেন। আর আল্লাহ বড়ই করুণাময়। (সূরা আল ফুরকান: ৬৮-৭০)
একটু ভালভাবে চিন্তা করে দেখুন এ বাণীটি, “তাদের পাপকে আল্লাহ নেকীতে পরিবর্তন করে দিবেন”। এতে আপনার নিকট মহান আল্লাহর অসীম অনুগ্রহের কথাই স্পষ্টভাবে ফুটে উঠবে। আলেমগণ বলেন, পরিবর্তন দুভাবে হতে পারে:
এক: খারাপ গুণকে ভালগুণে পরিবর্তন করে দেয়া। যেমন তাদের শিরককে ঈমানে পরিবর্তন করে দেয়া এবং ব্যভিচারকে পুত-পবিত্রায়, মিথ্যাকে সত্যবাদিতায় এবং খিয়ানতকে আমানদারীতে পরিবর্তন করে দেয়া।
দুই: তারা যে পাপ করেছে তা কিয়ামতের দিন নেকীতে রূপান্তরিত করে দেয়া। আপনি একটু ভাল করে পাঠ করুন, তাদের পাপকে নেকীতে পরিবর্তন করে দিবেন। তিনি একথা বলেননি প্রত্যেক পাপের স্থান নেকীতে পরিবর্তন করবেন। কেননা হতে পারে কম বা সমান অথবা বেশীতে পরিবর্তন করে দিবেন। এটা নির্ভর করছে তাওবাকারীর নিষ্ঠা ও পূর্ণতার উপর। আপনি কি এর চেয়ে উত্তম অনুগ্রহ আরো আছে বলে মনে করেন? আপনি মহান প্রভূর বাণীর উত্তম ব্যাখ্যা দেখুন নিম্নোক্ত হাদীসে:
হযরত আবদুর রহমান বিন জুবাইর হযরত আবু তালীব শাতবুল মামদুদ হতে বর্ণনা করেন, তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট আসেন। অন্য বর্ণনায় এসেছে, একজন খুবই বৃদ্ধ ব্যক্তি লাঠিতে ভর দিয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসেন যার চোখের পাতা তার চোখের সাথে লেগে গিয়েছিল। তিনি রাসূলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলেন, যদি কোন লোক সব ধরণের পাপ করে থাকে, এমন কোন পাপ নেই যা সে করেনি (ছোট বড় সব ধরনের পাপই করেছে)।
(অপর বর্ণনায় এসেছে যে, সে সব পাপই করেছে, তার পাপ যদি দুনিয়াবাসীর উপর বন্টন করে দেয়া হতো তাহলে তাদেরকে ধ্বংস করে দিত) এর কি তাওবা করার সুযোগ রয়েছে? তিনি বললেন, আপনি কি ইসলাম গ্রহণ করছেন? সে বললো, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য মাবুদ নেই এবং নিশ্চয় আপনি আল্লাহর রাসূল। তিনি বললেন, ভাল কাজ করবেন এবং মন্দ (পাপ) কাজ পরিত্যাগ করবেন তাহলে আল্লাহ তা’আলা আপনার জন্য সব পাপকে ভাল কাজে পরিণত করে দিবেন। সে বলল, আমার গাদ্দারী ও কুকীর্তি সমূহ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বর্ণনাকারী বলেন, সে বার বার আল্লাহু আকবার (আল্লাহ মহান) ধ্বনি উচ্চারণ করছিল যতক্ষণ না সে চোখের আড়াল হয়ে যায়। (তবারানী, বাজ্জার; আল-মুনজেরী তারগীব গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে, এর সনদ মজবুত ৪/১১৩; ইবনে হাজার ইসাবা গ্রন্থে বলেন, হাদীসটি শর্ত মোতাবেক রয়েছে ৪/১৪৯)
এখানে তাওবাকারী হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন, আমি ছিলাম পথভ্রষ্ট, নামায পড়তাম না, ইসলামের গন্ডির বাইরে ছিলাম, আমি কিছু ভাল কাজও করেছি, এখন তাওবা করার পর এগুলো কি ধরা হবে, নাকি সব হাওয়া হয়ে যাবে?
আপনার প্রশ্নের জবাব হলো, হযরত উরওয়া ইবনে জুবাইর হতে বর্ণিত হাদীসটি। হাকীম ইবনে হিজাম তাকে জানিয়েছেন যে, তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেছেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি জাহেলিয়াতের যুগে দান-খয়রাত, গোলাম মুক্ত করা, আত্মীয় রক্ষা করা ইত্যাদি নেকীর কাজ করতাম। আমি কি এতে নেকী পাব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “তুমি ইসলাম গ্রহণ করেছো, পূর্বেরগুলোকে উত্তম ভাবেই পাবে।” (বুখারী)
সুতরাং এসব পাপ ক্ষমায় পরিবর্তন করে দেয়া হবে এবং এসব জাহেলিয়াতের যুগের নেকী তাওবার পরে ঠিক রাখা হবে। তাহলে আর কি-ইবা বাকী থাকলো?
পাপ করে ফেললে কি করবো?
আপনি হয়তো বলতে পারেন, যখন আমার দ্বারা পাপ হয়ে যাবে তখন কিভাবে দ্রুত তাওবা করতে পারি? এমন কোন কাজ রয়েছে কি যা পাপ করার সাথে সাথেই করতে পারি?
উত্তর: পাপ থেকে বিরত হয়েই দুটি কাজ করতে হবে:
এক: অন্তঃকরণের কাজ হলো অনুতপ্ত হওয়া এবং এই বলে দৃঢ় সংকল্প নেয়া যে, এ ধরণের কাজ আর করবো না। এটি হবে মূলত আল্লাহর ভয়ের ফলে।
দুই: অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কাজ বিভিন্ন প্রকারের নেকীর কাজ করার মাধ্যমে। এর মধ্যে অন্যতম হলো তাওবার নামায। এর দলীল হলো: হযরত আবু বকর রাযিআল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, কোন মানুষ পাপ করার পর যদি পবিত্রতা অর্জন করে, অতঃপর নামায পড়ে এরপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে, তাহলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন। (আসহাবুস সুনান, সহীহ আত্‌তারগীব ওয়াত্‌তারহীব ১/২৮৪) অতঃপর তিনি এ আয়াত পাঠ করেন:
“যারা অশ্লীল কাজ করার পর অথবা নিজেদের প্রতি জুলুম করার পর আল্লাহকে স্মরণ করে এরপর নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, আর আল্লাহ ব্যতীত গুনাহ সমূহ ক্ষমা করতে কেউ সক্ষম নয় এবং তারা নিজেদের কৃতকর্মের উপর অটল থাকে না এবং তারা (গুনাহের বা পাপের উপর অটল থাকার ভীষণ পরিণাম) জানে।” (সূরা আলে-ইমরান: ১৩৫)
অন্যান্য সহীহ বর্ণনায় এসেছে এই দু’রাকাতের গুণাবলীর কথা যা গুনাহ মাফের কারণ হবে তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ:
(১) যে কেউ সুন্দরভাবে অযু করে তার সগীরা গুনাহ মাফ করে দেয়া হয় (কেননা অযু করলে ধৌত অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সগীরা পাপ পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে ঝরে পড়ে)
আর উত্তমভাবে অযু হলো: প্রথমে বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা এবং শেষে এ দু’আ করা:
“أَشْهَدُ اَنْ لاَ اِلَهَ اِلاَّ اللهُ وَحْدهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ وَ أَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ. اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ التَّوَّابِينَ وَاجْعَلْنِي مِنَ الْمُتَطَهِّرِينَ، سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أنْ لاَّ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَاَتُوْبُ إِلَيْكَ”
“আমি সাক্ষ্য দিচিছ যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য মাবুদ নেই। তিনি একক তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল। হে আল্লাহ! আমাকে তাওবাকারীদের এবং পবিত্রতা অর্জনকারী ব্যাক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করুন। হে আল্লাহ! আপনার স্তুতির সাথেই আমি আপনার প্রশংসা করছি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ব্যতীত কোন সত্য মাবুদ নেই। আমি আপনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আপনার নিকট তাওবা করছি।”
(২) এতে মনে মনে কোন কথা বলা যাবে না।
(৩) এতে একাগ্রতা ও বিনয়ীভাব আনতে হবে।
(৪) এরপর ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।
পূর্বোক্ত কাজের ফলাফল:
(ক) পূর্বের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
(খ) জান্নাত অবধারিত হয়ে যাবে। (সহীহ আততারগীব ১/৯৪-৯৫)
(গ) বেশী বেশী নেকী ও সৎকর্ম করা।
আপনি সহীহ হাদীসে উল্লিখিত এই উদাহরণটি ভালভাবে চিন্তা করে দেখুন! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
((إِنَّ مِثْلَ الَّذِي يَعْمَلُ السَّيِّئَاتِ ثُمَّ يَعْمَلُ الْحَسَنَاتِ كَمَثَلِ رَجُلٍ كَانَتْ عَلَيْهِ دِرْعٌ ضَيِّقَةٌ قَدْ خَنَقَتْهُ ثُمَّ عَمِلَ حَسَنَةً فَانْفَكَّتْ حَلَقَةٌ ثُمَّ عَمِلَ حَسَنَةً أُخْرَىْ فَانْفَكَّتْ حَلَقَةً أُخْرَى حَتَّى يَخْرُجَ إِلَى الأَرْضِ)) (مسند الإمام أحمد، والطبراني في الكبير)
“ঐ ব্যক্তির উদাহরণ হলো, যে খারাপ কাজ করে সে সেই ব্যক্তির মত যার গায়ে খুব আটোসাটো লৌহবর্ম চাপান আছে যা তাকে চেপে ধরে রেখেছে, অতঃপর সে একটি নেক কাজ করলে একটি আংটা খুলে গেল, অতঃপর আরেকটি নেক কাজ করলে আরেকটি আংটা খুলে গেল, এভাবে সব খুলে মাটিতে পড়ে যায়”। (মুসনাদে আহমাদ, তরারানী)
সুতরাং নেকী পাপীকে গুনাহের বন্দীখানা থেকে মুক্ত করে তাকে আনুগত্যের প্রশস্ত ময়দানে বের করে নিয়ে আসে। প্রিয় ভাই! নিম্নোক্ত ঘটনা আপনাকে বিষয়টি আরো পরিষ্কার করে দিবে।
হযরত ইবনে মাসউদ রাযিআল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বলে, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এক মহিলাকে বাগানের ভিতর একাকী পেয়ে সব কিছুই করেছি কিন্তু সহবাস করিনি। চুমা খেয়েছি, তাকে চেপে ধরেছি, এছাড়া আর কিছু করিনি। এখন আপনি আমার ব্যাপারে যা ইচ্ছা করতে পারেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে কিছু বললেন না, সুতরাং লোকটি চলে গেল। অতঃপর হযরত উমর রাযিআল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, আল্লাহ লোকটির অবস্থা গোপন রেখেছিলেন যদি সে নিজের কথা গোপন রাখত। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চোখ তুলে তাকালেন এবং বললেন, ওকে আমার কাছে নিয়ে এসো। যখন তাকে ডেকে নিয়ে আসা হলো তখন তাকে এ আয়াত পাঠ করে শুনালেন:
“আপনি নামাজ প্রতিষ্ঠা করুন দিনের দুই প্রান্তে এবং রাতের একটি অংশে। নিশ্চয়ই নেকী গুনাহকে মিটিয়ে দেয়। এটি হলো উপদেশ, উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য।” (সূরা হুদ: ১১৪)
মুয়ায রাযিআল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, অপর বর্ণনায় এসেছে হযরত উমার থেকে তিনি বললেন: হে আল্লাহর রাসুল! এটি কি তার একার জন্য না সকল মানুষের জন্য? তখন তিনি বললেন, বরং সমস্ত মানুষের জন্য। (মুসলিম)
খারাপ লোকেরা আমাকে তাড়া করে চলেছে
আপনি হয়তো বলবেন, আমি তাওবা করতে চাই কিন্তু আমার সঙ্গী-সাথী খারাপ লোকেরা সর্বত্র আমাকে তাড়া করে চলেছে। তারা আমার মধ্যে সামান্য পরিবর্তনের কথা জেনেই প্রচন্ড চাপ ও আক্রমণ শুরু করেছে এবং আমি নিজেকে খুব অসহায় মনে করছি। এখন আমি কি করবো?
আমি আপনাকে বলছি, আপনি সবর (ধৈর্যধারণ) করুন। এটিই হচ্ছে সত্যনিষ্ঠ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা’আলার পদ্ধতি যেন তিনি সত্যবাদীদেরকে মিথ্যাবাদীদের মধ্যে থেকে পৃথক করে দেন এবং ভাল ও মন্দের মধ্যে পার্থক্য করেদেন।
আপনি যেহেতু পথের শুরুতে পা রেখেছেন, সেহেতু মজবুত থাকুন। এসব মানুষ ও জিন শয়তান একে অপরকে প্ররোচিত করে, যেন আপনাকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিতে পারে। সুতরাং আপনি তাদের আনুগত্য করবেন না। তারা আপনাকে বলবে, এ একটু আবেগী হয়ে উঠেছে, কয়েক দিনের মধ্যে এসব দূর হয়ে যাবে। এটা সাময়িক ব্যাপার। আশ্চর্যের বিষয় হলো তাওবা করার প্রথম দিকে কেউ কেউ তার সঙ্গীকে বলে, খুব সহজেই আবার খারাপ পথে ফিরে আসবে!!
এক ব্যক্তি এক মহিলার মুখের উপর টেলিফোন বন্ধ করে দেয় যেহেতু সে তাওবা করেছে, আর পাপ করতে চায়না। সে মহিলা বেশ কিছু দিন পর আবার যোগাযোগ করে বলে, আশা করি তোমার ঐসব নাক সিটকানো দূর হয়ে গেছে? এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন:
“বলুন! আমি আশ্রয় চাচ্ছি মানুষের প্রভূর নিকট, মানুষের মালিকের নিকট, মানুষের মাবুদের নিকট খান্নাস শয়তানের কুমন্ত্রণা হতে। যারা মানুষের বক্ষে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষ ও জিনদের মধ্যে থেকে। (সূরা আন্‌নাস: ১-৬)
সুতরাং আপনার প্রভূই কি উত্তম নন আনুগত্যের দিক থেকে, নাকি খারাপ লোকদের অনুশোচনা?!
আপনাকে অবশ্যই জেনে রাখতে হবে যে; তারা আপনাকে সর্বত্র তাড়া করে বেড়াবে। তারা সর্বদাই আপনাকে যে কোন ভাবেই হোক খারাপ পথে ফিরয়ে নেয়ার চেষ্টা করবে।
আমাকে এক ব্যক্তি বলে যে, সে তাওবা করার পর তার এক সময়কার দুষ্ট বান্ধবীটি তার ড্রাইভারকে বলতো তুমি ওর পিছনে পিছনে গাড়ী নিয়ে যাও। সে মসজিদে যাবার পথে ঐ বান্ধবী গাড়ীর জানালা দিয়ে কথা বলার চেষ্টা করতো।
তবে ঈমানদার ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ রক্ষা করবেন; এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন:
“আল্লাহ তাদেরকে দৃঢ় পদ রাখবেন যারা ঈমান এনেছে পবিত্র তাওহীদের বাণীর প্রতি দুনিয়ার ও আখেরাতের জীবনে।” (সূরা ইবরাহীম: ২৭)
তারা চেষ্টা করবে আপনাকে অতীতের কথা স্মরণ করাতে এবং পূর্বের গুনাহকে চাকচিক্যময় করে তুলতে সব রকমের পন্থায়, স্মরণ করে … ছবি … চিঠিপত্র … ইত্যাদির মাধ্যমে। আপনি তাদের কথা শুনবেন না। আপনি সতর্ক থাকবেন যেন তারা আপনাকে ফেতনায় না ফেলতে পারে। আপনি এখানে বিখ্যাত সাহাবী কা’ব ইবনে মালেকের ঘটনা স্মরণ করুন। তিনি তাবুকের যুদ্ধে না যাওয়ার কারণে যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমস্ত সাহাবীকে তাকে বয়কট করে চলতে বলে ছিলেন, যতক্ষণ না আল্লাহর পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে অনুমতি আসে। তার নিকট গাস্‌সানের বাদশা চিঠি লিখে এ বলে, ‘আমি জানতে পেরেছি যে, আপনার সাথী আপনার সাথে রুঢ় ব্যবহার করেছে। আল্লাহ আপনাকে অপমানিত করবেন না এবং শেষ করেও দিবেন না। সুতরাং আপনার উচিৎ আমাদের সাথে মিলে যাওয়া।’ সে কাফের চেয়েছিল এ মুসলমানকে মদীনা থেকে বের করে নিয়ে নিজের দলে টেনে নিতে এবং সে যেন কাফেরের দেশে গিয়ে নষ্ট হয়ে যায়।
এখানে সম্মানিত সাহাবীর ভূমিকা কি? কা’ব : বলেন, আমি তা পাঠ করে বললাম এটিও একটি পরীক্ষা, আমি সে চিঠিটি দলা পাকিয়ে চুলার মধ্যে ছুড়ে ফেলে পুড়িয়ে ফেললাম।
আপনিও এই রকম শক্ত হবেন, যে পুরুষ বা মহিলাই আপনাকে লিখবে তা পুড়িয়ে ফেলবেন, যেন তা ছাই হয়ে যায় এবং আপনি স্মরণ করবেন কিভাবে জাহান্নামে পুড়তে হবে সে কথা:
“অতএব, আপনি ধৈর্যধারণ করুন, নিঃসন্দেহে আল্লাহর ওয়াদা সত্য, আর এই অবিশ্বাসীরা যেন আপনাকে বিপথগামী করতে না পারে।” (আর-রূম: ৬০)
তাওবা করা থেকে ফিরানোর হুমকি
আমি তাওবা করতে চাই কিন্তু আমার পুরাতন বন্ধুরা আমাকে হুমকি দিচ্ছে, তারা আমার কুকীর্তি মানুষের সামনে প্রকাশ করে দিবে এবং আমার গোপনীয় কার্যক্রম প্রকাশ করে দিবে। তাদের নিকট প্রমাণপত্র ও ছবি রয়েছে। আমি আমার মর্যাদার ব্যাপারে ভীত, শংকিত।
আমি বলছি, আপনি শয়তানদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করুন। নিশ্চয় শয়তানদের চক্রান্ত খুবই দুর্বল। যারা আজ আপনার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ এসব শয়তান ও তার দোসরদের চাপ থেমে যাবে অতঃপর খুব শীঘ্রই তারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে এবং মুমিনের ধৈর্য ও দৃঢ়তার সামনে তারা পরাজিত হবেই।
আপনি নিশ্চিত থাকুন যে, আপনি যদি তাদের কথা মত চলেন, তাদের কাছে মাথা নত করেন তাহলে তারা আরো বেশী বেশী প্রমাণ আপনার বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে চেষ্টা করবে। সুতরাং পূর্বে ও পরে সর্বাবস্থায় আপনিই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। অতএব তাদের অনুসরণ না করে আল্লাহর সাহায্য চান এবং বলুন:
“আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট এবং তিনিই উত্তম অভিভাবক।” (সূরা আলে ইমরান: ১৭৩)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতির আশংকা করতেন তখন বলতেন:
((اللَّهُمَّ إِنَّا نَجْعَلُكَ فِي نُحُورِهِمْ وَنَعُوذُبِكَ مِنْ شُرُورِهِمْ)) (مسند أحمد، أبو داود، صحيح الجامع)
“হে আল্লাহ! আমি আপনাকে তাদের গলার উপর ছেড়ে দিচ্ছি এবং আপনার নিকট পরিত্রাণ চাচ্ছি তাদের খারাপী থেকে।” (আহমাদ, আবু দাউদ, জামে’ সহীহ ৪৫৮২)
একথা সত্য যে, অবস্থানটি খুবই কঠিন ঐ বেচারার জন্য যে তাওবা করেছে, তার সাথে তার খারাপ বন্ধুরা যোগাযোগ করে তাকে হুমকি দিয়ে বলে তোমার কথা আমরা রেকর্ড করে রেখেছি, তোমার ছবিও আমাদের নিকট রয়েছে, তুমি যদি আমাদের সাথে বের না হও তাহলে তোমার পরিবারের নিকট সব ফাঁস করে দিবো! একথা সঠিক যে, আপনার অবস্থান খুবই নাজুক।
দেখুন শয়তানের দোসরদের যুদ্ধ সেই সব গায়ক গায়িকা, নায়িকাদের বিরুদ্ধে যারা তাওবা করেছে। তারা তাদের খারাপ প্রোডাক্টগুলোকে বাজারজাত করে তাদের উপর চাপ দেয়ার জন্য এবং মানসিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টির লক্ষ্যে। কিন্তু আল্লাহ মুত্তাকিদের সাথে রয়েছেন, তাওবাকারীদের সাথে রয়েছেন এবং তিনি মুমিনদের অভিভাবক। তিনি তাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন না এবং তাদেরকে ছেড়ে দিবেন না। তাঁর নিকট কোন বান্দা আশ্রয় নেয়ার পর কখনো অপমানিত হয়না। আপনি জেনে রাখুন, নিশ্চয় কঠিন অবস্থার সাথেই সহজ অবস্থা আসে এবং সংকীর্ণতার পরেই প্রশস্ততা আসে।
হে তাওবাকারী ভাই!
আপনার জন্য এই ঘটনাটি উল্লেখ করছি যা আমাদের কথার যথার্থতা প্রমাণ করবে। ঘটনাটি হলো, প্রখ্যাত ফেদায়ী (গেরিলা) সাহাবী মারসাদ বিন আবিল মারসাদ আল গানাবীর, যিনি দুর্বল মুসলমানদেরকে মক্কা থেকে গোপনে মদীনায় নিয়ে আসতেন। তিনি মক্কা থেকে দুর্বল বন্দী লোকদের গোপনে মদীনায় পৌছে দেয়ার ব্যবস্থা করতেন।
মক্কায় একজন নষ্টা মহিলা ছিল যার নাম আনাক এবং সে ছিল তার বান্ধবী। তিনি মক্কার একজন বন্দী লোককে ওয়াদা দিয়েছিলেন মদীনায় পৌছে দেয়ার। তিনি বলেন, এক চাঁদনী রাতে আমি মক্কার এক দেয়ালের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। আনাক আমার ছায়া দেখে এগিয়ে আসে এবং বলে, মারসাদ? আমি বললাম হাঁ, মারসাদ। সে বললো, মারহাবা, স্বাগতম, এস আমার কাছে রাত কাটাও। আমি বললাম, হে আনাক! আল্লাহ ব্যভিচারকে হারাম করেছেন। সে তখন চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো, হে তাবুবাসীরা! এই লোকটি তোমাদের বন্দীদেরকে নিয়ে ভাগতে চায়।
তিনি বলেন, আটজন লোক আমার পিছু নেয় এবং আমি তখন খান্দামা পাহাড়ে (মক্কার প্রবেশ পথের একটি পাহাড়) ঢুকে পড়ে এক গুহায় লুকিয়ে যায়, এরা আমার সন্ধানে আমার কাছে এসে পড়ে, কিন্তু আল্লাহ আমাকে এদের থেকে আড়াল করে রাখেন। তিনি বলেন, এরপর তারা ফিরে যায় এবং আমিও ঐ লোকটির নিকট গিয়ে তাকে বহন করে নিয়ে আসি। লোকটি ছিল বেশ ভারী, আমার অনেক কষ্ট হয়ে ছিল। তাকে কিছু দূরে বয়ে নিয়ে গিয়ে তার হাত পায়ের বাঁধন খুলে ফেলি। আমি অনেক কষ্টে তাকে মদীনায় নিয়ে আসি। এরপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বলি, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আনাককে বিয়ে করতে পারি? (কথাটি দুবার বললাম) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চুপ করে থাকলেন কোন জবাব দিলেন না। তখন এ আয়াত নাযিল হয়:
“ব্যভিচারী পুরুষ ব্যভিচারিণী মহিলাকেই বিয়ে করে অথবা মুশরিকা মহিলাকে এবং ব্যভিচারিণী মহিলা ব্যভিচারী পুরুষ অথবা মুশরিক লোককেই বিয়ে করে থাকে।” (সূরা আন্‌নূর: ৩)
তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে মারসাদ! ব্যভিচারী পুরুষই কেবল ব্যভিচারিণীকে অথবা মুশরিকা মহিলাকে বিয়ে করে থাকে এবং ব্যভিচারিণী মহিলাও একমাত্র ব্যভিচারী পুরুষ অথবা মুশরিক লোককে বিয়ে করে থাকে, সুতরাং তুমি তাকে বিয়ে করো না। (তিরমিযী ৩/৮০)
আপনি দেখলেন কিভাবে আল্লাহ তা’আলা ঈমানদারের পক্ষে প্রতিরোধ গড়লেন এবং তিনি মুহসিনদের (সৎকর্ম পরায়ণদের অথবা সৎকর্মশীল লোকদের) সাথে কি আচরণ করলেন? অবস্থা যদি খুবই খারাপ হয় যে, আপনি যা আশংকা করছেন তাই ঘটে আর এর ব্যাখ্যা দেয়ার প্রয়োজন পড়ে তাহলে আপনি আপনার অবস্থান বর্ণনা করুন, স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিন এবং বলুন, হ্যাঁ, আমি পাপ করতাম। এখন আল্লাহর নিকট তাওবা (প্রত্যাবর্তন) করেছি? এখন তোমরা কি চাও?
আমাদেরকে স্মরণ রাখতে হবে যে, প্রকৃত কেলেঙ্কারী তো হলো আল্লাহর সামনে কিয়ামতের দিনের কেলেঙ্কারী। সেই ভয়ানক দিনে যেদিন একশ, দু’শ, হাজার, দু’হাজার লোকের সমানে নয় বিশ্বের মানুষের সামনে, সমস্ত সৃষ্টিকুলের সামনে, ফেরেশতা, জিন ও ইনসান সবার সামনে হযরত আদম থেকে শুরু করে দুনিয়ার সর্বশেষ মানুষের সামনে।
আসুন আমরা হযরত ইবরাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লামের দু’আ পাঠ করি:
“যেদিন সকলকে উত্থাপিত করা হবে সেদিন আমাকে লাঞ্ছিত করো না। যেদিন কোন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কাজে আসবে না। একমাত্র কাজে আসবে যে সঠিক অন্তঃকরণ নিয়ে উপস্থিত হবে।” (সূরা আশশুয়ারা: ৮৭-৮৯)
সংকট মুহূর্তে নবীর শেখানো দু’আ পড়ে নিজেকে হেফাজত করুন:
((اللَّهُمَّ اسْتُرْ عَوْرَاتِنَا وَآمِنْ رَوْعَاتِنَا، اللَّهُمَّ اِجْعَلْ ثَأْرَنَا عَلَى مَنْ ظَلَمَنَا، وَانْصُرْنَا عَلَى مَنْ بَغَى عَلَيْنَا، اللَّهُمَّ لاَ تُشْمِتْ بِنَا الأَعْدَاءَ وَلاَ الْحَاسِدِيْنَ))
“হে আল্লাহ! আপনি আমাদের ইজ্জত রক্ষা করুন এবং আমাদের নিরাপদ রাখুন। হে আল্লাহ! আমাদের প্রতিশোধ তাদের উপর ফেলুন যারা আমাদের উপর জুলুম করেছে এবং আমাদেরকে সাহায্য করুন তাদের বিরুদ্ধে যারা আমাদের উপর চড়াও করেছে। হে আল্লাহ! আমাদের শত্রুদেরকে ও হিংসুকদেরকে আমাদের বিরুদ্ধে খুশি হতে দিয়েন না।”
পাপ আমার জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে
আপনি হয়তো বলতে পারেন, আমি অনেক পাপ করেছি এবং আল্লাহর কাছে তাওবা করেছি। কিন্তু আমার পাপ আমাকে তাড়া করে চলেছে। যখন এসব পাপের কথা মনে পড়ে তখন আমার দম বন্ধ হয়ে আসে, আমার জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ে, আরামদায়ক বিছানাও কষ্টদায়ক মনে হয়, চিন্তায় রাত কাটে না, কোন কিছুতেই শান্তি পাই না, আমার শান্তির পথ কোন দিকে?
হে মুসলিম ভাই! আপনাকে বলছি, এই অনুভূতিই সত্যিকার তাওবারই প্রমাণ বহন করে এবং এটিই হলো প্রকৃত পক্ষে অনুতপ্ত হওয়া। অনুতপ্ত হওয়াটাই হলো তাওবা। সুতরাং যা ঘটে গেছে, সে ব্যাপারে আশাবাদী হোন যে, আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করে দিবেন এবং আল্লাহর রহমতের ব্যাপারে নিরাশ হবেন না, তার করুণার ব্যাপারে হতাশ হবেন না। মহান আল্লাহ বলেন:
“পথভ্রষ্ট ব্যক্তিরা ব্যতীত অন্য কেউ আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয় না।” (সূরা আল-হিজর: ৫৬)
হযরত ইবনে মাসউদ রাযিআল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন:
((أَكْبَرُ الْكَبَائِرِ الإِشْرَاكُ بِاللهِ، والأَمْنُ مِنْ مَكْرِ اللهِ، والْقُنُوطُ مِنْ رَحْمَةِ اللهِ، وَالْيَأسُ مِنْ رَوْحِ اللهِ)) (رواه عبد الرزاق وصححه الهيثمي وابن كثير)
“সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহ হলো আল্লাহর সাথে শিরক করা এবং আল্লাহর কৌশল থেকে নিজেকে নিরাপদ মনে করা, আল্লাহর রহমতের ব্যাপারে নিরাশ হওয়া এবং আল্লাহর দয়ার ব্যাপারে হতাশ হওয়া।” (আবদুর রাজ্জাক, হায়সামী এবং ইবনে কাসীর এটিকে সহীহ বলেছেন)
একজন মুমিন বান্দা ভয় ও আশার মধ্যে থাকবে। কখনো হয়তো এর কোনটি প্রাধান্য পাবে। বিশেষ অবস্থায় যখন পাপ করবে তখন ভয়ের দিকটা বেশী হবে তাওবা করার জন্য এবং যখন তাওবা করবে তখন আশার দিকটা প্রধান্য পাবে, আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করবে।
আমি কি পাপের স্বীকারোক্তি করবো?
একজন চিন্তিত স্বরে প্রশ্ন করলো, আমি তাওবা করতে চাই কিন্তু আমার উপর কি এটা ওয়াজিব যে, আমি গিয়ে স্বীকার করবো যা কিছু পাপ করেছি এবং আমার তাওবার কি এটা শর্ত যে, আমি বিচারকের সামনে গিয়ে কোর্টে দাঁড়িয়ে সব কিছু স্বীকার করবো, আমার উপর শাস্তি বিধান কার্যকর করতে বলবো?
আমি বলবো যে ইতিপূর্বে মায়েয ও জনৈকা মহিলা এবং সেই ব্যক্তির ঘটনা যে এক মহিলাকে বাগানের ভিতর একাকী পেয়ে চুমু খেয়েছিল এর অর্থই বা কি?
হে মুসলিম ভাই! আপনার উদ্দেশ্যে বলছি, আল্লাহর সাথে কোন রকম মাধ্যম ছাড়াই বান্দার যোগাযোগ এই একত্ববাদী ইসলামের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য যা আল্লাহ পছন্দ করেন। তিনি বলেন:
“এবং যখন আপনাকে আমার বান্দারা আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে, (তখন বলবেন) আমি তাদের খুবই নিকটে রয়েছি, প্রার্থনাকারীর প্রার্থনায় সাড়া দেই যখন সে আমাকে ডাকে।” (সূরা আল বাকারা: ১৮৬)
আমরা যখন বিশ্বাস করি যে, তাওবা হলো একমাত্র আল্লাহর জন্য তখন স্বীকারোক্তিও একমাত্র আল্লাহর নিকট করতে হবে। ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দু’আতে বলা হয়েছে, “আমি আপনার দেয়া আমার উপর নেয়ামতের স্বীকার করছি এবং আমার গুনাহেরও স্বীকারোক্তি দিচ্ছি।” অর্থাৎ হে আল্লাহ! আপনার নিকট আমার অপরাধ স্বীকার করছি। আল্লাহর জন্যই সমস্ত প্রশংসা যে, আমরা খৃষ্টানদের মত নই, পাদ্রী ও স্বীকারোক্তির চেয়ার এবং ক্ষমার দলীল … (তারাই ক্ষমা করে দিবে) ইত্যাদি যত সব হাস্যকর বিষয়। বরং মহান আল্লাহ্‌ বলেন:
“তারা কি জানেনা যে, আল্লাহই একমাত্র তার বান্দাদের তাওবা কবুল করেন।” (সূরা আত্‌তাওবা: ১০৪)
কোন রকমের মাধ্যম ছাড়াই।
শাস্তির বিধান কায়েম করার ব্যাপারটি হলো, যদি বিষয়টি বিচারক অথবা কাজীর নিকট পর্যন্ত না পৌছে তাহলে জরুরী নয় যে কেউ এসে স্বীকারোক্তি দিবে। যার দোষ আল্লাহ গোপন রেখেছেন সে যেন নিজের দোষ গোপন রাখে। তার জন্য যথেষ্ট হবে সে তার রবের নিকট তাওবা করবে। মহান আল্লাহ বান্দাদের দোষত্রুটি গোপন করতে ভালবাসেন। তবে সেই সব সাহাবী যেমন মায়েয এবং মহিলা সাহাবী যারা ব্যভিচার করেছিলেন এবং যে ব্যক্তি বাগানে জনৈকা মহিলাকে চুমু খেয়েছিলেন, এবং তারা আপন আপন কর্মের কথা নিজ নিজ ইচ্ছায় প্রকাশ করেছিলেন অথচ তা তাদের উপর ওয়াজিব ছিলনা। এটা হয়েছিল তাদের নিজেদেরকে পবিত্র করার প্রবল ইচ্ছার কারণে। এর প্রমাণ হলো, যখন মায়েয এবং মহিলাটি প্রথমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট আসেন তখন তিনি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। তেমনিভাবে হযরত উমর ফারুক রাযিয়াল্লাহু আনহুর বক্তব্য সেই ব্যক্তির ব্যাপারে যে বাগানের ভিতর জনৈক মহিলাকে চুমু খায়, আল্লাহ এর দোষ গোপন করে রেখেছেন, যদি সে নিজের দোষ নিজে ঢেকে রাখত তাহলে কতই না ভাল হতো, আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ করে থেকে এটাকে সমর্থন করেন। এর উপর ভিত্তি করে বলা যায় যে, কোর্টে গিয়ে লিপিবদ্ধ করে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় সরকারীভাবে স্বীকারোক্তি দেয়ার প্রয়োজন নেই, যখন আল্লাহ তার বান্দার দোষ ত্রুটিকে গোপন রেখেছেন। তেমনিভাবে মসজিদের ইমামের নিকট গিয়ে হদ কায়েম করার জন্য নিবেদন করাও জরুরী নয় এবং বন্ধু বান্ধবের সহযোগিতা নেয়ারও প্রয়োজন নেই যেমন ঘরের মধ্যে তাকে বেত্রাঘাত করবে, যেমনটি অনেকের মনেই এসব চিন্তার উদয় হয়ে থাকে।
এ থেকেই বুঝা যায় কতিপয় জাহেল লোকের জঘন্যতম অবস্থানের কথা যা তাওবাকারীদের সাথে ঘটিয়েছে, এর সার-সংক্ষেপ হলো নিম্নোক্ত ঘটনা:
এক গুনাহগার মসজিদের জনৈক জাহেল ইমামের নিকট গিয়ে স্বীকার করে যে, সে এসব পাপ করেছে এবং তার নিকট এর সমাধান চায়। তখন তাকে সে ইমাম বলে, অবশ্যই প্রথমে তোমাকে কোর্টে যেতে হবে এবং শরীয়ত মোতাবেক স্বীকারোক্তি প্রদান করতে হবে। এরপর তোমার উপর হদ কায়েম করা হবে, তারপর তোমার অন্যান্য বিষয়ে দৃষ্টি দেয়া হবে। যখন এই বেচারা দেখলো যে এসব কাজ করতে সে সক্ষম নয় তখন তাওবা থেকে ফিরে গেল এবং পূর্বের অবস্থায় চলে গেল। আমি এ সুযোগে একটি কথা বলতে চাই, হে মুসলমান ভাইয়েরা! দ্বীনের বিধান সম্পর্কে অবগত হওয়া আমাদের উপর পবিত্র আমানত এবং এটি তার সঠিক মূল উৎস থেকে গ্রহণ করাটাও পবিত্র আমানত। আল্লাহ বলেন:
“তোমরা বিজ্ঞলোকদেরকে জিজ্ঞেস করো, যদি তোমরা না জান।” (সূরা আন্‌নহল: ৪৩)
তিনি আরো বলেন:
“তিনি অতীব দয়ালু সুতরাং এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস কর।” (সূরা আল-ফুরকান: ৫৯)
প্রত্যেক ওয়ায়েজই ফাতওয়া দেয়ার জন্য উপযুক্ত নয় এবং প্রত্যেক ইমাম মুয়াজ্জিনই মানুষকে শারীয়তের হুকুম আহকাম বলে দেয়ার যোগ্যতা রাখে না এবং প্রত্যেক গল্পকার বা সাহিত্যিকই ফাত্‌ওয়া সংগ্রহ করে দেয়ার যোগ্যতা রাখেনা। একজন মুসলমান অবশ্যই জিজ্ঞাসিত হবে যে, সে কার নিকট থেকে ফাতওয়া গ্রহণ করেছে এবং এটি একটি তাআব্বুদী (শরয়ী) বিষয়।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতের জন্য পথভ্রষ্ট আলেম ওলামার ব্যাপারে আশংকা করেছেন। একজন সালাফ বলেন, এই ইলম হচ্ছে দ্বীনের অন্তর্গত, সুতরাং তোমরা লক্ষ্য করবে যে, কার নিকট থেকে তোমাদের এই দ্বীন গ্রহণ করছ। অতএব হে আল্লাহর বান্দারা! এই দুস্কর পথের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করুন এবং জ্ঞানবানদের কাছে পথের দিশা সন্ধান করুন সেসব বিষয়ে যা আপনার নিকট অস্পষ্ট থেকে যায়। আল্লাহই আমাদের সর্বাত্মক সাহায্যকারী।
তাওবাকারীর জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাত্‌ওয়া
আপনি হয়তো বলতে পারেন, আমি তাওবা করতে চাই কিন্তু আমি তাওবার হুকুম আহকাম সম্পর্কে অজ্ঞ। আমার মনে কতিপয় গুনাহের ব্যাপারে অনেক প্রশ্নের উদ্রেক হয় এর সঠিক তাওবার ব্যাপারে, আল্লাহর যে সব হক নষ্ট করেছি তা পূরণ করার ব্যাপারে এবং বান্দাদের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে যা আমি ইতিপূর্বে অন্যায়ভাবে গ্রহণ করেছি। এসব প্রশ্নের উত্তর কি আছে?
আল্লাহর পানে প্রত্যাবর্তনকারী ব্যক্তি! আপনার জন্য এসব প্রশ্নের উত্তর উল্লেখ করবো ইনশাআল্লাহ।
[প্রশ্ন নং ১] আমি পাপ করার পর তাওবা করি অতঃপর আমার কু-প্রবৃত্তি আমার উপর বিজয়ী হয়, যার ফলে আবার পাপের পথে ফিরে আসি, এর ফলে কি আমার পূর্বের তাওবা বাতিল হয়ে যাবে এবং আমার পূর্বের ও পরের গুনাহ বাকী রয়ে যাবে?
উত্তর: তাওবা সঠিক হওয়ার জন্য শর্ত হলো পাপ থেকে পূর্ণভাবে মুক্ত হওয়া এবং এজন্য অনুতপ্ত হওয়া, পুনরায় আর তা না করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হওয়া। এরপর যদি আবার কেউ পাপ করে ফেলে তাহলে সে যেন নতুনভাবে পাপ করল, এজন্য তাকে নতুনভাবে তাওবা করতে হবে এবং তার পূর্বের তাওবা ঠিক থাকবে।
[প্রশ্ন নং ২] একটি গুনাহের তাওবা সঠিক হবে কি অথচ আমি অন্য একটি গুনাহের উপর অটল আছি?
উত্তর: কোন একটি গুনাহের জন্য তাওবা করা ঠিক হবে যদিও সে অন্য গুনাহে লিপ্ত থাকে, যদি একই ধরণের গুনাহ না হয়ে থাকে এবং তা প্রথম পাপের সাথে সম্পৃক্ত না হয়। উদাহরণ স্বরূপ যদি কেউ সুদ থেকে তাওবা করে কিন্তু মদ্যপান করা থেকে তাওবা না করে, তাহলে সুদ থেকে তার তাওবা করাটা সঠিক হবে এবং এর উল্টোটিও সঠিক হবে। কিন্তু যদি সে সরল সুদ থেকে তাওবা করে চক্রবৃদ্ধি সুদের উপর অটল থাকে তাহলে তখন তার তাওবা কবুল হবে না। তেমনি ভাবে কেউ গাঁজা বা চরস খাওয়া থেকে তাওবা করল কিন্তু মদপান অব্যাহত রাখল বা এর বিপরীত করলো। তেমনি ভাবে কেউ হয়তো কোন এক বিশেষ মহিলার সাথে ব্যভিচার করা থেকে তাওবা করল কিন্তু অন্য মহিলার সাথে অব্যাহত রাখলো তাহলে এদের তাওবা সঠিক হবে না। তারা এতটুকু করলো যে এক পাপ থেকে ঐ ধরনের আরেকটি পাপের সাথে জড়িয়ে পড়ল। (দেখুন মাদারেজুস সালেকীন)

[প্রশ্ন নং ৩] অতীতে আমি আল্লাহর হক নষ্ট করেছি, নামায পড়িনি, রোজা রাখিনি, জাকাত দেইনি, এখন আমি কি করবো?
উত্তর: নামায পরিত্যাগ করার ব্যাপারে প্রসিদ্ধ মত হলো, এর কাজা আদায় করতে হবে না। কেননা এর সময় পার হয়ে গেছে এবং তা ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। এর ঘাটতি পূরণ করতে হবে বেশী বেশী তাওবা, এসতেগফার পাঠ করে, বেশী বেশী নফল নামায আদায় করে, আশা করা যায় যে মহান আল্লাহ তা ক্ষমা করে দিবেন।
কিন্তু রোজা ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে কথা হলো, রোজা ভঙ্গের সময় যদি সে মুসলমান থেকে থাকে তাহলে তার প্রতি প্রত্যেক রোজার জন্য একজন করে মিসকিনকে খাবার দেয়া ওয়াজিব হবে এবং পরবর্তী রমজান আসার পূর্বেই এই কাফ্‌ফারা প্রদান করতে হবে। এর চেয়ে দেরী করতে পারবে না যদি তার কোন শরয়ী ওজর না থাকে। পূর্বে যত দিনই বাকী আছে সবগুলোরই কাজা আদায় করতে হবে যদিও এর সংখ্যা কয়েক মাস গিয়ে পৌছে।
উদাহরণ: কোন ব্যক্তি ১৪০০ হিজরীতে ৩টি রোজা ভঙ্গ করলো এবং ১৪০১ হিজরীতে ৫টি রোজা ছেড়ে দিলো এরপর সে যদি তাওবা করে, তাহলে তাকে ৮টি রোজার কাজা আদায় করতে হবে। প্রত্যেক রোজার জন্য একজন করে মিসকিনের খানা দিতে হবে।
আরেকটি উদাহরণ: এক মেয়ে ১৪০০ হিজরীতে বালেগা হলো এবং সে লজ্জা করে তার পরিবারের লোকজনকে জানালো না। সে ঐ আট দিন (বা সাতদিন মাসিকের সময়) রোজা রাখল এবং পরে এর কাজা আদায় করলো না। তাহলে তার উপর ঐ আট দিনের রোজার কাজা আদায় করা কর্তব্য হয়ে গেল। এখানে একটি বিষয় অবশ্যই অবগত থাকতে হবে যে, নামায ছাড়া ও রোজা ভঙ্গ করার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে যা আহলে ইলমরা উল্লেখ করেছেন। ওলামাদের কেউ কেউ মনে করেন যে, কেউ যদি ইচ্ছা করে রোজা ভঙ্গ করে তবুও কাজা আদায় করতে হবে না।
কিন্তু জাকাত না দেয়া থাকলে অবশ্যই জাকাত প্রদান করতে হবে। কেননা জাকাত এক দিকে আল্লাহর হক এবং অন্য দিকে গরীব মিসকিনের হক। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন মাদারেজুস সালেকীন ১/৩৮৩)
[প্রশ্ন নং ৪] যদি গুনাহ কোন ব্যক্তির হকের ব্যাপারে ঘটে থাকে তাহলে কিভাবে তাওবা হবে?
উত্তর: এ ব্যাপারে দলীল হলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ বাণী:
“مَنْ كَانَتْ عِنْدَهُ مَظْلَمَةٌ لِأَخِيهِ فَلْيَتَحَلَّلْهُ مِنْهَا؛ فَإِنَّهُ لَيْسَ ثَمَّ دِينَارٌ وَلَا دِرْهَمٌ، مِنْ قَبْلِ أَنْ يُؤْخَذَ لِأَخِيهِ مِنْ حَسَنَاتِهِ؛ فَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُ حَسَنَاتٌ أُخِذَ مِنْ سَيِّئَاتِ أَخِيهِ فَطُرِحَتْ عَلَيْهِ” (رواه البخاري: ৬৫৩৪)
“কারো উপর তার ভাইয়ের কোন প্রকার দাবি থাকলে সে যেন তাতে থেকে মুক্ত হয়ে যায়। কেননা সেখানে (কিয়ামত দিবসে বা পরকালে) কোন দীনার-দিরহাম (টাকা-পয়সা) থাকবে না। তার অন্যায়ের সমপরিমাণ নেকী তার ভাইয়ের জন্য কেটে নেয়ার আগেই। তার যদি নেকী না থাকে তাহলে তার ভাইয়ের গুনাহগুলো নেয়া হবে, অতঃপর তার উপরে চাপিয়ে দেয়া হবে।” (বুখারী: ৬৫৩৪)
সুতরাং তাওবাকারীকে এই জুলুম থেকে বের হয়ে আসতে হবে, হয় তা ফিরিয়ে দিবে অথবা তার নিকট থেকে ক্ষমা চেয়ে নিবে। যদি ক্ষমা না করে তাহলে অবশ্যই ফেরত দিতে হবে।
[প্রশ্ন নং ৫] আমি এক ব্যক্তি বা একাধিক ব্যক্তির গীবত করেছি এবং অনেককে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছি অথচ তারা নির্দোষ। এখন তাদেরকে এ বিষয়গুলো অবহিত করে কি ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে? আর যদি তাদেরকে জানানো শর্ত না হয়ে থাকে তাহলে কিভাবে তাওবা করবো?
উত্তর: বিষয়টি নির্ভর করছে এর ভাল ও মন্দ দিকটি নির্ণয় করার উপর। যদি তাদেরকে গীবত করার বিষয়টি জানালে ক্রোধান্বিত না হন বা আপনার প্রতি কোন আক্রোশের সৃষ্টি না হয় তাহলে আপনি সরাসরি বলে ক্ষমা চেয়ে নিবেন। কোন রকমের বিস্তারিত বিষয় উল্লেখ না করে। যেমন হয়তো বললেন, আমি আপনার ব্যাপারে অতীতে ভুল করেছি বা আপনাকে কথার দ্বারা কষ্ট দিয়েছি, এখন আমি আল্লাহর নিকট তাওবা করেছি সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। তাহলে কোন অসুবিধা নেই।
আর যদি তাদেরকে জানালে ক্রোধ ও আক্রোশ বেশী হবার আশংকা থাকে, এটিই সাধারণত ঘটে থাকে বা তাদেরকে সাধারণ ভাবে বললে যদি ব্যাখ্যা দাবী করে এবং তা শুনলে আপনার প্রতি তাদের ঘৃণা বৃদ্ধির আশংকা থাকে, তাহলে তাদেরকে জানানো ওয়াজিব নয়। কেননা শরীয়ত ফেতনা ফাসাদের অনুমতি দেয় না। কাউকে কোন বিষয় জানানোর ফলে সম্পর্কের অবনতি ঘটলে সেটিও শরীয়তের কাম্য নয়। তাছাড়া দ্বীনের উদ্দেশ্য হলো মুসলমানদের মাঝে পারস্পারিক সম্পর্ক ও ভালবাসা বৃদ্ধি করা। তাকে জানানোর ফলে হয়তো শত্রুতা আরো বেড়ে যেতে পারে এবং সে হয়তো আপনার প্রতি খুবই আক্রোশী হয়ে উঠতে পারে। এ অবস্থায় তাওবা করার ক্ষেত্রে আপনার জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলির প্রতি দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন:
১. অনুতপ্ত হওয়া এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করার সাথে সাথে এই অপরাধের কদর্যতা ও জঘন্যতার কথা চিন্তা করা এবং বিশ্বাস রাখা যে তা হারাম।
২. কারো গীবতের কথা শুনে বিশ্বাস করবে না এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নির্দোষ মনে করবে।
৩. যাদের গীবত করেছো তাদের ব্যাপারে বিভিন্ন মজলিসে সুনাম বর্ণনা করবে তাদের ভালো গুনাবলীর কথা উল্লেখ করবে।
৪. যাদের গীবত করেছো তাদের পক্ষ নিয়ে কথা বলবে এবং কেউ তাদের প্রতি কটাক্ষ করলে বা বদনাম করলে তা প্রতিহত করবে।
৫. তাদের জন্য গোপনে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। (মাদারেজুস সালেকীন ১/২৯১, মুগনী ব্যাখ্যা সহ ১২/৭৮)
হে মুসলমান ভাই! আপনি আর্থিক অধিকার (হক) এবং শারীরিক অপরাধের মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করুন, গীবত ও চোগলখোরীর মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করুন। আর্থিক অধিকারের কথা জানালে এর দ্বারা মালিকেরা উপকৃত হবে এবং তাদের নিকট তা ফেরত দিলে তারা খুশী হবে, এজন্য তা গোপন করা জায়েয হবে না। তবে ইজ্জত আবরুর ব্যাপারটি এ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন, কেননা তা জানালে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, বিব্রতকর অবস্থায় পড়বে।
[প্রশ্ন নং ৬] ইচ্ছাকৃত ভাবে নর হত্যাকারী ব্যক্তি কিভাবে তাওবা করবে?
উত্তর: ইচ্ছাকৃত নর হত্যাকারীর উপর তিনটি হক বর্তায়:
আল্লাহর, নিহত ব্যক্তির ও ওয়ারিসদের হক।
আল্লাহর হক একমাত্র তাওবার দ্বারা আদায় করতে হবে। ওয়ারিসদের হক হলো তাদের নিকট নিজেকে সমর্পণ করতে হবে যেন তারা তার থেকে বদলা নিতে সমর্থ হয় (যদি শরয়ী বিধান কোন দেশে জারি থাকে)। হয় কেসাস নিয়ে অথবা মুক্তিপণ নিয়ে বা ক্ষমা করে দিয়ে। এরপর বাকী থাকে নিহত ব্যক্তির অধিকার যা এ দুনিয়ায় পূরণ করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে আহলে ইলমরা বলেন, যদি হত্যাকারীর তাওবা উত্তম হয়, তাহলে আল্লাহ তার উপর নিহত ব্যক্তির হক উঠিয়ে নিবেন এবং কিয়ামতের দিন নিজের তরফ থেকে নিহত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে দিবেন। আর এ অভিমতটিই সর্বোত্তম অভিমত। (মাদারেজুস সালেকীন ১/২৯৯)
[প্রশ্ন নং ৭] চোর কিভাবে তাওবা করবে?
উত্তর: যদি চুরি করা জিনিস তার কাছে থাকে তাহলে ফেরত দিবে। আর যদি নষ্ট হয়ে থাকে তাহলে তা ব্যবহার করার জন্য বা সময়ের কারণে মূল্যমান কমে গিয়ে থাকে তাহলে তার ক্ষতিপূরণ দেয়া ওয়াজিব, মালিক যদি না তাকে ক্ষমা করে দিয়ে থাকে। আর মালিক যদি ক্ষমা করে দেয় তাহলে কিছুই লাগবে না। সুতরাং আল্লাহর জন্যই সমস্ত প্রশংসা।
[প্রশ্ন নং ৮] আমি খুবই বিব্রতবোধ করি যখন মুখোমুখি হই যাদের কিছু চুরি করেছি, আমি তাদেরকে প্রকাশ্য ভাবে বলতেও পারি না এবং ক্ষমাও চাইতে পারি না, এখন আমি কি করবো?
উত্তর: আপনার জন্য এমন কোন পন্থা অন্বেষণ করতে অসুবিধে নেই যার দ্বারা আপনি এই বিব্রতকর অবস্থা থেকে বাঁচতে পারেন, যেমন হয়তো অন্য কোন লোকের মাধ্যমে তাদের কাছে তাদের প্রাপ্য ফেরত পাঠালেন এবং নাম উল্লেখ করতে নিষেধ করলেন অথবা কৌশল অবলম্বন করলেন এবং বললেন, আপনার এসব হক এক ব্যক্তির নিকট ছিল কিন্তু সে তার নাম উল্লেখ করতে চায়নি। মূল কথা হচ্ছে প্রাপকের নিকট তার অধিকার ফেরত দিতে হবে।
[প্রশ্ন নং ৯] আমি আমার আব্বার এবং নিকটাত্মীয়ের পকেট থেকে গোপনে টাকা পয়সা সরিয়ে নিতাম। আমি এখন তাওবা করতে চাই। আমি সঠিক ভাবে বলতে পারবো না যে, মোট কত টাকা নিয়েছি। আমি এদের সামনে যেতে খুবই বিব্রতবোধ করছি?
উত্তর: আপনি মোটামুটি একটা অনুমান করে নিবেন এবং ধারণা করবেন যে কত হতে পারে। আর আপনি যেমন গোপনে নিয়েছেন তেমনি গোপনে ফেরত দিলে কোন অসুবিধা নেই।
[প্রশ্ন নং ১০] আমি বিভিন্ন লোকের টাকা পয়সা চুরি করেছি, এখন আমি আল্লাহর কাছে তাওবা করেছি। যাদের টাকা পয়সা চুরি করেছি তাদের ঠিকানাও জানি না?
অন্য আরেকজন বলে, আমি এক বিদেশী কোম্পানীর কিছু টাকা পয়সা মেরে দিয়েছি। তাদের কাজকর্ম শেষ হয়ে গেছে এবং তারা দেশ ছেড়ে চলে গেছে?
তৃতীয় আরেকজন বলে, আমি এক দোকান থেকে কিছু মালপত্র চুরি করেছিলাম। বর্তমানে সে দোকানের স্থান পরিবর্তন হয়ে অন্যত্র চলে গেছে। নতুন ঠিকানাও জানি না!
উত্তর: আপনি যথা সম্ভব তাদের ঠিকানা তালাশ করুন। যদি পেয়ে যান তাহলে তাদের প্রাপ্য ফেরত দিবেন। (আলহামদু লিল্লাহ) যদি মালিক মারা গিয়ে থাকে তাহলে তার ওয়ারিসদেরকে ফেরত দিবেন। চেষ্টা করেও যদি তাদেরকে না পান, তাহলে এসব মাল আপনি তাদের নিয়তে দান করে দিবেন। তাদের জন্যই নিয়ত করবেন, যদিও কেউ কাফের হয়ে থাকে। কেননা আল্লাহ তাদেরকে এ দুনিয়ায় তার প্রতিদান দিবেন পরকালে তারা (কাফেরেরা) কিছুই পাবে না।
এই মাসআলাটির মত একটি মাসআলা ইবনুল কাইয়্যেম (রহেমাহুল্লাহ্‌) তাঁর মাদারেজুস সালেকীন নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। মুসলিম বাহিনীর এক সৈনিক গনীমাতের মাল চুরি করে। এর কিছুকাল পরে সে তাওবা করে। অতঃপর সে চুরি করা মালামাল নিয়ে সেনাপতির কাছে হাজির হয়। সেনাপতি তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করে বলেন, আমি কিভাবে সকল সৈন্যদের নিকট এসব পৌছাবো? (তারা তো বিভক্ত হয়ে গেছে)। এরপর সে সৈনিক হাজ্জাজ বিন শায়েরের নিকট এসে এ ব্যাপারে ফতওয়া চায়।
তিনি বলেন, হে লোক ! নিশ্চয়ই আল্লাহ সেনাবাহিনীর সকলকে জানেন, তাদের নামধামও অবগত এবং বংশ পরিচয়ও জানেন। সুতরাং তুমি পঞ্চমাংশ তার প্রাপককে দিয়ে দিবে এবং বাকী ওদের পক্ষ থেকে দান করে দাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা তাদের আমলনামায় নেকী পৌছে দিবেন। সে তখন সেভাবেই আমল করে বিষয়টি খলিফা মুয়াবিয়াকে জানায়। তখন তিনি বলেন, আমি যদি তোমাকে এভাবে ফাতওয়া দিতে পারতাম তাহলে তা আমার অর্ধেক সম্পদের চেয়েও আমার কাছে বেশী পছন্দনীয় হতো। ইমাম ইবনে তাইমিয়ার (রহেমাহুল্লাহ্‌) এ ধরনেরই একটি ফাতওয়া রয়েছে যা মাদারেজুস সালেকীনেও উল্লেখ করা হয়েছে।

[প্রশ্ন নং ১১] আমি ইয়াতীমের মাল আত্মসাত করি এবং তা দ্বারা ব্যবসা করে অনেক লাভবান হই। এখন আমি আল্লাহকে ভয় করছি, এ কাজের জন্য অনুতপ্ত, এখন কিভাবে তাওবা করবো?
উত্তর: এ ব্যাপারে আলেম-ওলামারা বিভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন, এর মধ্যে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য অভিমত হলো, আপনি মূল সম্পদ ইয়াতীমের নিকট ফেরত দিবেন এ ছাড়াও লাভের অর্ধেক দিয়ে দিবেন। তাহলে ইয়াতীমকে তার মূলধন ফেরত দেয়া হলো এবং পার্টনার হিসাবে অর্ধেক লাভও দেয়া হলো। তাহলে মূল ও লাভ সবই দেয়া গেল। এ বিষয়টি ইমাম আহমাদ (রাহেমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রাহেমাহুল্লাহ্‌) হতেও এ অভিমত বর্ণিত হয়েছে এবং তার বিশিষ্ট সাগরেদ ইবনুল কাইয়্যেম এ মতটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। (মাদারেজুস সালেকীন ১/৩৯২)
তেমনিভাবে যদি কেউ উটনী অথবা ছাগল ছিনিয়ে নিয়ে নেয় এবং তা থেকে বাচ্চা-কাচ্চা হয়, তাহলে সেটি ও তার অর্ধেক বাচ্চা প্রকৃত মালিককে ফেরত দিতে হবে। যদি তা মারা যায় তাহলে সেটির মূল্য এবং এর জন্মান বাচ্চার অর্ধেক মালিককে ফেরত দিতে হবে।
[প্রশ্ন নং ১২] এক ব্যক্তি বিমান বন্দরে চাকুরী করত। তার নিকট বিভিন্ন জনের মালপত্র আসতো। এসব থেকে সে নামধাম সহ কিছু জিনিসপত্র চুরি করে নেয়। এর বেশ কয়েক বছর পর সে তাওবা করে। এখন কি সেই জিনিস ফেরত দিবে, না তার মূল্য, না কি এ ধরণের কিছু ফেরত দিবে? এখানে উল্লেখ্য যে, চুরি করা মাল বর্তমান বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না।
উত্তর: সেই জিনিসই ফেরত দিবে এর সাথে যোগ করবে মূল্যমান যা ব্যবহার করার জন্য বা সময়ের ব্যবধানে কমেছে। এটার একটা মোটামুটি মূল্য ধরে নিবে যেন নিজের খুব বেশী কষ্ট না হয়। যদি তাকে পাওয়া কষ্টকর হয়ে থাকে তাহলে সে পরিমাণ টাকা পয়সা দান করে দিবে মূল মালিকের পক্ষ থেকে।
[প্রশ্ন নং ১৩] আমার কাছে কিছু সুদের মাল ছিল কিন্তু আমি তা সব খরচ করে ফেলেছি, বর্তমানে কিছুই অবশিষ্ট নেই, এখন তাওবা করছি, এক্ষেত্রে আমার করণীয় কি?
উত্তর: আপনাকে খালেস তাওবা করতে হবে। প্রকৃত পক্ষে সুদ হলো খুবই বিপজ্জনক জিনিস। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা’আলা একমাত্র সুদখোরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন। আর যেহেতু সুদী মালামাল সব শেষ হয়ে গেছে তাই এ ব্যাপারে অপর কোন কর্তব্যও আর অবশিষ্ট নেই।

[প্রশ্ন নং ১৪] আমি একটি গাড়ী কিনেছি এর মধ্যে কিছু আছে হালাল উপার্জন আর কিছু হারাম। গাড়ীটি বর্তমানে আমার কাছে রয়েছে।
উত্তর: যে ব্যক্তি এমন জিনিস কিনল যা বিভক্ত করা সম্ভব নয় যেমন ঘর অথবা গাড়ী, এমন টাকা দিয়ে যার কিছু হালাল এবং কিছু হারাম, তাহলে হারামের সমপরিমাণ মাল সাদকা করে দিবে ঐ মালকে পবিত্র করার জন্য। যদি এই অংশটি হারাম মালেরই হয়ে থাকে তাহলে তা অন্যের অংশই বটে যা তার প্রাপকের নিকট ফিরিয়ে দিতে হবে পূর্বোক্ত বর্ণনা মোতাবেক।
[প্রশ্ন নং ১৫] সেই মালের দ্বারা কি করবে যা ধুমপানের সামগ্রীর ব্যবসা থেকে লাভ হয়েছে, তেমনিভাবে যা তার অন্যান্য হালাল মালের সাথে সংমিশ্রণ ঘটে গেছে?
উত্তর: যে ব্যক্তি হারাম জিনিসের ব্যবসা করে যেমন বাদ্যযন্ত্র, হারাম ক্যাসেটের ব্যবসা, ধুমপানের সামগ্রী ইত্যাদি এবং এর হুকুমও জানে। অতঃপর তাওবা করে, তাহলে এই হারাম ব্যবসার লভ্যাংশ দান হিসেবে নয় বরং তা থেকে নিষ্কৃতি পাবার লক্ষ্যে বিলিয়ে দিবে। কেননা আল্লাহ তা’আলা পবিত্র, তিনি পূত-পবিত্র জিনিস ছাড়া গ্রহণ করেন না।
যদি এই হারাম মাল অন্যান্য হালাল মালের সাথে মিলে যায় যেমন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর যাতে বিভিন্ন হালাল সওদার সাথে কিছু নাজায়েয জিনিসও বিক্রি করা হয়ে থাকে তাহলে সে এই মালের একটা যথাসম্ভব অনুমান করে মূল্য বের করে দিবে বাকী মালকে পবিত্র করার জন্য। আল্লাহ তাকে এর পরিবর্তে আরো ভালো কিছুর ব্যবস্থা করে দিবেন। তিনি হচ্ছেন প্রশংসার অধিকারী, সম্মানিত।
এখানে একটা বিষয় জেনে রাখা প্রয়োজন যে, যার নিকট হারাম উপার্জনের মাল রয়েছে এবং সে তাওবা করতে চায় তাহলে:
১. উপার্জন করার সময় যদি সে কাফের হয়ে থাকে তাহলে তাওবা করার সময় সেগুলো বের করার প্রয়োজন পড়বে না। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সাহাবাদের ইসলাম গ্রহণ করার সময় হারাম মাল বের করার জন্য বাধ্য করেননি।
২. কিন্তু যদি উপার্জন করার সময় যে ব্যক্তি মুসলমান থাকে এবং সেটি হারাম হওয়ার ব্যাপারটি অবগত থাকে তাহলে অবশ্যই তাওবা করার সময় হারাম মাল বের করে দিতে হবে।
[প্রশ্ন নং ১৬] এক ব্যক্তি ঘুষ নিত। অতঃপর আল্লাহ তাকে হেদায়েত দান করেন। সে এখন সঠিক পথে রয়েছে। সে যেসব ঘুষ নিয়েছে তার কি করবে?
উত্তর: এ ব্যক্তির অবস্থা এ দু’অবস্থার বাইরে নয়:
এক. হয়তো এমন এক ব্যক্তির নিকট থেকে ঘুষ নিয়েছে যিনি বাধ্য হয়ে নিজের হক রক্ষার স্বার্থে একে ঘুষ দিয়েছেন, এক্ষেত্রে ঘুষ গ্রহীতাকে অবশ্যই টাকা ফেরত দিতে হবে যার কাছ থেকে সে ঘুষ নিয়েছে। কেননা সে তাকে বাধ্য করে এ ঘুষ নিয়েছে, এর বিধান হলো জোর করে অর্থ আত্মসাতের হুকুম -এর মত, বেচারা নিরুপায় হয়ে তাকে ঘুষ দিয়েছেন।
দুই. ঘুষ গ্রহণ করেছে এক জালেমের কাছ থেকে, যেমন হয়তো কেউ ঘুষ দিয়ে অবৈধ স্বার্থ উদ্ধার করিয়ে নিয়েছে, এক্ষেত্রে তাকে কিছুই ফেরত দেয়া লাগবে না। তাওবাকারী এসব মালকে কল্যাণ মূলক কাজে খরচ করবে। যেমন হয়তো কোন ফকীর-মিসকীনকে দিয়ে দিলো। তেমনিভাবে সে আল্লাহর কাছে তাওবা ও ক্ষমা চাইতে থাকবে, কেননা সে অন্যায়ভাবে কাউকে কিছু অর্জন করার সুযোগ দিয়েছে।
[প্রশ্ন নং ১৭] আমি অবৈধ কাজ করে এর বিনিময়ে কিছু টাকা পয়সা গ্রহণ করি, বর্তমানে আমি তাওবা করেছি, এখন কি আমাকে এসব মাল ফেরত দিতে হবে?
উত্তর: যে ব্যক্তি হারাম কাজ করে বা হারাম খিদমত আঞ্জাম দেয় এবং এর বিনিময়ে পয়সা নেয়, যখন সে তাওবা করে আর তার কাছে যদি এসব টাকা পয়সা অবশিষ্ট থাকে তাহলে সে এসব থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। তবে তা যার কাছ থেকে নিয়েছে তাকে ফেরত দিতে হবে না। যেমন জেনাকারিনী জেনার জন্য টাকা পয়সা নিয়েছে সে তা জেনাকারীর নিকট ফেরত দিবে না। গায়ক হারাম গান গেয়ে টাকা নিয়েছে, এ টাকা অনুষ্ঠানের আয়োজকদের নিকট ফেরত দিবে না। মদ বিক্রেতা বা মাদক দ্রব্য বিক্রেতা তাওবা করলে এসব যারা কিনেছিল তাদের নিকট ফেরত দিবে না। তেমনি মিথ্যা সাক্ষ্য দাতা তাওবা করলে যারা তাকে টাকার বিনিময়ে সাক্ষ্য দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল তাদের নিকট ফেরত দিবেনা। কারণ হলো পাপীর কাছে এসব মাল ফেরত দিলে সে হারামের বিনিময়ে হারাম জমা করল আবার এ টাকা পয়সা আরো হারাম কাজে ব্যবহৃত হওয়ার আশংকা বাড়িয়ে দেয়। এজন্য এসব থেকে মুক্ত হওয়া প্রয়োজন। এ অভিমতটিই ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রাহেমাহুল্লাহ্‌) গ্রহণ করেছেন এবং তাঁর ছাত্র ইবনুল কাইয়্যেমও এটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। (মাদারেজুস সালেকীন ১/৩৯০)
[প্রশ্ন নং ১৮] আমাকে একটি বিষয় খুবই উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত করছে, তাহলো আমি এক মহিলার সাথে ব্যভিচার করি। এখন কিভাবে তাওবা করবো?
অন্য একজন প্রশ্ন করে, আমি বিদেশে গিয়ে কুকর্মে লিপ্ত হই। আমার দ্বারা মহিলাটি গর্ভবতী হয়ে পড়ে। এখন কি সন্তানটি আমার হবে এবং তাকে কি আমি সন্তানের জন্য খরচা-পাতি পাঠাবো?
উত্তর: অশ্লীল কাজ সংক্রান্ত অনেক প্রশ্নমালা আসছে যার জন্য মুসলমানদের উপর জরুরী হয়ে পড়েছে বিষয়টির উপর গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করার এবং কুরআন হাদীস মোতাবেক নিজেদের সংশোধন করার এবং বিশেষ করে দৃষ্টি সংযত করার, নির্জন সাক্ষাৎ না করার এবং বেগানা মহিলাদের সাথে মুসাফাহা না করার আর পরিপূর্ণ শরয়ী পর্দা রক্ষা করে চলার। মেলামেশার বিপজ্জনকতা উপলব্ধি করা এবং কাফেরদের দেশে ভ্রমণে না যাওয়া। মুসলিম পারিবারিক ঐতিহ্য রক্ষা করে চলা, অল্প বয়সেই বিয়ে করা এবং এ ব্যাপারটি কঠোর না করে ফেলা।
যে ব্যক্তি কুকর্ম করেছে সেটি এ দু’অবস্থার বাইরে নয়:
১. হয়তো সে জোরপূর্বক জেনা করেছে এক্ষেত্রে তাকে মহরে মিস্‌ল্‌ প্রদান করতে হবে, তার যে ক্ষতি সাধন করেছে তা পূরণ করার লক্ষ্যে। সেই সাথে তাকে খালেস তাওবা করতে হবে এবং বিষয়টি যদি হাকেম বা বিচারক পর্যন্ত (ইসলামী বিচারক) গড়ায় তাহলে তার উপর হদ (শরয়ী শাস্তি বিধান) কায়েম করতে হবে। (বিস্তারিত দেখুন মাদারেজুস সালেকীন ১/৩৬৬)
২. উক্ত মহিলার সম্মতিতেই তার সাথে ব্যভিচার করেছে। এক্ষেত্রে তাকে শুধুমাত্র তাওবা করতে হবে। তার সাথে কখনো সন্তানকে সম্পৃক্ত করা হবে না এবং তাকে খরচও দিতে হবে না। কেননা সন্তান পরিচিত হবে মায়ের সাথে, কোনভাবেই জেনাকারীর সাথে সন্তান সম্পৃক্ত বা পরিচিত হবে না।
[প্রশ্ন নং ১৯] আমার দ্বারা কুকর্ম সম্পাদিত হয়েছে। এজন্য আমি আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি সে মেয়ের সাথে বিবাহ বন্ধনেও আবদ্ধ হয়েছি। এটা বেশ কয়েক বছর পূর্বের ঘটনা। আমরা উভয়ে খালেস তাওবা করেছি। এখন আমাদের কর্তব্য কি?
উত্তর: যখন দু’জনের পক্ষ থেকেই তাওবা হয়েছে এজন্য আপনাদের উভয়কে বিবাহ বন্ধনটা নতুন করে নিতে হবে শরিয়তের শর্ত মোতাবেক ওলী, সাক্ষীর উপস্থিতিতে (যদি এর আগে শরীয়তের শর্ত মোতাবেক বিবাহ না হয়ে থাকে তবেই)। এজন্য জরুরী নয় যে, কোর্টে গিয়ে হাজির হতে হবে বরং বাসার মধ্যে হলেই যথেষ্ট হবে।
[প্রশ্ন নং ২০] একজন মহিলা বলে, সে এক নেককার লোকের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। সে বিবাহের পূর্বে এমন কিছু কাজ করেছে যা আল্লাহ পছন্দ করেন না। এখন তার মনে বিষয়টি সর্বদা পীড়া দিচ্ছে। এখন তার প্রশ্ন, সে কি তার স্বামীকে পূর্বে যা কিছু ঘটেছে তা জানাবে?
উত্তর: স্বামী স্ত্রীর উভয়েরই কেউ অপরকে জানান ওয়াজিব নয় যে, অতীতে সে কি করেছে। কেউ যদি এসব পঙ্কিলতার দ্বারা পরীক্ষিত হয়ে থাকে তাহলে সে যেন তা আল্লাহর ওয়াস্তে গোপন করে। তার জন্য খালেস তাওবাই যথেষ্ট।
তবে কেউ যদি কুমারী মেয়েকে বিবাহ করে অতঃপর প্রকাশিত হয় যে, মেয়েটি প্রকৃত কুমারী নয়, অতীতে অপকর্ম করার কারণে, তাহলে সে যে মোহর দিয়েছে তা ফেরত নিয়ে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে। আর যদি সে দেখে যে, সে তাওবা করেছে যার ফলে আল্লাহ তার দোষ গোপন রেখেছেন তাহলে যদি তাকে দাম্পত্যে রেখে দেয় তাহলে অবশ্যই মহান আল্লাহ কর্তৃক নেকী ও সোয়াবের ভাগী হবে।
[প্রশ্ন নং ২১ ] পুংমৈথুনকারী ব্যক্তি তাওবা করলে তার উপর কি ওয়াজিব হবে?
উত্তর: এ কাজ যে করেছে এবং যার সাথে করা হয়েছে উভয়কেই খুব বড় আকারের তাওবা করতে হবে। কেননা এটা জানা যায় যে, পরাক্রমশালী আল্লাহ লুত সম্প্রদায়ের উপর তাদের অপরাধের জঘন্যতার কারণে যত রকমের আযাব নাজিল করেছিলেন তা আর অন্য কোন জাতির উপর নাজিল করেননি।
১. তাদের দৃষ্টি শক্তি কেড়ে নিয়েছিলেন যার ফলে তারা অন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং তারা উদভ্রান্তের মত ছুটাছুটি করছিল। আল্লাহ বলেন:
“তাদের দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেই”। (আল-ক্বামার: ৩৭)
২. তাদের উপর বজ্রপাত হয়েছিল।
৩. তাদের বাড়ী-ঘরকে উল্টিয়ে দিয়েছিলেন যার ফলে উপর দিক নিচে আর নিচের দিক উপরে হয়ে গিয়েছিল।
৪. তাদের উপর পোড়ান পাথর নিক্ষেপ করা হয়েছিল। যার ফলে তারা সেখানেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। এজন্যই এই অপকর্মকারীর উপর যে হদ কায়েম করা হয় তা হলো, বিবাহিত হোক বা অবিবাহিত, তাকে হত্যা করা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমরা যদি কেউ কাউকে লুত সম্প্রদায়ের কাজে লিপ্ত পাও তাহলে কর্তা ও যার সাথে এ কুকর্ম করা হয়েছে উভয়কে হত্যা কর।” (আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজা, ইমাম আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, ইরওয়াউল গালীল ২৩৫০)
[প্রশ্ন নং ২২] আমি আল্লাহর নিকট তাওবা করেছি। আমার নিকট হারাম জিনিসপত্র রয়েছে যেমন: বাদ্যযন্ত্র, ক্যাসেট, ফ্লিম ইত্যাদি। এসব জিনিস বিক্রি করা কি জায়েয হবে। বিশেষ করে এজন্য যে, এর মূল্য কিন্তু অনেক হবে?
উত্তর: হারাম জিনিস বিক্রি করা হারাম এবং এর মূল্যও হারাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “নিশ্চয় আল্লাহ কোন কিছু হারাম করলে তার মূল্যও হারাম করেছেন।” (আবু দাউদ, হাদীসটি সহীহ)
আর আপনি জানেন যে, অন্যরা তা হারাম কাজেই ব্যবহার করবে, এজন্য তা বিক্রি করা জায়েয হবে না। কেননা আল্লাহ এ ব্যাপারে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন:
“এবং তোমরা গুনাহ ও অন্যায় কাজে একে অপরকে সহযোগিতা করো না।” আপনি দুনিয়াতে যতই ক্ষতিগ্রস্ত হননা কেন। আল্লাহর নিকট যা রয়েছে তা উত্তম ও দীর্ঘস্থায়ী। তিনি আপনাকে তাঁর দয়া ও করুণা দ্বারা উত্তম প্রতিফল দিবেন।
[প্রশ্ন নং ২৩] আমি একজন পথভ্রষ্ট মানুষ ছিলাম। ধর্ম নিরপেক্ষ মতবাদ ছড়াতাম এবং বিভিন্ন গল্প লিখার মাধ্যমে ইসলামের বিরুদ্ধে বিষাক্ত বাণী প্রচার করতাম। কবিতার মাধ্যমে অশ্লীলতা ছড়াতাম। মহান আল্লাহ আমাকে তার বিশেষ রহমতে রক্ষা করেছেন, অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে এসেছেন এবং হেদায়াত দান করেছেন, এখন কিভাবে তাওবা করবো?
উত্তর: এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনার উপর বিরাট অনুগ্রহ ও নিয়ামত। এটিই প্রকৃতপক্ষে হেদায়েত। সুতরাং এজন্য আমি আল্লাহর প্রশংসা করছি এবং তার নিকট দু’আ করছি তিনি যেন আপনাকে মজবুত রাখেন এবং আরো বেশী অনুগ্রহ দান করেন। যে ব্যক্তি তার কথা ও কলমের দ্বারা ইসলামের বিরুদ্ধে ভ্রান্ত ধারণা বা বিদআত ও অশ্লীলতা ছড়ায় তাকে অবশ্যই একাজগুলো করতে হবে:
প্রথমত: সে যেন এসব থেকে তাওবা করে এবং ঘোষণা করে যে, সে এসব থেকে ফিরে এসেছে। যথাসম্ভব সব রকমের মাধ্যম ব্যবহার করে এ বিষয়টি ফুটিয়ে তুলে যে, এসব ভ্রান্ত ও বাতিল বিষয় ছিল তাহলে যারা তার কথায় বিভ্রান্ত হয়েছিল তারা সঠিক পথে ফিরে আসবে। এবং যেসব সন্দেহ ও ধুম্রজাল ছড়িয়েছিল তা পরিষ্কার করে দিবে এবং তা থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। এই ভাবে পরিষ্কার করে দেয়াটা ওয়াজিব, তাওবার ওয়াজিবের অন্তর্গত। মহান আল্লাহ বলেন:
“কিন্তু যারা তাওবা করেছে, নিজেদের সংশোধন করেছে এবং বর্ণনা করেছে তারা হলো সেই লোক যাদের তাওবা আমি কবুল করবো এবং আমিই একমাত্র তাওবা কবুলকারী, দয়ালু।” (সূরা আল বাকারা: ১৬০)
দ্বিতীয়ত: সে যেন তার কলম ও জবানকে ইসলাম প্রচারের কাজে নিয়োজিত করে এবং তার শক্তিকে ও সামর্থকে ইসলামকে বিজয়ী করার কাজে নিয়োজিত করে, আর মানুষের নিকট হক শিক্ষা এবং এর দাওয়াত পৌছায়।
তৃতীয়ত: এই শক্তিকে যেন ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে এবং তাদের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত তুলে ধরে, যেমন ভাবে এর পূর্বে তাদেরকে সাহায্য করত এবং ইসলামের শত্রুদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করত। সে যেন ইসলামের হকের অস্ত্র হয়ে যায় বাতিলের বিরুদ্ধে। এভাবে বিভিন্ন হারাম কাজের কদর্যতা বর্ণনা করে ইসলামের পথে মানুষকে আহ্বান করে। যেমন হয়তো একদিন সুদের পক্ষে কথা বলেছে, এখন সুদের বিরুদ্ধে কলম ধরবে, এর অপকারিতা ও ভয়াবহতা তুলে ধরে পূর্বের পাপের কাফ্‌ফারা আদায় করবে। মহান আল্লাহই প্রকৃত হেদায়েত দাতা।
উপসংহার
হে আল্লাহর বান্দা! আল্লাহ তা’আলা তাওবার দরজা উন্মুক্ত করেছেন সুতরাং কতই না ভাল হতো যদি আপনি এতে প্রবেশ করতেন। “নিশ্চয় তাওবার দরজা রয়েছে যার প্রশস্ততা হলো পূর্ব ও পশ্চিমের দূরত্বের সমান।”
অপর বর্ণনায় এসেছে “এর প্রশস্ততা হলো সত্তর বছরের সমান। পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত না হওয়া পর্যন্ত তা বন্ধ করা হবে না।” (তাবারানী, সহীহ আল-জামে ২১৭৭)
হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তা’আলা আহ্বান করে বলেন:
((يَا عِبَادِي إِنَّكُمْ تُخْطِئُونَ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَأَنَا أَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا فَاسْتَغْفِرُونِي أَغْفِرْ لَكُمْ )) (رواه مسلم)
“হে আমার বান্দারা! তোমরা দিনে রাতে পাপ করো এবং আমি সব পাপ ক্ষমা করে থাকি। সুতরাং তোমরা আমার নিকট ক্ষমা চাও, আমি তোমাদের মাফ করে দিবো।” (মুসলিম)
যদি আপনি ক্ষমা চাইতেন তাহলে কতই না ভাল হতো। মহান আল্লাহ তাঁর হস্ত প্রসারিত করেন রাতের বেলায় যেন তিনি দিনের বেলায় পাপকারীকে ক্ষমা করে দেন এবং দিনের বেলায় তার হাতকে প্রসারিত করেন যেন রাতের বেলায় পাপকারীকে ক্ষমা করে দেন। আর আল্লাহ অপারগতা পছন্দ করেন না। সুতরাং আপনি যদি এই সুযোগ গ্রহণ করতেন তাহলে কতই না ভাল হতো।
তাওবার মর্যাদা
আল্লাহ খুব খুশী হন যখন তাঁর কোন বান্দা তাওবা করে (তার দিকে প্রত্যাবর্তন করে)। আল্লাহ খুশী হলে আর কোন কল্যাণের ঘাটতি হবে না। “নিশ্চয় আল্লাহ খুব খুশী হন যখন কোন বান্দা তাঁর দিকে তাওবা (প্রত্যাবর্তন) করে। সেই ব্যক্তির চেয়েও বেশী খুশী হন যে এক মরুভূমিতে সফর করছিল। সে এক স্থানে বিশ্রামের জন্য একটু নামে। ওর সওয়ারীর উপর তার খানাপিনা ছিল। সে গাছের একটু ছায়ায় ঘুমিয়ে পড়ে। যখন জেগে উঠে দেখে যে, তার বাহনটি কোথায় চলে গেছে। সে এর খোজ করতে থাকে। এক উচু টিলাতে উঠেও দেখতে পায় না। এরপর আরেক টিলার উপর উঠে কিন্তু সেখান থেকেও তা দেখতে পায়না। এরপর যখন প্রচন্ড তাপ ও পিপাসায় কাতর হয়ে পড়ে, তখন বলে, আমি যেখানে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম সেখানে গিয়ে শুয়ে থাকবো মরণ না আসা পর্যন্ত। অতঃপর গাছের ছায়ায় এসে শুয়ে পড়ে এবং বাহনের ব্যাপারে নিরাশ হয়ে যায়। এ অবস্থায় একবার সে মাথা উঠিয়ে দেখে যে, তার শিয়রে সেটি দাঁড়িয়ে আছে তার লাগাম মাটিতে ছেচড়াচ্ছে, যার উপর তার খানাপিনা ছিল। সে তখন দ্রুত গিয়ে তার লাগাম ধরে এবং প্রচন্ডভাবে খুশি হয়। কেউ তাওবা করলে মহান আল্লাহ এই লোকটির খুশীর চেয়েও বেশী খুশী হন। (এ ঘটনাটি বিভিন্ন বর্ণনায় বর্ণিত হয়েছে, দেখুন তারতীবু সাহিহুল জামে’ ৪/৩৬৮)
প্রিয় ভাই! সঠিক তাওবাকারীর জন্য পাপ শেষ পর্যন্ত আল্লাহর নিকট নম্রতা ও বিনয়ী ভাব সৃষ্টি করে। তার মাঝে অনুশোচনার জন্ম দেয় এবং তাওবাকারীর চাপা কান্না বিশ্বজগতের প্রতিপালকের নিকট খুবই পছন্দনীয় বস্তু। কোন মুমিন বান্দা যদি তার গুনাহকে সদাসর্বদা চোখে চোখে রাখে, তাহলে তার মধ্যে অনুশোচনা ও অনুতপ্ত ভাব সৃষ্টি হবে, যার ফলে সে বেশী বেশী আনুগত্য ও নেকীর কাজ করতে থাকবে। অবস্থা এমন হয় যে, শয়তান হয়তো বলে বসে, যদি আমি একে পাপে না ফেলতাম তাহলেই ভাল ছিল। এজন্য দেখা যায় যে, কিছু তাওবাকারীর অবস্থা তাওবা করার পর খুবই ভাল হয়ে যায়।
মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাকে কখনো ছেড়ে দেন না, যে তার দিকে তাওবা করে এগিয়ে আসে। দেখুন, যদি কোন সন্তান তার পিতার তত্বাবধানে থাকে তাকে সর্বোত্তম খানাপিনা খাওয়ায়, ভাল শিক্ষা-দীক্ষা দান করতে থাকে। তাকে চলার জন্য খরচা-পাতিও দেয় এবং তার সব কিছু দেখাশুনা ও দায়-দায়িত্ব পালন করে। একদিন তার পিতা তাকে এক কাজে পাঠালো সে কাজে গেলে পথে তাকে তার দুশমনেরা পাকড়াও করে বন্দী করে ফেললো। তাকে শৃংখলাবদ্ধ করে হাত পা বেঁধে ফেললো। এরপর তাকে শত্রুর দেশে নিয়ে গেল এবং তার সাথে তার পিতা যে আচরণ করছিল তার উল্টোটি শুরু করল।
সুতরাং সে যত বারই তার পিতার কথা ও তার শিক্ষা-দীক্ষার এবং আচরণের কথা মনে করবে, তত বারই তার মনে ব্যথা ও দুঃখ মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে এবং সে চিন্তা করবে যে, সে কত নিয়ামতের মধ্যে ছিল।
সে যখন শত্রুর হাতে বন্দী, প্রতিনিয়ত (সর্বদা) শাস্তির সম্মুখীন এবং শেষ পর্যন্ত তাকে হত্যাই করে ফেলবে এ অবস্থায় দেখতে পেল যে, সে তার বাড়ীর নিকটে এবং তার আব্বাও তার খুবই নিকটে। সে দৌড়ে গিয়ে তার সামনে লুটিয়ে পড়লো এবং তার পায়ে পড়ে সাহায্য চাইল, আর চিৎকার করে বলতে লাগলো, আব্বা … আব্বা … আব্বা … আমাকে বাঁচান! দেখুন; তার আব্বার গালবেয়ে পানি ঝরছে। সে তার আব্বাকে জড়িয়ে ধরেছে আর তার আব্বাও তাকে জড়িয়ে ধরছে।
আপনি বলবেন কী তার আব্বা তাকে এই অবস্থায় শত্রুর হাতে ছেড়ে দেবে? তাকে উদ্ধারের কোন চেষ্টাই করবে না? তাহলে সেই সত্বার ব্যাপারে আপনার ধারণা কি?
যিনি এই পিতার সন্তানের উপর দয়ার চেয়েও দয়াবান, মাতার সন্তানের উপর মহব্বতের চেয়েও বেশী মহব্বত রাখেন, যে বান্দা শত্রুর কাছ থেকে পালিয়ে তার নিকটে আশ্রয় নিয়েছে এবং তার কাছে নিজেকে অর্পণ করেছে, তার সামনে মাথা নত করেছে, ধূলায় কপালকে লুটিয়েছে, চোখ দিয়ে পানি বের করে তার সামনে দাঁড়িয়ে বলছে, হে প্রভূ! হে দয়াবান! যার জন্য তোমার দয়া ছাড়া আর কোন দয়া নেই, যার তুমি ছাড়া আর কেউ সাহায্যকারী নেই, তুমি ছাড়া আর কেউ নেই, সে তোমারই … তোমারই কাঙ্গাল, তোমারই কাছে ভিক্ষা চাচ্ছে। তুমি ছাড়া তার আর কোন আশ্রয়দাতা, বিপদ থেকে উদ্ধারকারী এবং ত্রাণকর্তা নেই।
সুতরাং, ভাল কাজ করার জন্য দ্রুত ছুটে আসুন, নেকী কামাই করুন এবং নেককার লোকদের সঙ্গী হোন, সুপথ পাবার পর ভ্রান্তপথ থেকে সতর্ক হোন, হেদায়াত প্রাপ্তির পর গোমরাহী থেকে দূরে থাকুন। নিশ্চয় আল্লাহর তাওফীক আপনার সাথেই রয়েছে। আপনার এবং আমাদের সকলের ওপর আল্লাহর শান্তি, রহমত ও বরকত নাজিল হোক। আমীন
সমাপ্ত
([১]) এই পুস্তিকাটি মূলত একটি বক্তৃতা যা লেখক ২৭ রবিউল আওয়াল ১৪০৯ হিজরীতে দিয়েছিলেন।
লেখক : মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-মুনাজ্জিদ
অনুবাদ : মুহাম্মদ শামাউন আলী
সম্পাদনা : জয়নুল আবেদীন আব্দুল্লাহ – সরদার জিয়াউল হক বিন সরদার আবদুস সালাম
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব

Leave a comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.